ঢাকা: সরকারি-বেসরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকের (এইচএসসি) একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি।
আবেদনের ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন সম্পন্ন সিম ব্যবহার করতে হবে প্রার্থীদের।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে বুধবার (২৫ মে) প্রকাশিত নির্দেশিকায় এসএমএস এবং অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া এবং কলেজগুলোর জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সরকার যেহেতু বায়োমেট্রিক শুরু করেছে এবং আগামী ৩১ মে’র পর সিমগুলো বন্ধ হয়ে যাবে, সেজন্য বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত সিম দিয়ে আবেদন করতে বলা হয়েছে।
একজন প্রার্থী ২০টি কলেজের (এসএমএসে সর্বোচ্চ ১০টি ও অনলাইনে সর্বোচ্চ ১০টি) জন্য আবেদন করতে পারবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. মো. আশফাকুস সালেহীন।
শিক্ষার্থীদের আবেদনের ক্ষেত্রে একই মোবাইল নম্বর ব্যবহার ও মোবাইল সিম অবশ্যই বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত হবে বলে জানিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক বাংলানিউজকে বলেন, বৃস্পতিবার (২৬ মে) সকাল ৯টা থেকে অনলাইন এবং এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ শুরু হবে।
পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৬ মে থেকে আগামী ৯ জুন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
অনলাইনে আবেদনে করণীয়:
অনলাইনে আবেদনের পূর্বে শিক্ষার্থীকে শুধুমাত্র টেলিটক মোবাইল থেকে আনলাইনের ফি এসএমএস করে প্রদান করতে হবে।
মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে CAD স্পেস WEB স্পেস Board স্পেস Roll স্পেস Year স্পেস Reg.No. লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।
ফিরতি এসএমএসে একটি পিন নম্বর দেওয়া হবে, ফি প্রদান করতে সম্মত হলে অপশনে গিয়ে CAD স্পেস Yes স্পেস PIN স্পেস (Contact No, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনকৃত মোবাইল নম্বর) দিয়ে পুনরায় ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফি জমা হলে একটি নিশ্চিতকরণ এসএমএস আসবে।
টেলিটকে আবেদন ফি সম্পন্ন হলে ভর্তির ওয়েবসাইট (www.xiclassadmission.gov.bd)-তে গিয়ে Apply Online-এ ক্লিক করতে হবে। এরপর প্রয়োজনয়ীয় প্রক্রিয়া শেষ হলে আবেদনকারী একটি ফরম পাবে, সেটি ডাউনলোড করে নিতে হবে। একইভাবে ১০টি প্রতিষ্ঠানে আবেদন সম্পন্ন করতে হবে প্রার্থীকে।
এসএমএসের মাধ্যমে করণীয়:
শুধু টেলিটকের সিম দিয়ে মেসেজ অপশনে গিয়ে CAD লিখে স্পেস দিয়ে EIIN স্পেস Key word এর দুই অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের প্রথম তিন অক্ষর স্পেস রোল নম্বর স্পেস রেজিস্ট্রেশন নম্বর ভর্তিচ্ছু শিফটের প্রথম তিন অক্ষর (শিফট না থাকলে N) লিখে স্পেস দিয়ে ভার্সনের প্রথম অক্ষর লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। উদাহরণ: CAD 696954 SC DHA 123456 2016 1523678902 D B FQ. এরপর নিশ্চিতকরণ এসএমএস আসবে।
আর আবেদন ফি প্রদানের জন্য এসএমএসে আবেতনকারীর নাম, প্রতিষ্ঠানের EIIN ও নাম, গ্রুপের নাম এবং শিফটসহ ফি বাবদ ১২০ টাকা কেটে নিয়ে তা জানিয়ে পিন কোড দেওয়া হবে। এরপর মেসেজ অপশনে গিয়ে CAD লিখে স্পেস দিয়ে Yes স্পেস PIN স্পেস Contact No. (বায়োমেট্রিক নিবন্ধিত সিম নম্বর) লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।
গত ১১ মে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়, যাতে ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ২০১ জন অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৬০৫ জন। পাসের হার ৮৮.২৯ শতাংশ। এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৭৬১ শিক্ষার্থী।
ফল প্রকাশের আগে ৯ মে সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ভর্তি নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়।
নীতিমালা অনুযায়ী প্রকাশিত নির্দেশিকায় বলা হয়, অনলাইনে সর্বোচ্চ ১০টি প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৫০ টাকা এবং এসএমএসের মাধ্যমে প্রতি আবেদনের জন্য ১২০ টাকা ফি প্রদান করতে হবে। শুধু টেলিটক মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে।
তবে পরবর্তীতে আবেদনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলেজ পরিদর্শক।
বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে কলেজে ভর্তি করানো হবে। আর দ্বিতীয়বারের মতো অনলাইনে ভর্তি করানো হবে।
শিক্ষার্থীর একই সাথে ১০টি কলেজের মেধাক্রম প্রকাশ করা হবে। ভর্তি প্রক্রিয়ায় গতবছর ৫টি প্রতিষ্ঠানে পছন্দের সুযোগ ছিল।
আগামী ৯ জুন পর্যন্ত আবেদন করে প্রথম মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৬ জুন। বিলম্ব ফি ছাড়া ১৮ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ভর্তি হওয়া যাবে। আর ক্লাস শুরু হবে আগামী ১০ জুলাই। বিলম্ব ফি দিয়ে আগামী ১০-২০ জুলাই পর্যন্ত ভর্তি হওয়া যাবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালের এসএসসি উত্তীর্ণরাও ছাড়াও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালের পরীক্ষার্থীরা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
ভর্তি নীতিমালায় বিভিন্ন ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। মফস্বল/পৌর (উপজেলা) এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি সর্বসাকুল্যে ১ হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় ২ হাজার টাকা এবং ঢাকা ছাড়া অন্য মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩ হাজার টাকার বেশি হবে না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তিতে ৫ হাজার টাকার বেশি নিতে পারবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় আংশিক এমপিওভুক্ত বা এমপিও বর্হিভূত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও এমপিও বর্হিভূত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য ভর্তির সময় ভর্তি ফি, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফি বাবদ বাংলা মাধ্যমে ৯ হাজার টাকা এবং ইংরেজি মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। উন্নয়ন খাতে কোনো প্রতিষ্ঠান ৩ হাজার টাকার বেশি নিতে পারবে না।
কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অনুমোদিত ফি’র বেশি নেওয়া যাবে না এবং অনুমোদিত সকল ফি নেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ রশিদ দিতে হবে।
দরিদ্র, মেধাবী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ভর্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ উল্লিখিত ফি যতদূর সম্ভব মওকুফের ব্যবস্থা নেবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, কোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ/সমমানের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান হতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীগণ প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত যোগ্যতা সাপেক্ষে স্ব-স্ব বিভাগে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভর্তির সুযোগ পাবে। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিত করেই অবশিষ্ট শূন্য আসনে ভর্তি করাতে পারবে। তবে সকল ভর্তিই অনলাইনে সম্পন্ন করতে হবে।
বিভাগীয় এবং জেলা সদরের কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ৮৯ শতাংশ আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। অবশিষ্ট আসনের মধ্যে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/সন্তানের সন্তান, ৩ শতাংশ সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় ও জেলা সদরের বাইরের এলাকার শিক্ষার্থী, ২ শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীনস্ত দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী এবং স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্দের সদস্যদের সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
আর নতুন করে এবার শূন্য ০.৫ শতাংশ বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) এবং অপর ০.৫ শতাংশ প্রবাসীদের সন্তানদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।
নীতিমালায় বলা হয়, বিজ্ঞান শাখা থেকে উত্তীর্ণরা যে কোনো বিভাগে ভর্তি হতে পারবে। মানবিক শাখা থেকে উত্তীর্ণরা মানবিকের পাশাপাশি ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় এবং ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীরা ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে ভর্তি হতে পারবে।
সমান জিপিএ প্রাপ্তদের ক্ষেত্রে সর্বমোট প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করতে হবে। বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে সমান জিপিএ প্রাপ্তদের মেধাক্রম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সাধারণ গণিত, উচ্চতর গণিত/জীববিজ্ঞানে প্রাপ্ত জিপিএ বিবেচনায় আনা হবে। প্রার্থী বাছাইয়ে জটিলতা হলে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, পদার্থ ও রসায়নে প্রাপ্ত জিপিএ বিবেচনায় নিতে হবে। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা গ্রুপের ক্ষেত্রে সমান জিপিএ নিষ্পত্তির জন্য পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, গণিত ও বাংলায় অর্জিত জিপিএ বিবেচনা করা হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, এক বিভাগের প্রার্থী অন্য বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে মোট গ্রেড পয়েন্ট একই হলে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, গণিত ও বাংলায় অর্জিত পয়েন্ট বিবেচনায় আনতে হবে। স্কুল ও কলেজ সংযুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকারভিত্তিতে নিজ প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাবেন।
কোনো কলেজে ভর্তির জন্য সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করতে পারবে।
কলেজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো শিক্ষার্থীর ছাড়পত্র ইস্যু করা যাবে না এবং ভর্তি করানো যাবে না। তবে সরকারি/ আদা সরকারি/স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের বদলিজনিত কারণে তাদের সন্তানদের ছাড়পত্র ইস্যু বা ভর্তি করতে পূর্বানুমতি নিতে হবে না।
কলেজসমূহকে সংশ্লিষ্ট বোর্ডে ৭-১৮ আগস্টের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন ফি এবং ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট বোর্ডে জমা দিতে হবে ২২ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে।
ভর্তির ক্ষেত্রে নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটলে বেসরকারি কলেজের ক্ষেত্রে পাঠদানের অনুমতি বা স্বীকৃতি বাতিলসহ কলেজের এমপিও বাতিল এবং সরকারি কলেজের ক্ষেত্রে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত বছর প্রথম অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করা হলে বেশ জটিলতার মুখে পড়ে ভর্তি প্রক্রিয়া। এবার জটিলতা হবে না বলে আশ্বস্ত করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
বিস্তারিত জানতে লিংক: http://dhakaeducationboard.gov.bd/data/20160525110343213436.pdf
বাংলাদেশ সময়: ১৩২২ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৬
এমআইএইচ/এমজেএফ/