শনিবার (ফেব্রুয়ারি ১৮) রাজধানীর স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান সরকারি ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় বিষয়টি নিয়ে তাদের ভাবনা।
শিক্ষার্থীরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের অন্যতম স্বানামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী তমা বাংলানিউজকে বলেন, ঢাবির অধীনে ইডেন কলেজ চলবে এটা আমরা শুনেছি। মাথায় নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। আমাদের পড়াশোনার পলিসি কেমন হবে- এসব নিয়ে। কয়েকদিন আগে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলো। তাদের ভর্তি ফি, পড়াশোনার খরচ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো। এছাড়া সুযোগ-সুবিধার অভাব থাকায় তারাও পুরোপুরি ঢাবির অধীনে যেতে চায়। পরবর্তীতে আমাদের এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয় কিনা- এজন্য কনফিউশনে রয়েছি।
কলেজ প্রসাশন সূত্রে জানা যায়, অধিভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সনদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে দেওয়া হয়। শিক্ষার মান বাড়ানোর বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হতে পারে। পরীক্ষা ও শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি ঢাবির নিয়ন্ত্রণে হবে। বেতন ফি কীভাবে নির্ধারণ হবে এ বিষয়ে এখনই বলা সম্ভব নয়।
ইডেন কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জাহিদা মেহেরুন্নেসা বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার মান ভালো, স্বাভাবিকভাবে অধিভুক্ত কলেজগুলোতেও এর প্রভাব পড়বে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারটা হচ্ছে, কতগুলো সিলেবাস, কোর্স ও পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপিয়ে দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এতে পড়াশোনার মান ধরে রাখা সম্ভব নয়।
‘পরীক্ষা, সিলেবাস, ক্লাসসহ পুরো শিক্ষা কার্যক্রম যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো হবে। আর ঢাবির সনদ যে কোনো শিক্ষার্থীর জন্য কাম্য। তবে এখন তো কেবল সিদ্ধান্ত হয়েছে, নীতিমালা হলে সব পরিষ্কার বোঝা যাবে। ’
১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে দেশের অনেক সরকারি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হতো। একটা সময় ঢাবির পক্ষে এসব কলেজ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে তীব্র সেশনজট দেখা দেয়। এ অবস্থা থেকে বের হতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার করা হয়।
সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, একটা সময় এই কলেজগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিলো। নিয়ন্ত্রণ করতে পরছিলো না বলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। এখন আবার ঢাবির অধীনে যাচ্ছে। এই জায়গায় একটু সংশয় থেকেই যায়। এক ইডেনেই ৪৫ হাজার শিক্ষার্থী। এতো শিক্ষার্থী ম্যানেজ করা কষ্টকর। সুষ্ঠু পরিকল্পনা করে যদি এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তাহলে অবশ্যই সম্ভব। আর হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে একটা ধ্বস নামতে পারে।
তিনি বলেন, আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও সেশনজট ছিলো। এখন এ জায়গা থেকে বের হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও সেশনজট কমানোর চেষ্টা করছে। আগামী দু’এক বছরের মধ্যে তারা পুরোপুরি বের হতে পারতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি এবার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তাহলে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় নষ্ট হবে। আমরা জাতি হিসেবেও পিছিয়ে যাবো।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। এর ফলে কলেজগুলোর ভর্তি পরীক্ষা, পাঠ্যসূচি ও পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিচালিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৭
এমসি/এএ