জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বড় কোনো ছুটি হলেই নেমে আসছে আতঙ্ক। এই সময়ে চুরি, ছিনতাই, অপহরণ আর ধর্ষণের মতো ঘটনা বেড়ে যায় বলে ক্যাম্পাসে অবস্থানরতদের দিন যায় ভয়-আতঙ্কের মধ্য দিয়ে।
এদিন দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ক্লাবের সামনে থেকে অপহরণ হন আল বেরুনী (সম্প্রসারিত ভবন) হলের কর্মচারী মো. আলাউদ্দিনের মেয়ে মোসাম্মৎ আনোয়ারা রানু (২৮)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ৩৬তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় রানুর ছোট ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ৪১তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সাইমুন ইসলাম আশুলিয়া থানায় একটি জিডি করেন। পরে সোমবার (২১ জুন) বিকেলে তিনি ফিরে আসেন।
কারা অপহরণ করেছে, কোথায় নিয়ে গিয়েছিল এ নিয়ে এখনও রানু বা তার পরিবার কিছু না বরলেও সমালোচনা শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, বিশাল নিরাপত্তা বলয় থাকা সত্ত্বেও কেন এ ধরণের ঘটনা একের পর এক ঘটে চলেছে, তা খুঁজে বের করতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ের হিসাবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে চুরি, ছিনতাই, অপহরণ আর ধর্ষণের মতো ঘটনার শিকার হয়েছেন বেশি ভাগই বাইরে থেকে আগত দর্শনার্থী। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীও বাদ পড়েন না।
নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
শিক্ষার্থী দিদারুল হক তার ফেসবুক স্ট্যাস্টাসে লিখেছেন, ‘দিনে-দুপরে ক্যাম্পাসের ভেতরে যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা কি আসলেই আছে?’
আরেক শিক্ষার্থী মঈনুল রাকীব তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দিনে-দুপুরে অপহরণ করেছে সন্ত্রাসীরা। ক্যাম্পাসটা এমন ভয়াবহ অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছে কেন? অতি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। সেই সঙ্গে ক্যাম্পাসের ভঙ্গুর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবনার সময় আসছে কি না তা ভাবতে হবে নতুন করে। ’
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জুবায়ের টিপু বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে অবৈধ যে রাস্তাগুলো আছে সেগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। সঙ্গে নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা আছে তারা আসলে নিরাপত্তা দিতে যোগ্য কিনা তা বিবেচনা করতে হবে। একইসঙ্গে এসব ঘটনার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালীর কারও হাত আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখতে হবে। তাহলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
রোববারের এ ঘটনার আগে গত ১০ জুন রাতে সাভারে বসবাসকারী এক গর্ভবতী নারী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আমবাগানে তার আত্মীয়ের বাসা থেকে ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন। এ সময় একা পেয়ে কিছু দুষ্কৃতকারী তার কাছ থাকা মোবাইল, ব্যাগ ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়। পরবর্তীতে সাংবাদিকরা বিষয়টি জানার পর ওই নারীকে তার স্বামীর কাছে পৌঁছে দেন।
একই দিনে এক তরুণীকে অপহরণকারীর হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে একটি ছাত্র সংগঠনের কতিপয় নেতাকর্মীর মারধরের শিকার হন ক্যাম্পাসে কর্মরত এক সাংবাদিক।
এরও বেশ কয়েকদিন আগে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী কোয়ার্টারের সামনে থেকে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের এক কর্মচারীর মেয়েকে অপহরণ করার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। পরে লোকজনের আগমনে পালিয়ে যায় তারা।
২০১৪ সালের ৯ অক্টোবর দুপুরে ঈদুল আজহার ছুটিতে বহিরাগত এক তরুণী বোটানিক্যাল গার্ডেনে গণধর্ষণের শিকার হন। একই বছরের এপ্রিল মাসে ধর্ষণের শিকার হন ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা এক শিক্ষার্থী।
২০১৩ সালের ঈদুল আজহার ছুটির সময় ক্যাম্পাসে বেড়াতে আসা এক বহিরাগত তরুণীকে শহীদ মিনার এলাকা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায় দুষ্কৃতকারীরা। পরে ওই তরুণীর সঙ্গে আসা যুবক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীদের বিষয়টি জানালে তারা দুই ঘণ্টা পুরো ক্যাম্পাসে খোঁজাখুঁজি করেও তরুণীটির হদিস পাননি।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা জেফরুল হাসান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের নিরাপত্তা খুব জোরদার রয়েছে। রয়েছে দিনে-রাতে পাহারা। যেসব ঘটনা ঘটেছে, সবই বহিরাগতদের কাজ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, অপহরণের ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঘটেছে। আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার চেষ্টার করছি।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩৪ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৬
আরআইএস/এসআরএস/এইচএ/