ভুয়া নিবন্ধনের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অভিযোগ তদন্তে নেমে এমন তথ্য পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব অভিযোগের জন্য তিন কর্মকর্তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ওরাকল ডাটাবেইজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে জালিয়াতি করে শিক্ষার্থীদের ভুয়া নিবন্ধন করেছিলো বোর্ডের কম্পিউটার সেল। এই জালিয়াতি ঠেকাতে মন্ত্রণালয় গঠিত আইটি স্পেশালিস্ট দিয়ে বছরে দুইবার কম্পিউটার সেল পরিদর্শন করার সুপারিশ এসেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আলমগীর বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) বাংলানিউজকে বলেন, সুপারিশগুলো বোর্ডকে পাঠানো হয়েছে বুধবার। ভবিষ্যতে যাতে অনিয়ম না হয় সেজন্য বোর্ড চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়েছে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বেড়া ফাজিল মাদ্রাসার ২০১৪ সালের নবম শ্রেণিতে নিবন্ধনের জন্য ১২৩ জনের নাম পাঠানো হয়। কিন্তু বোর্ড কর্তৃপক্ষ ১৪১ জনের নিবন্ধন করে। ১৮ জন বেশি নিবন্ধন করা ছাড়াও ১২৩ জনের মধ্যে ৭ জনকে বাদ দিয়ে নতুন করে ঢোকানো হয়। এভাবে মোট ২৫ জনের নামে ভুয়া রেজিস্ট্রেশন করা হয়।
অভিযোগের তদন্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব একেএম জাকির হোসেন ও উপসচিব সুবোধ চন্দ্র ঢালী তদন্ত করেন। তদন্তে নামলে রেজিস্ট্রেশনের কোনো তথ্য দিতে পারেনি বোর্ডের কম্পিউটার সেল।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, অতিরিক্ত শিক্ষার্থীরা ওই কলেজের শিক্ষার্থী না। পরীক্ষা কেন্দ্র বেড়া পাইলট হাই স্কুলে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এরা নবম শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষা দেয়নি।
নবম শ্রেণির চূড়ান্ত ও এসএসসি (ভোক) মিলে এসএসসি ভোকেশনালের ফল হয়। এই ২৫ জনের কেউ নবম শ্রেণির পরীক্ষা না দিলেও তাদের ট্রান্সক্রিপ্ট এসেছে। দশম শ্রেণিতে উঠে ফরম পূরণ করে পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি (ভোকেশনাল) পাস করেছে।
বেড়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কাজী আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, ২৫ জনের কেউই আমাদের ছাত্র ছিলো না। বোর্ড কিভাবে এমন জালিয়াতি করলো আমরা হতবাক!
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, অতিরিক্ত নিবন্ধিতদের কোনো তথ্য দিতে পারেনি কম্পিউটার সেল। অথচ নিয়মানুযায়ী তথ্যগুলো রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, জালিয়াতি করে লাখ লাখ টাকা নিয়ে একটা চক্র এ কাজ করছে। সংশোধনের নামে পুরোটাই পরিবর্তন করা হয়। তদন্ত করতে গিয়ে দেখি ‘ছেড়াবেড়া’ অবস্থা। এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কম্পিউটার সেল, আরও কয়েকজন। তবে তাদের শনাক্ত করা যায়নি।
অথচ বোর্ড থেকে রেজিস্ট্রেশন, ফরম পূরণ সবই হয়েছে। কিন্তু বোর্ড কারো স্থায়ী ঠিকানা জানে না। তারা ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী না। তাদের কাছে ট্রান্সক্রিপ্ট পৌঁছে গেছে- এগুলো প্রমাণিত।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এই চক্র সারা দেশে এমন কাজ করেছে। তদন্তের সময়ও সংশোধনের নামে অনিয়ম চলে। এর বিনিময়ে অর্থ লেনদেন হয়।
তদন্ত কমিটি দুই মাস আগে কাজ শুরু করে প্রতিটি রোলের অনুসন্ধান করে। সিস্টেম এনালিস্ট ৬/৭ বছর চাকরিতে থাকলেও দিনাজপুরে ‘দিনাজপুর প্লাজা’ নামে ৫০ কোটি টাকার একটি মার্কেট নির্মাণে কাজ শুরু করেছেন বলে জানা যায়। আর বোর্ডের শ্রমিক-কর্মচারী কয়েকজন নেতাও সুবিধাভোগী কালেক্টর হিসাবে কাজ করেন।
এ জন্য শাস্তি হিসেবে কম্পিউটার সেলের সিস্টেম এনালিস্ট একেএম শাসমুজ্জামান, সহকারী সিস্টেম এনালিস্ট হাসান ইমাম ও ওরাকল স্পেশালিস্ট ওমর ফারুককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া বোর্ড চেয়্যারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান, সচিব, পরিচালক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, উপ-রেজিস্ট্রার, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে সতর্ক করেছে মন্ত্রণালয়।
জালিয়াতি বন্ধে বুয়েটের নির্দেশনা পাঠানো, কম্পিউটার সেল, পরীক্ষা ও রেজিস্ট্রেশন এবং ঊর্ধ্বতনদের জন্য ১৭ দফা সুপারিশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৭
এমআইএইচ/এটি