শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় কয়েকটি কোচিং সেন্টার ঘুরে দেখা গেছে, এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠেয় এইচএসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সেন্টারগুলো বেশ প্রস্তুতি নিয়েছে। শুধু প্রস্তুতি নিয়েই থেমে নেই তারা।
ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ তৈরিতে নিজেদের ‘সাফল্যের’ ব্যানার-ফেস্টুনে পুরো ফার্মগেট এলাকা ডেকে ফেলেছে কোচিং সেন্টারগুলো। তাদের এই ব্যানার-ফেস্টুনের কারণে ফার্মগেট এলাকাকে দেখলে মনে হবে যেন এটি কোচিংয়ের নগরী। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য ভালো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হলে জীবনের অনেকাংশ স্বপ্নপূর্ণ হয়ে যায়। বাকিটা নির্ভর করে পরবর্তী অধ্যবসায় আর ত্যাগের ওপর। তাই মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষের পর একদিনও দেরি করতে রাজি নন অভিভাবক কিংবা শিক্ষার্থীরা। শুরু হয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি। কেউ কেউ এটাকে রীতিমতো ভর্তিযুদ্ধ বলেও মনে করেন।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের এই ‘প্রতিযোগিতার মানসিকতা’কে কাজে লাগিয়েই অগ্রিম ভর্তি ব্যবসা শুরু করে দিয়েছেন কোচিং সেন্টারের মালিকরা।
এইচএসসি পরীক্ষার আগেই কোচিংয়ে ভর্তি করানো এবং ক্লাস নেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে একাধিক অভিভাবক বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিংয়ে ভর্তি হওয়া এখন একটি নিয়ম হয়ে গেছে। সবাই ভর্তি হয়, তাই আমরাও আমাদের ছেলে-মেয়েকে এনেছি ভর্তি করানোর জন্য।
আগাম ভর্তি ও ক্লাস নেওয়া প্রসঙ্গে একাধিক কোচিং সেন্টারের কর্মকর্তা বলেন, আগাম ক্লাস করলে শিক্ষার্থীরা এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো করার দিকে ঝুঁকবেন এবং ভর্তিযুদ্ধে নিজেদের এগিয়ে রাখবেন।
এ বিষয়ে ‘আইকন বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং সেন্টার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মো. নুরুল ইসলাম মোরাদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এবার পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই ভর্তি এবং ক্লাস শুরু করে দিয়েছি। এতে ভর্তি প্রতিযোগিতায় আমাদের কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে থাকবে।
প্যারাগন কোচিং সেন্টার নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এস এম মোস্তফা বলেন, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ভর্তি হলেই আমরা শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফিতে ৪-৫ হাজার টাকার ছাড় দিচ্ছি। আগাম ক্লাস হওয়াটা শিক্ষার্থীদের জন্যই ভালো, কারণ তারা আগে থেকেই ভর্তিযুদ্ধের জন্য এগিয়ে থাকবে।
তবে কোচিংয়ের মালিক-পরিচালকরা এমন দাবি করলেও শিক্ষাবিদরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ একটি বোর্ড পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং ঢুকিয়ে দেওয়া মারাত্মক একটি বিষয়। শিক্ষার্থীদের এখন তার বোর্ড পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা। এখন তাকে যদি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ঢাকা মেডিকেলে কিভাবে ভর্তি হবে তা পড়ানো হয়, তাহলে শুধু তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন ভেস্তে যাবে না, এইচএসিতে ভালো করার রাস্তাও বন্ধ করে হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. হায়াৎ মামুদ বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রীর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ। তারা পরীক্ষার আগে এসব শিক্ষা বাণিজ্য করতো, কিন্তু তারা এখন পরীক্ষার আগেই শুরু করে দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, সব ধরনের কোচিং একটি অনৈতিক কাজ। সরকারের উচিৎ এ সব মুনাফালোভীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, নতুবা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বড় হুমকির মুখে পড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৭
এমএ/এইচএ/