হাতে হাতে নতুন বই, ফেস্টুন, আকাশে হরেক রঙের বেলুন। নতুন বছরের প্রথম সকালে নতুন বই পেয়ে উচ্ছ্বসিত শিশুরা।
শুধু নতুন বই পাওয়ার আনন্দ নয়; ছিলেন অভিনেতা ফেরদৌস ও অভিনেত্রী মম, ছিল সিসিমপুরের তিন চরিত্র, আকাশের ড্রোন এবং মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সব মিলে আনন্দে মেতেছিল খেলার মাঠ।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত বই বিতরণ উৎসব-২০১৭ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে অন্যরকম একটি সকাল পার করেছে শিশু শিক্ষার্থীরা। উৎসবে শামিল হয়েছিল তাদের শিক্ষক এবং অভিভাবকরাও।
সকাল ১০টার কিছুটা পরে শুরু হয় মঞ্চের আনুষ্ঠানিকতা। এরপরই উদ্বোধন করা হয় উৎসবের।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিতি থেকে দু’জন প্রতিবন্ধী শিশুসহ শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন।
নতুন বই পাওয়ার আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন অর্থমন্ত্রী।
উৎসবে এসে তিনি বলেন, বই উৎসবে আসবো, ভাবলাম আজকে একটু ভালো কাপড়-চোপড় পরে যাই। নতুন বইয়ের গন্ধটাই চমৎকার। বইয়ে মোটা হরফে নাম লিখবে, পড়াশোনা শেষ করে বই উৎসর্গ করে দেবে- তার আনন্দটা আরও বেশি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রতিবছরই ১ জানুয়ারি বই বিতরণ করা হচ্ছে। এর কোনো নড়চড় হচ্ছে না।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মেস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০১৭ সালের বই উৎসবকে চেষ্টা করেছি আনন্দপূর্ণ করার। অর্থমন্ত্রীর দূরদৃষ্টিতে প্রাথমিকে কোনো সমস্যা থাকবে না।
অভিনেতা ফেরদৌস এবং মম’র বক্তৃতায় শিশুদের উচ্ছ্বাস আরও বেড়ে যায়। একই ডায়াসে একসঙ্গে এসে কথা বলেন এই দুই মডেল। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় উদ্বুদ্ধ হতে বলেন তারা।
বক্তৃতা পর্ব শেষে অর্থমন্ত্রী বই উৎসবের উদ্বোধন করেন। শিশুদের হাতে হাতে পৌঁছে যায় নতুন বই, মাঠে গিয়ে উচ্ছ্বাস করে তারা।
সংসদ সদস্য উম্মে রাজিয়া কাজল, খ ম জাহাঙ্গীর, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান, শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বক্তব্য রাখেন।
বই বিতরণ উৎসবের পর সাংস্কৃতিক পর্বে শিশুদের সঙ্গে সিসিমপুরের তিন চরিত্র- হালুম, টুকটুকি ও ইকরির শুভেচ্ছা বিনিময় এবং পরিবেশিত হয় মনোমুগ্ধকর নৃত্য।
নতুন বই হাতে নিয়ে হাতে হাতে ফেস্টুন এবং ঘূর্ণি পাখা নিয়ে বাদ্যের তালে তালে দুপুর পর্যন্ত খেলার মাঠ মাতিয়ে রাখে শিশুরা। বার বার তারা নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিচ্ছিলো, কখনও বা বুকে জড়িয়ে ধরছিল।
এ বছর সারাদেশের প্রাক-প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ৪ কোটি ২৬ লাখ ৩৫ হাজার ৯২৯ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫টি বই শিক্ষর্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে বলে জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) শিশুদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আট বছরে সর্বমোট বিতরণ করা পাঠ্য বইয়ের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২২৫ কোটি ৪৩ লাখ ১ হাজার ১২৮টি।
২০১৭ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক স্তরে ২ কেটি ৪৯ লাখ ৮৩ হাজার ৯৯৩ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১১ কোটি ৫৫ লাখ ২৬ হাজার ৯৫২ কপি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হবে।
প্রাথমিক প্রর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৬টি বিষয়ে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে সম্পূর্ণ নতুন, চার রঙা ও আকর্ষণীয় পাঠ্যবই বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে ই-বুকের ব্যবস্থা। প্রবাসের বাঙালি শিশুদেরও বই উৎসবে সামিল রেখেছে সরকার। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের অধীনে বিদ্যালয়গুলোতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই সরবরাহ করছে এনসিটিবি।
এবার প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে সারাদেশে ৫টি ক্ষুদ্র গৃ-গোষ্ঠীর (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো, সাদরী) শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮ ধরনের পঠন-পাঠন সামগ্রী বিতরণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৭
এমআইএইচ/জেডএস