সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিমাত্র ডিপ পাম্প ও ওয়াসার লাইন থেকে। যেখান থেকে ৬টি রিজার্ভ ট্যাঙ্কে পানি ধারণ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে তিনটি ক্যান্টিন, কিন্তু এর একটিতেও নেই পানি বিশুদ্ধকরণ ব্যবস্থা। নতুন একাডেমিক বিল্ডিংয়ের টিচার্স ক্যান্টিনে শিক্ষকদের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা থাকলেও শিক্ষার্থীরা ট্যাপ থেকে পানি পান করছেন।
যেসব হাউজ থেকে পানি আসছে সেগুলোর অবস্থাও অত্যন্ত খারাপ, পরিষ্কার করা হয় না নিয়মিত। কোনো কোনো ট্যাঙ্কের আবার নেই ঢাকনা। এতে পাখির বিষ্ঠা, ধুলোবালি ও গাছের ডালপাতা এর ভেতরে পড়ে পচে পানির সঙ্গে মিশছে। সৃষ্টি হচ্ছে প্রাণঘাতি ব্যাকটেরিয়াও।
নিয়মিত এসব ট্যাঙ্ক পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কথা থাকলেও সর্বশেষ কবে এসব পরিষ্কার করা হয়েছে তার কোনো ডকুমেন্ট নেই প্রশাসনের কাছে। গত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি পরীক্ষা করা হয়েছে কি না তারও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শুরুর সময় তৎকালীন উপাচার্যের উদ্যোগে সকল বিভাগে পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র দেওয়া হয়। তবে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা আর অবশিষ্ট নেই কোনো বিভাগেই। এরপর নিজস্ব উদ্যোগে হাতেগোনা কয়েকটি বিভাগে পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টারের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু অনেক বিভাগে আবার এই বিশুদ্ধিকরণ পদ্ধতি ব্যবহারের সুযোগ শুধুই শিক্ষকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
জবির ভুগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, পানি যতই গভীর থেকে তোলা হোক না কেন, তা যদি নিয়মিত পরিষ্কার করা না হয় কিংবা পানি সরবরাহের লাইনের কাছাকাছি ড্রেনে ময়লা বা মানুষের মলমূত্র মিশে থাকে তাতে প্যাঁথজিন ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হতে পারে। মানব শরীরে জীবাণুবাহিত রোগের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে এই পানি। এই পানি পান করলে কলেরা, টাইফয়েড, জন্ডিসসহ নানা রকম রোগ হতে পারে।
সংকট এখানেই শেষ নয়, অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন বিভাগে পানি থাকে না। প্রশাসনকে বার বার জানালেও কোনো লাভ হয় না। গত এক সপ্তাহ ধরে ভাষা শহীদ রফিক ভবনের পানি উত্তোলনের একমাত্র পাম্পটি নষ্ট। এতে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন এই ভবনে অবস্থিত বাংলা, ইতিহাস ও অন্যান্য বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফন্টের সভাপতি মেহরাব আজাদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, জবি শিক্ষার্থীরা সব দিক দিয়েই অবহেলিত। ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপদ পানি দিতে না পারা চরম অবজ্ঞার বহিঃপ্রকাশ। দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, আমার কাছে ক্যাম্পাসের পানি নিয়ে তেমন কোনো তথ্য নেই। এটা দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দফতর। আমার জানা মতে কোনো পানি বিশুদ্ধকরণ পরীক্ষা করা হয়নি। তবে ক্যাম্পাসের এ পানি যেহেতু সবাই পান করে সেজন্য দ্রুত পানি পরীক্ষা করানো উচিৎ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. শামীম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষার্থীরা যে পানি ব্যবহার করেন তা মাটির অনেক গভীর থেকে তোলা হয়। তাই পানিতে কোনো ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে পানি সরবরাহের সারফেস লাইন ও মলমূত্র স্থানান্তরের সুয়ারেজ ড্রেন এক হওয়ার আশঙ্কা কম। তবে অধিকাংশ পানির ট্যাঙ্কের ঢাকনা না থাকায় সেখানে কিছুটা পানি দূষণ হলেও হতে পারে। কিছুদিনের মধ্যেই রসায়ন বিভাগের সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি পরীক্ষা করা হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৭
ডিআর/আরআর/বিএস