যশোর: শিক্ষার্থী বাণিজ্যে পারদর্শী সাইফুরস কোচিং সেন্টার চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে যশোরে শিক্ষার্থী বাগিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
ভার্সিটিতে ভর্তিইচ্ছু শিক্ষার্থীদের চোখ খুলে দেওয়ার মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে তাদের ‘বুলেট ক্যারিয়ার’ নামে ক্লাসের বিজ্ঞাপনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার (০৪ জুন) সকাল ১০টায় যশোর সরকারি জিলা স্কুলের অডিটোরিয়ামে সমালোচিত এ কোচিং সেন্টারের প্রধান সাইফুর রহমান খানের ‘শুভেচ্ছা ক্লাস’ নেওয়ার কথা রয়েছে।
এই শুভেচ্ছা ক্লাসের নামে শিক্ষার্থীদের মগজ ধোলাই করে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ফাঁদ তৈরি করতেই এ আয়োজন। এমন মন্তব্য করছেন যশোরের অনেকেই।
যশোরের শিক্ষার্থীদের ফাঁদে ফেলতে ইতোমধ্যে স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছে সাইফুরস কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষাকে পণ্যে পরিণত করতে অভিনব কৌশল নিতে বরাবরই পটু সাইফুরস। শুধু বিজ্ঞাপন নয়, লোভনীয় ছাড় দেওয়ারও টোপ দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের। সাইফুরস’র চটকদারি প্রসপেক্টাসে বলা হয়েছে, ‘এক ঢিলে ইংরেজি শেখা, বিদেশ যাওয়া, দেশেই চাকরি পাওয়া প্রভৃতি বহু পাখি মারতে এখনই শুরু করুন Spoken IELTS। ’
এছাড়াও এমবিএ, প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ, বিসিএস ও ব্যাংকে চাকরির ক্লাসের জন্য উদ্ভট আরেকটি নামও ঠিক করা হয়েছে ‘ইশ্’ ক্লাস। প্রসপেক্টাসে উদ্ভট এসব নাম দেখে শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অনেক অভিভাবক ঠাট্টা-তামাশাও করছেন।
এদিকে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ যশোর জিলা স্কুল কর্তৃপক্ষ বহুল সমালোচিত সাইফুরস কোচিং সেন্টারের কাছে সরকারি অডিটোরিয়াম ভাড়া দেওয়ায় নানা আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
রাজু আহম্মেদ নামে এক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, ‘ইংরেজি শিক্ষার নামে উদ্ভট নাম ‘ইশ্ ও Spoken IELTS’ কোর্সে ইংরেজির জাহাজ বানানোর প্রলোভন ছাড়া কিছুই নয়। ইংরেজিতে কিছুটা দুর্বল প্রকৃতির শিক্ষার্থীদের মাঝে এক ধরনের ভয় সৃষ্টি করে তারা চুটিয়ে ব্যবসা করছে।
যশোর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক একেএম গোলাম আজম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি অল্প কয়েকদিন এই স্কুলে যোগদান করেছি। ফলে, সাইফুরস সম্পর্কে না জেনে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় অডিটোরিয়াম ভাড়া দিয়েছি। ’
যশোর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুল ইসলাম টুকু বাংলানিউজকে বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাইফুরস কোচিং সেন্টারকে অডিটোরিয়াম ভাড়া দেওয়া উচিত হয়নি। তবে, সরকারি বিদ্যালয়গুলো নিজেরা এসব বিষয়ে দেখাশোনা করায় আমি এ বিষয়ে অবগত নই, তবুও আমি খোঁজ-খবর নিয়ে দেখছি। ’
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) খুলনা আঞ্চলিক পরিচালক টিএম জাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ‘চোরের রাজা’ সাইফুরস’কে অডিটোরিয়াম ভাড়া দেওয়া ঠিক হয়নি। তবে, এ বিষয়ে তিনি খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় সাইফুরস’র সাম্প্রতিক এক বিজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘ইংলিশ এর ভুলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৬০ কোটি টাকা হ্যাকারদের হাতছাড়া। ’
হ্যাকার তৈরির এ বিজ্ঞাপনের সূত্র ধরেই সাইফুর’স কোচিং সেন্টারের কর্মকাণ্ড নিয়ে চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
গত মাসে (মে ২০১৬) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের ব্যানারে সাইফুরস’র নাম থাকায় অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
আর ‘চোর বানানোর বিজ্ঞাপন’ দিয়ে সাইফুর’স জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করায় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। একই সঙ্গে সাইফুরস প্রধানকে ‘চোরের রাজা’ আখ্যা দেন মন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৩ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১৬
পিসি/