ময়মনসিংহ: শিক্ষার্থী বাণিজ্যে পারদর্শী সাইফুরস কোচিং সেন্টার চটকদার বিজ্ঞাপনী ভাষায় প্রসপেক্টাস ও লিফলেট বিলি করে শিক্ষা নগরী ময়মনসিংহে শিক্ষার্থী বাগিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
তাদের সাম্প্রতিক এমন প্রসপেক্টাসের আদলে চটকদার বিজ্ঞাপনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার (২১ মে) এ কোচিং সেন্টারের প্রধান সাইফুর রহমান খানের শুভেচ্ছা ক্লাসের নাম করে রঙ-বেরঙের প্রসপেক্টাস ছাড়া হচ্ছে। যেখানে লোভনীয় ছাড়ের কথা বলে ‘টোপ’ ছাড়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার।
ওইদিন সকালে ও বিকেলে দু’ধাপে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে এ ‘শুভেচ্ছা ক্লাস’।
শিক্ষাকে পণ্যে পরিণত করতে অভিনব কৌশল নিতে বরাবরই পটু সাইফুরস শুধু বিজ্ঞাপন নয়, লোভনীয় ছাড় দেওয়ারও টোপ দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
উচ্চ মাধ্যমিক, বিসিএসসহ বিভিন্ন ব্যাংকের পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রসপেক্টাসে এ ক্লাসের উদ্ভট নামও ঠিক করা হয়েছে ‘ইশ্’ ক্লাস।
নানা কারণে বিতর্কিত এ কোচিং সেন্টারটির এমন অভিনব নাম নিয়ে রীতিমতো উষ্মা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। অনেকে হাসাহাসিও করছেন।
সাইফুরস কোচিং সেন্টারের প্রচারণা প্রসপেকক্টাসের শুরুতেই লেখা রয়েছে- ‘এইচএসসি, অনার্স, বিসিএস প্রমুখ সব্বাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আমার ‘ইশ’ ক্লাসে !’
আরেক অংশে লেখা হয়েছে- ‘তুমি যেখানেই থাকো না কেনো, আমি ইনশাল্লাহ গ্যারান্টি দিচ্ছি যে, এই ক্লাসটি তোমার আপডাউনের খরচ, কষ্ট, সময়, সবই উসূল হয়ে অনেক বেশি পাবে। ’
প্রচার করা হচ্ছে শনিবারের (২১ মে) এ ‘ইশ্’ ক্লাস উপলক্ষে সবার জন্য বিশেষ গিফট অফার। মূলত তাদের চটকদার এমন বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষা নগরী ময়মনসিংহের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ‘টোপ’ দিয়ে শিক্ষার্থী সংগ্রহ করার এমন অভিনব পন্থাকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না।
তাদের অভিযোগ, শিক্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে এ কোচিং সেন্টারটির বাণিজ্য রমরমা অবস্থায় উঠেছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি নানা ধরনের অপকৌশলে লিপ্ত হলেও তাদের সার্বিক শিক্ষার মান নিয়ে সন্দেহ-সংশয় রয়েছে অনেকেরই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় সাইফুর’সর সাম্প্রতিক এক বিজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘ইংলিশ এর ভুলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৬০ কোটি টাকা হ্যাকারদের হাতছাড়া। ’
হ্যাকার তৈরির এ বিজ্ঞাপনের সূত্র ধরেই সাইফুর’স কোচিং সেন্টারের কর্মকাণ্ড নিয়ে চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
সপ্তাহ দেড়েক আগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) কার্যালয়ে আয়োজিত ২০১৫ সালের পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানের ব্যানারে সাইফুর’সের নাম থাকায় অনুষ্ঠানস্থলে এসেও অংশ নেননি আইনমন্ত্রী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
আর ‘চোর বানানোর বিজ্ঞাপন’ দিয়ে সাইফুর’স জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করায় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
একই সঙ্গে সাইফুরস প্রধানকে ‘চোরের রাজা’ আখ্যা দেন মন্ত্রী।
স্থানীয় শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে বরাবরই চটকদার বিজ্ঞাপনের পথ বেছে নেয় সাইফুর’স।
শিক্ষার্থীদের ইংরেজির জাহাজ বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিতর্কিত এ কোচিং সেন্টারটি যেমন খুশি তেমন কোচিং ফি আদায় করছে।
একটি প্রসপেকক্টাসে তারা নিজেরাই প্রকারান্তরে স্বীকার করে লিখেছে ‘ভার্সিটি ভর্তি কোচিং জগত আসলে অনেকটাই মিথ্যার জগত। ’
আরিফুল ইসলাম নামের অনার্স পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ইংরেজি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে সব সময় এক ধরনের ভয় কাজ করে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে টেকনিকে চুটিয়ে ব্যবসা করছে সাইফুর’স। ’
আব্দুল্লাহ রায়হান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সাইফুর’স নিজেদের সেরা কোচিং দাবি করছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিভিন্ন কৌশলে প্রভাবিত করছেন। ভালো ইংরেজি শেখানোর দাবি যারা করে তাদের ডিসকাউন্ট রহস্য কী? এটাও তো এক ধরনের প্রতারণা। ’
এসব বিষয়ে সাইফুর’স কোচিং সেন্টারের ময়মনসিংহ ব্রাঞ্চের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার হাবিবুর রহমান হাবিব বাংলানিউজকে বলেন, ‘ইশ’ ক্লাস মানে এ ক্লাস না করলে শিক্ষার্থীরা আফসোস করবে। আর সাইফুরস নিয়ম-কানুন মেনেই কার্যক্রম চালাচ্ছে। এখানে প্রতারণার প্রশ্নই আসে না।
সাইফুরস’র সাম্প্রতিক এমন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সাইফুরস’র সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড বিতর্কিত। খোঁজ খবর নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে সাইফুরস’র কর্মকাণ্ডের বিষয়টি নজরে নেই বলে জানান ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শারমিন জাহান। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘সাইফুর’সের বিষয়ে জেনে ব্যবস্থা নেবো। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৭ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৬
এমএএএম/এমএ