ঢাকা: রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বিনা ওয়ারেন্টে আসামি আটক করতে গিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট থানার এক উপ-পরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সপ্তম ব্যাচের শামছুল ইসলাম লিখন নামে ওই শিক্ষার্থীকে আটক করে পিটিয়ে কারাগারে পাঠানোর এ অভিযোগ উঠেছে মোহাম্মদপুর থানার এসআই শফিকের বিরুদ্ধে।
তবে এ অভিযোগের বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর বলেছেন, লিখন এসআই শফিককে লাঠি দিয়ে মেরেছেন বিধায় তাকে আটক করা হয়েছে। লিখন এখন মিথ্যাচার করছেন।
লিখনের পরিবারের অভিযোগ, তার বড় ভাই সাইফুল ইসলামের নামে মামলা থাকায় সেদিন তাদের মোহাম্মদপুরের বাড়ি তল্লাশি করতে যান এসআই শফিক ও তার সঙ্গী পুলিশ সদস্যরা। এর আগেও কয়েক দফা তাদের বাড়িতে গিয়েছিল পুলিশ। অন্যদিন লিখন বাড়িতে না থাকলেও পরদিন সকালে এমবিএ ফাইনাল পরীক্ষা থাকায় বাড়িতেই পড়াশোনায় মগ্ন ছিলেন তিনি।
এসময় এসআই শফিক তাদের বাড়িতে এসে লিখনের মায়ের সঙ্গে তার ভাইয়ের ওয়ারেন্ট নিয়ে কথা বলতে থাকেন। এক পর্যায়ে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। তখন লিখন পড়ার টেবিল থেকে উঠে আসেন এবং এসআই শফিকের কাছে সার্চ ওয়ারেন্ট দেখতে চান।
তার পরিবারের দাবি, ওয়ারেন্ট চাওয়ায়ই এসআই শফিক রেগে যান লিখনের ওপর এবং একপর্যায়ে তাকে পেটাতে থাকেন। এসময় লিখনের মা তাকে ছাড়াতে এগিয়ে এলে তাকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়।
লিখনের বড় ভাই সাইফুল ইসলাম দাবি করেন, তার এক ব্যবসায়িক অংশীদারের সঙ্গে মামলা চলছে। সেই মামলায় পুলিশ তাকে আটক করতে বাড়িতে আসে। কিন্তু ওই মামলায় জামিনে থেকে তিনি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন।
সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমাকে না পেয়ে এসআই শফিক আমার মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে থাকেন। এর প্রতিবাদ জানিয়ে লিখন আমার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট দেখতে চাইলে তিনি তা না দেখিয়ে উল্টো আজেবাজে মন্তব্য করতে থাকেন। একসময় লিখনকে মারতে গেলে আমার মা এগিয়ে যান। মাকেও ধাক্কা মেরে ফেলে দেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। ”
সাইফুল আরও বলেন, “একপর্যায়ে লিখন নিজেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দিলে এসআই শফিক আরও বেশি ক্ষেপে গিয়ে বলতে থাকেন, ‘তোর জগন্নাথকে পায়ের নিচে রাখি। ’ নিজেকে ক্ষমতাসীন দলের এক শীর্ষ নেতার ভাতিজা পরিচয় দিয়ে এসআই শফিক আরও বলেন, ‘তোদের মত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কিভাবে শিক্ষা দিতে হয় তা আমার জানা আছে’। এরপর লিখনকে পেটাতে পেটাতে পুলিশের গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যান। থানায় কারও সঙ্গে লিখনকে দেখা করতে হয়নি। আমি আইনজীবী পাঠালে তাকেও তারা দেখা করতে দেননি। ”
জামিনে মুক্ত লিখন বাংলানিউজকে বলেন, “আমাকে বাসা থেকে বের করে মারা হয়, এরপর থানায় নিয়ে অপারেশন অফিসারের রুমে মুখ বেঁধে বিরতি দিয়ে দিয়ে আরও ২-৩ দফায় পেটানো হয়। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ব্যথানাশক ইনজেকশন দিয়ে থানায় এনে আবারেও বেধড়ক পটোনো হয়। ”
এসআই শফিক ছাড়াও থানার অন্য কর্মকর্তারাও তাকে মেরেছেন বলে দাবি করেন লিখন।
এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর বাংলানিউজকে বলেন, “আমার এসআই মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকে ধরতে তার বাসায় গিয়েছিলেন, কিন্তু আসামির ভাই (লিখন) দারোগাকে পেছন দিক থেকে লাঠি দিয়ে মেরেছেন। ধ্বস্তাধস্তির কারণে আমার দারোগা হাসপাতালে ভর্তি। এখন তিনি (লিখন) নিজেকে আড়াল করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কথা বলছেন। তার বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। এখন তদন্ত হবে, তারপর পরবর্তী রেজাল্ট পাবো। ”
লিখনের শরীরে জখমের দাগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ওইদিন ওই এলাকায় মাহফিল ছিল। হাজার দশেক লোক জমায়েত ছিল। পুলিশকে মারতে দেখে এলাকাবাসী তার ওপর চড়াও হয়েছে। ওইসময় তাকে পুলিশই তাকে হেফাজত করে থানায় এনেছে। ধ্বস্তাধস্তির কারণেই হয়তো তার শরীরে দাগ হয়েছে। ”
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূর মোহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, “আমাদের কাছে লিখন বা তার পরিবার কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও আমরা মোহাম্মদপুর থানার ওসির সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন আমাদের বিস্তারিত জানাবেন। লিখন যদি নির্দোষ হয় এবং তার পরিবার যদি আমাদের লিখিতভাবে বিষয়টি জানায়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবশ্যই তার পাশে থাকবে। ”
বাংলাদেম সময়: ১২২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৬
ডিআর/এইচএ/