ওয়াদুদ-উল-আলম বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলমের ছেলে। অভিযোগ রয়েছে, উপাচার্যের ছেলে বলেই তাকে ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগ কমিটি।
শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সভায় এ নিয়োগ অনুমোদন হতে যাচ্ছে বলেও জানা গেছে।
উপাচার্যের ছেলের নিয়োগ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বনাম প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তর্ক-বিতর্কের ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
আর বেফাঁস মন্তব্য করে এ বিতর্ক তৈরি করেছেন সহকারী রেজিস্ট্রার এহসান হাবিব। তিনি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘গরু’ বলে বিদ্রুপ করেছেন।
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের দুইজন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে মোট ২৬ জন আবেদন করেন। এর মধ্যে থেকে নয় প্রার্থীকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য কার্ড পাঠানো হয়। এই নয় প্রার্থীর মধ্যে উপাচার্যের ছেলে ওয়াদুদ-উল-আলমও ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) তাদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেয় নিয়োগ কমিটি। এর মধ্যে উপাচার্যের ছেলেকে নিয়োগের জন্য কমিটি সুপারিশ করেছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে খবর ছড়িয়ে পড়ে।
সূত্রমতে, নিজের ছেলে প্রার্থী হওয়ায় নিয়োগ কমিটিতে থাকতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তবে নিয়োগ কমিটির বাকি সদস্যদের বেশিরভাগই তার একান্ত অনুগত হিসেবে পরিচিত বলেও অভিযোগ উঠেছে।
তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নিয়োগ কমিটির সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন মোশাররফ শবনম বাংলানিউজকে বলেন, ‘যে উপযুক্ত ও ভালো ইন্টারভিউ দিয়েছেন তার জন্যই সুপারিশ করা হয়েছে। উপাচার্যের ছেলে যদি বেস্ট ক্যান্ডিডেট হয়ে থাকেন তবে তার জন্যই সুপারিশ করা হয়েছে। আর এখানে প্রাইভেট বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা কোনো ফ্যাক্টর নয়। শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সিন্ডিকেটের সভা। সেখানেই নিয়োগ অনুমোদন করা হবে। কার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে তা সিন্ডিকেটের সভার পরেই সবাই জানতে পারবেন। ’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বাংলানিউজকে অভিযোগ জানান, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা কোনো শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হয়েছেন এমন ঘটনা খুব একটা নেই। শুধু রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কিংবা প্রভাবশালী কারও খুঁটির জোরেই এমনটি হতে পারে।
সূত্রমতে, উপাচার্যের ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে এমন খবর সপ্তাহখানেক আগে থেকেই ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষা ছুটিতে বিদেশে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম তার ফেসবুক ওয়ালে একটি স্ট্যাটাসে সেই ইঙ্গিতই করেছেন।
তিনি লেখেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক নিয়োগ কোনভাবেই ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গলজনক নয়। সেই প্রার্থী যেই হোক...’
এর পরই পাল্টা স্ট্যাটাসে বেফাঁস মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার খন্দকার এহসান হাবিব।
গত মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে নিজের ফেসবুক ওয়ালে পাল্টা পোস্টে তিনি লেখেন- ‘বিষয়টা প্রাইভেট, পাবলিক না। বিষয়টা হলো মেধার। যোগ্যতার। আপনি পাবলিকের গরু নিবেন, নাকি প্রাইভেটের মেধা নিবেন?’
প্রথমবার দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এভাবেই টিপ্পনি কাটার পর আরেকটি পোস্টে লেখেন, ‘পাবলিকের অনেক গরু প্রতিদিন আমি আমার বাড়ির মাঠে ঘাস খেতে দেখেছি। ’
এই দুই স্ট্যাটাসের পর ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা সহকারী রেজিস্ট্রার এহসান হাবিবের এমন কটূক্তির প্রতিবাদে তার পদত্যাগ দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে নামেন এবং উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রাজ্জাক অনিক বাংলানিউজকে বলেন, সহকারী রেজিস্ট্রার এহসান হাবিব বিএনপি-জামায়াতপন্থি। তিনি কর্মচারী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিএনপির প্যানেল থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়েও কটূক্তিমূলক কবিতা প্রকাশ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জাহিদুল কবীর বাংলানিউজকে জানান, সহকারী রেজিস্ট্রারের ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে এহসান হাবিবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি সোহেল রানা ও সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার সরকার তদন্ত কাজ সুষ্ঠু করার জন্য এহসান হাবিবকে বর্তমান পদ থেকে অব্যাহতির দাবি জানিয়েছেন।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ করে যে কেউ আবেদন করতে পারেন। আমার ছেলে আবেদন করার কারণেই ইংরেজি বিভাগের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আমি নেই। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে পারবে না এমন নিয়মও কোথাও নেই। স্বচ্ছতার ভিত্তিতেই সবকিছু করা হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৭
এমএএএম/আরআর/এমজেএফ