অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়েই নির্মিত হতে যাচ্ছে ‘আব্দুল কাদির মোল্লা কনভেনশন সেন্টার’। থার্মেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির মোল্লার অর্থায়নে
নির্মিত হবে এই কনভেনশন সেন্টার।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ‘আব্দুল কাদির মোল্লা কনভেনশন সেন্টার’ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন।
আবাসিক এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে আব্দুল কাদির মোল্লার নামে কনভেনশন সেন্টার নির্মিত করার প্রতিবাদ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকেও তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
কনভেনশন সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা নেতা-কর্মীরা ‘আব্দুল কাদির মোল্লা কনভেনশন সেন্টার’ নির্মাণের প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি স্থাপনা দেশের খ্যাতিমান ব্যক্তিদের নামে করা হয়েছে। ভাষা আন্দোলন থেকে এ দেশের মুক্তিকামী মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য যারা সংগ্রাম করেছেন তাদের নামেই বিভিন্ন হল ও ভবনের নামকরণ করা হয়েছে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আব্দুল কাদির মোল্লার নামে কনভেনশন সেন্টার করা অযৌক্তিক। এখানে আব্দুল কাদির মোল্লা টাকা দিয়ে নাম কিনতে চেয়েছেন বলেই আমাদের কাছে মনে হয়েছে। এছাড়া যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত একটি পূর্ণাঙ্গ লাইব্রেরি নেই, গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আলিসান কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ করা অযৌক্তিক।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কনভেনশন সেন্টার দিয়ে কি হবে? শুধুমাত্র ব্যবসায়িক উদ্দেশে এটি করা হচ্ছে কিনা সেটাও ভেবে দেখা দরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কনভেনশন সেন্টারে তিনটি অংশ থাকবে। সেখানে মূল অংশে থাকবে একটি হল রুম। যেখানে বিভিন্ন ধরনের বড় মিটিং বা গেদারিং হতে পারে। পরের অংশে থাকবে পাশাপাশি দুটি সেমিনার রুম। অন্য অংশে থাকবে ৫০ জন অতিথি থাকার মতো আন্তর্জাতিক মানের গেস্টরুম। আব্দুল কাদির মোল্লার নিজস্ব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই কাজটি করবেন। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে।
ফিনল্যান্ডে অবস্থানরত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাশেদ রাশিব ফেসবুকে লিখেছেন, জাহাঙ্গীরনগরের ৫ম ব্যাচের শিক্ষার্থী হুমায়ুন ফরীদিকে আমরা কি মুল্যায়ন করেছি? লজ্জায় মাথা নত হয়ে যায়, আজ যখন প্রীতিলতা, জহির রায়হান, সেলিম আল দীন স্যারের নামের পাশে দেখি জনৈক স্বঘোষিত দানবীর! গাছ কেটে, বন্ধুর হাট ভেঙে দিয়ে তৈরি হবে কনভেনশন সেন্টার? লাইব্রেরিতে সিট নাই, হলে রুম সংকট, ব্যবসায়িক কোর্সের দাপটে সেশন জটে দীর্ঘায়িত হচ্ছে শিক্ষাজীবন। সেখানে কার স্বার্থে এই কনভেনশন
সেন্টার?
এ বিষয়ে জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিককে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আরে কাদের মোল্লা রাখো তো, আমরা এখন অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত আছি। কাদের মোল্লার বিষয়ে কাল কথা হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৭
পিসি/