জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: চাকরি ও বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে লেখাপড়া নিয়ে যখন ব্যস্ত সময় পার করছে শিক্ষার্থীরা ঠিক সেই মুহূর্তে সবকটি আবাসিক হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন চাকরি প্রত্যাশী, বিদেশি ও সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গ্রীষ্মকালীন, রমজান, পবিত্র জুমাতুল বিদা, শব-কদর এবং ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে আগামী ৭ জুন থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ক্লাস এবং ১১ জুন থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত গ্রীষ্মকালীন ছুটি উপলক্ষে সকল অফিস বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত সকল আবাসিক হল বন্ধ থাকবে।
এ ঘোষণায় ক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা যায়।
ফেসবুকে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘গত বছর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঈদের ছুটিতে হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু পরে ছাত্র-ছাত্রীদের চাপে আবার হল খোলা রাখার সিদ্ধান্তে ফিরে এলেন। আসলে কাজের এত সংকট যে ঘুরে ফিরে শিক্ষকদের একই কাজ করতে হয়। তাই এ বছরও ছুটিতে ১৪ দিন হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু এত দিন হল বন্ধ রাখা হলে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়ে। আমি এ সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাই’।
অন্য আরেক শিক্ষার্থী লিখেন, ‘এতদিন হল ভ্যাকেন্ট রাখা মনে হয় ঠিক হবে না। সিদ্ধান্ত পুন:বিবেচনার দাবি রাখে’।
চাকরি প্রত্যাশী ও সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের এ ধরণের সিদ্ধান্তে তারা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হব। তাদের লেখাপড়ায় একটি ধারাবাহিকতা আছে, তা বিঘ্নিত হলে চাকুরি পরীক্ষায় তারা পিছিয়ে পড়বেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জোবায়ের টিপু বলেন, শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা না বুঝে কি কারণে বা কেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। এর আগেই আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছি। এবারো আমরা উপাচার্যের সাথে দেখা করে এ ধরণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানাবো।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি দীপাঞ্জন সিদ্ধান্ত কাজল বলেন, হল বন্ধ আমরা কখনোই চাই না। এর আগে একবার এ ধরণের হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রশাসন তখন আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। ওই সময় উপাচার্য বলেছিলেন পরবর্তীতে আর হল বন্ধ করবেন না। তারপরেও এবার হল বন্ধ করে উপাচার্য আমাদের সাথে এক ধরণের প্রতারণা করেছেন। এর কারণ জানার জন্য আমরা কাল পরশু উপাচার্যের সঙ্গে বসবো।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত চিন্তার জায়গা এখানে বিভিন্ন মতাদর্শের শিক্ষার্থীরা অধ্যায়ন করে। সেখানে হল বন্ধের মত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। এরই মধ্যে এ বিষয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে মৌখিকভাবে কথা বলেছি।
কেন হল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল এ বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ হাফিজুর রহমান বলেন, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ভাল বলতে পারবে।
বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিককে একাধিক বার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বিশ্ববিদ্যালয় এর উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘আমি ভাইভা বোর্ডে আছি এ বিষয়ে এখন কথা বলতে পারবো না। ‘
উল্লেখ্য, গত বছরও রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতের কারণ দেখিয়ে হল বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। তবে পরবর্তীতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে দেখা করে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান। ওই দাবির প্রেক্ষিতে তখন হল বন্ধের সিদ্ধান্ত রহিত করা হয়েছিলো।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৩৪ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০১৬
আরআই