ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

বিশ্বজিৎ হত্যায় পলাতক দণ্ডিতদের খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৬
বিশ্বজিৎ হত্যায় পলাতক দণ্ডিতদের খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ! ছবি: ফাইল ফটো

পুরান ঢাকার দর্জি দোকানদার বিশ্বজিৎ হত্যার চার বছর হয়ে গেলেও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি আদালতের রায়।

ঢাকা: পুরান ঢাকার দর্জি দোকানদার বিশ্বজিৎ হত্যার চার বছর হয়ে গেলেও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি আদালতের রায়। তৎকালীন সময়ের অন্যতম আলোচিত এই হত্যা মামলার ৮ আসামি কারাগারে থাকলেও বাইরে আছেন আরো ১৩ আসামি।

এই আসামিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেমন সরব তেমনি ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত চলাচল ও ঘোরাফেরা করলেও পুলিশ বলছে আসামিদের খোঁজ পাচ্ছেন না তারা!

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী বাংলানিউজকে বলেন, পলাতক ১৩ আসামির বেশিরভাগ আসামি ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় নিরাপদেই রয়েছেন। অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রমেও। মাঝেমধ্যেই তাদের দেখা মেলে রাজধানীর ব্যস্ত জায়গা শাহবাগে।

পলাতকদের মধ্যে কয়েকজন নিজের নাম গোপন করে অন্য নামে ফেসবুকে সক্রিয় রয়েছেন। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া রাজন তালুকদার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে থাকেন। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া মীর মোহাম্মদ নূরে আলম ওরফে লিমন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন শহরে গা-ঢাকা দিয়ে আছে। তবে সে মাঝে মধ্যেই ঢাকায় এসে বিভিন্ন নেতার সাথে সাক্ষাৎ করে ফিরে যায় উত্তরবঙ্গে।

এ ছাড়া যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ইমরান হোসেন গাজীপুর ও ফরিদপুরে ঘুরেফিরে বসবাস করে। সে ফেসবুকেও বেশ সক্রিয়। কামরুল হাসানকে শাহবাগে মাঝেমধ্যে দেখা যায়। তাহসিনকে ঢাকার কয়েকটি জায়গায় দেখা গেছে এবং আজিজুর রহমানকেও ঢাকায় দেখা গেছে।

পলাতক আসামিদের গ্রেফতার ও সাজা কার্যকরে বিলম্ব হওয়া প্রসঙ্গে বিশ্বজিৎ দাস এর বাবা অনন্ত দাস মুঠোফোনে বাংলানিউজকে বলেন, সেটা তো বাবা আমার চেয়ে আপনাদের ভাল জানার কথা, আমরা তো আর তাদের চিনি না। যারা আমার ছেলেকে মেরেছে তারা সবাই বড় বড় নেতা, অনেকেই তাদের দেখেন শুধু পুলিশ তাদের দেখে না।

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন, আমার নিরাপরাধ ছেলেটাকে দিনদুপুরে কুপিয়ে মারলো, অথচ আজও তাদের ধরতে পারছে না পুলিশ। যারা কারাগারে আছে তাদের সাঁজা কার্যকরের কোন ব্যবস্থা নিতেও দেখছি না, ভগবান জানেন তাদের কি বিচার আদৌ হবে কি না!

মামলার নথি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাহাদুর শাহ পার্কের পাশ দিয়ে জবি ছাত্রলীগের অবরোধ বিরোধী একটি মিছিল যাওয়ার সময় বোমা বিস্ফোরণ ঘটে তখন সবাই পালাচ্ছিলো, ঠিক তখনি পলায়নরত বিশ্বজিৎকে মিছিল থেকে ধাওয়া করে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

ওইদিন রাতেই অজ্ঞাতনামা ২৫ জনকে আসামি করে সূত্রাপুর থানায় হত্যা মামলা করেন ওই থানার তখনকার উপপরিদর্শক (এসআই) জালাল আহমেদ।

পরদিন (১০ ডিসেম্বর) বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও টেলিভিশনে সম্প্রচারিত খবরের ভিডিও দেখে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে জড়িতদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। এরপর প্রায় ৩ মাস তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ৫ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২১ কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। মামলা হওয়ার এক বছর পর ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর আলোচিত এ হত্যা মামলার রায়ে ২১ আসামির মধ্যে ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।

এ বিষয়ে ডিএমপি (মিডিয়া) ডিসি মাসুদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আমাদের তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়ে দিয়েছি। আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করলে তা তাদের নিজ নিজ এলাকায় চলে যাবে। কারণ সকল আসামি তো আর একই এলাকায় থাকে না।
তাদের গ্রেফতারের দায়িত্ব ওই এলাকার পুলিশের বলেও জানান তিনি।

অপরদিকে সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আশরাফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, এই মামলার যাবতীয় কাজ তখনই মাননীয় আদালত সিআইডিতে ট্রান্সফার করেছিলেন। তাই এই মুহূর্তে এই মামলায় তাদের কোন দায়িত্ব নেই।

এ মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হল-রফিকুল ইসলাম শাকিল, রাজন তালুকদার (পলাতক), মাহফুজুর রহমান ওরফে নাহিদ, ইমদাদুল হক ওরফে এমদাদ, জিএম রাশেদুজ্জামান ওরফে শাওন, মীর মোহাম্মদ নূরে আলম ওরফে লিমন (পলাতক), সাইফুল ইসলাম ওরফে সাইফুল ও কাইয়ুম মিয়া ওরফে টিপু।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ১৩ আসামি হল -খন্দকার মো. ইউনুস আলী ওরফে ইউনুস (পলাতক), তারিক বিন জহুর ওরফে তমাল (পলাতক), গোলাম মোস্তফা ওরফে মোস্তফা, মো. আলাউদ্দিন (পলাতক), মো. ওবায়দুল কাদের ওরফে তাহসিন (পলাতক), ইমরান হোসেন ওরফে ইমরান (পলাতক), আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ (পলাতক), আল আমিন শেখ (পলাতক), রফিকুল ইসলাম (পলাতক), এএইচএম কিবরিয়া, মনিরুল হক ওরফে পাভেল (পলাতক), মোহাম্মদ কামরুল হাসান (পলাতক) ও মোশাররফ হোসেন ওরফে মোশারফ (পলাতক)।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৬
ডিআর/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।