ঢাকা: সদ্য জাতীয়করণ হওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকরা (প্যানেল শিক্ষক) মেধাক্রম অনুযায়ী সব শূন্যপদে নিয়োগ পাবেন বালে জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর সোমবার (০৬ জুন) ৬১ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে থানা/উপজেলায় মেধারভিত্তিতে শূন্য পদে নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশের পর নিয়োগের জন্য জেলায় জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ের সামনে মঙ্গলবার (০৭ জুন) অবস্থান করছিল প্রার্থীরা। কিন্তু কোন কোন শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়া হবে তা নিয়ে অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মো. আনোয়ারুল হক বাংলানিউজকে বলেন, সব শূন্যপদে মেধা তালিকার ভিত্তিতে প্যানেল শিক্ষকরা নিয়োগ পাবেন।
বিদ্যালয়গুলোতে সৃষ্ট পঞ্চম পদে নিয়োগ দেওয়া হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব শূন্যপদে নিয়োগ পাবেন, এখানে পঞ্চম পদ বলে কথা নয়।
আনোয়ারুল হক স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা ছিল, আদালতের রায়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইনগত মতামত এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী উপজেলা/থানা মেধাক্রম অনুযায়ী সদ্য জাতীয়করণ হওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়ার অনুরোধ করা হলো।
‘চিঠি পাওয়ার ৭ কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচিত প্রার্থীদের নিয়োগপত্র ইস্যু করে বিদ্যালয়ে যোগদান নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ’
চিঠিতে জেলা প্রশাসক/জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে রক্ষিত ইতোপূর্বে প্রেরিত প্যানেল তালিকায় যেসব প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি সেসব প্রার্থীদের মূল আবেদনপত্র, নিয়োগ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই করে নিশ্চিত হয়ে উপজেলা/থানা মেধাক্রম অনুযায়ী সদ্য জাতীয়করণ হওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগের অনুরোধ করা হয়েছে। কোনো অনিয়ম হলে বা ভুয়া কোনো প্রার্থী নিয়োগ পেলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন।
প্রথমবার গত ১৮ মে রেজিস্ট্রার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্য পদে নিয়োগ প্রদানের বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হলেও বর্তমানে সেই রেজিস্ট্রার্ড স্কুল না থাকায় জটিলতা তৈরি হয়। এরপর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়ের শরণাপন্ন হয়।
পরবর্তিতে গত ২ জুন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি স্পস্ট করে ‘সদ্য জাতীয়করণ হওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’ নিয়োগের নির্দেশ দিয়ে অধিদপ্তরকে চিঠি পাঠায়।
এরপরই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের নির্দেশ দিলো।
রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরি (নিয়োগ, পদোন্নতি, শৃঙ্খলা ও কল্যাণ) নীতিমালা-২০০৯ অনুযায়ী সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০১০ সালের ২১ এপ্রিল বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, শূন্যপদের বিপরীতে নিয়োগের জন্য ৪২ হাজার ৬১১ জনের একটি প্যানেল প্রস্তুত করা হয়। উক্ত প্যানেল থেকে এর মধ্যে ১০ হাজার ৫১৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাকিদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে ঝুলে থাকার মধ্যে তা নিয়ে দীর্ঘ আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চালিয়ে যান প্রার্থীরা।
পরে এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেয় গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। উচ্চ আদালত রিট পিটিশন ও রিভিউ পিটিশন খারিজ করে নীতিমালা তৈরি করে নিয়োগ দিতে বলায় নিয়োগ উদ্যোগ নেয় মন্ত্রণালয়।
‘সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০১০’ এ ৪২ হাজার ৬১১ জনের মেধাক্রম তালিকা ২০১২ সালের ৮ এপ্রিল প্রকাশ করা হয়। এরপর ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণের ঘোষণা দেওয়ার পর সেই প্যানেল থেকে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। এখন সেই জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পাবেন তারা।
প্যানেল শিক্ষক ঐক্যজোটের সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, এসব পদে প্রায় ২৫-২৮ হাজার প্রার্থী রয়েছেন।
এর আগে আইনি লড়াইয়ে নওগাঁয় ১০ জনকে নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের মধ্যে সাতজন যোগদান করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৬
এমআইএইচ/জেডএস