ঢাকা: শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, বহু শিক্ষক বদলির জন্য ক্ষমতাবান লোকদের দিয়ে সুপারিশ করে দরখাস্ত লিখিয়ে নিয়ে আসেন, এটা অন্যায়।
শিক্ষকরা এভাবে দরখাস্ত নিয়ে আসতে পারেন না।
শনিবার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘শিক্ষার মানোন্নয়ন কর্মশালা ও সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ সম্মেলন-২০১৬’ এ এসব কথা বলেন তিনি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের আয়োজনে প্রথমবারের মতো এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের অনেক শিক্ষক আছেন, তার পছন্দের জায়গায় যাওয়ার জন্য উদগ্রীব। আমার কাছে যদি ১০০ জন আসেন, তাদের ৮০ জনই ঢাকায় আসতে চান। তাহলে সারাদেশ কি বন্ধ করে দেবো!
অধ্যক্ষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা শিক্ষকদের প্রভাবিত করবেন, সরকারি চাকরি করতে হলে যেখানে দেওয়া হবে সেখানে ডিউটি করা নিয়ম। ক্ষমতাবান লোকদের দিয়ে এভাবে দরখাস্ত নিয়ে আসতে পারেন না। এখন থেকে অনলাইনে দরখাস্ত না করলে কেউ বদলি হতে পারবেন না’।
শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ বলেন, ‘কোনো তদবির চলবে না। তদবির করে প্রমোশন দেন, তদবির করে প্রিন্সিপাল বানান, চেয়ারম্যান বানান, অমুক-তমুক বানান, এটা কি ন্যায্য হয়? একজন সৎ-দায়িত্বশীল শিক্ষক হতে হবে, এটা মনে রাখতে হবে। আস্তে আস্তে তার অজান্তে তাকে পরিবর্তন করবেন। যাতে তিনি এমন মানুষ হন, নিয়ম-আইন মেনে চলবেন’।
একটি পত্রিকার সংবাদ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন কলেজে পদ খালি আছে, সেই সংবাদে আমার এলাকার উদাহরণ দিয়েছেন। এজন্য তাকে ধন্যবাদ। একটি কলেজ আছে, সেখানে ৩৭টি পদ, মাত্র ৬ জন শিক্ষক আছেন। সুন্দর পরিবেশ, সেখানে নাকি ভালো লাগে না, কী ভালো লাগে? শুধু ঢাকা ভালো লাগে! সমস্ত মধু ঢাকায়! সেখানকার ছেলে-মেয়েরা পড়বে না? অবশ্যই যার প্রয়োজন আছে, আমরা বিবেচনা করবো। আমরা কমিটি করে দিয়েছি, একটা সিস্টেমের মধ্যে হতে হবে।
শিক্ষকদের সহযোগিতার জন্য মন্ত্রণালয় প্রস্তুত আছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আবার কোনো শিক্ষক যদি অন্যায় কাজ করেন, তিনি রেহাই পাবেন না। যদি মন্ত্রণালয় থেকেও কেউ গিয়ে আপনাদের কাছে অন্যায় আবদার করেন, ঘুষ চান, আপনারা চুপ করে থাকবেন না। তাকে বসিয়েই সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ফোন করবেন। আমরা তাকেও ছাড় দেবো না। মনে রাখবেন, আপনারা হলেন শিক্ষক। ভবিষ্যৎ ও জাতি আপনাদের ওপর নির্ভর করে’।
মন্ত্রী জানান, সারাদেশে ২৮৯টি সরকারি কলেজ রয়েছে। এছাড়া ইন্সটিটিউট, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, সরকারি আলিয়া মাদ্রাসাসহ এ ধরনের মোট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩২৯টি। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮ লাখ ৪০ হাজার ৫৩৭ জন। এসব কলেজে ১৬ হাজার ১৪১টি পদ রয়েছে। আর পদ খালি আছে ৩ হাজার ৪৭৩টি। বর্তমানে পদ পূরণ আছে ১২ হাজার ৬৬৮টি।
তিনি বলেন, শিক্ষার মূল লক্ষ্য হচ্ছে, আমাদের নতুন প্রজন্মকে আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সেই কাজটি আমরা করবো, আমাদের জাতীয় লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। এই জাতীয় লক্ষ্যের ভিত্তি রচিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে।
প্রচলিত গতানুগতিক শিক্ষায় নতুন প্রজন্মকে আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা হিসেবে গড়ে তোলা যাবে না মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা চাই এ শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল ও মৌলিক পরিবর্তন। গুণগত পরিবর্তন, নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা। শুধু বইতেই লেখা থাকবে তা না, আচরণে, সবাইকে মিলে এই কাজটি করতে হবে। মানুষের জীবনে, চিন্তা-চেতনা ও সংস্কৃতিবোধ পাল্টিয়ে দিতে হবে। নতুন মানুষ তৈরি করতে হবে।
সম্মেলনে অধ্যক্ষদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ যিনি, তাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, শুধু ভালো শিক্ষকই যথেষ্ট না। তাকে একজন পরিচালক ও নেতা হতে হবে। তাকে অবশ্যই কলেজ পরিচালনার জন্য যতো ধরনের আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি আছে সব কিছু তার নখদর্পণে থাকতে হবে। তা না হলে তিনি ঠিক মতো কাজ করতে পারবে না। তাকে সব কিছু জেনে-শুনেই কাজ করতে হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুনের সভাপতিত্বে শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইনও সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (কলেজ) ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামানের সঞ্চালনায় বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষরা তাদের কলেজের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন।
সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন সরকারি কলেজ, ইন্সটিটিউট, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, সরকারি আলিয়া মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন কলেজের ২৯৮ জন অধ্যক্ষ অংশ নিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৬
টিএইচ/এএসআর