এমন ফলাফলে আনন্দের জোয়ার বইছে নাটোর শহরের মল্লি¬কহাটি এলাকার রুহুল আমিনের বাড়িতে।
চলতি বছরের কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ট্রেড থেকে এইচএসসি (ভকেশনাল) পরীক্ষায় অংশ নেন রুহুল আমিনের ছেলে রাকিব আমিন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে এসএসসি পাসের পর শাহনাজের বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর পড়ালেখার প্রবল ইচ্ছে থাকলেও স্বামীর অসচ্ছল সংসারে আর এগোতে পারেননি। এক পর্যায়ে তার কোল জুড়ে আসে এক ছেলে আর এক মেয়ে।
বেকার স্বামীর অসহায়ত্ব ও দুই সন্তানের ভরণ-পোষণের চিন্তা করে স্থানীয় ক্লিনিকে চাকরি নেন শাহনাজ বেগম। চাকরি করতে গিয়ে ফের পড়ালেখার প্রয়োজন অনুভব করেন। দীর্ঘ ২২ বছর পর নাটোর মহিলা কলেজে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে বিএম শাখায় কম্পিউটার অপারেশন ট্রেডে ভর্তি হন।
তার দেখাদেখি ফুপাতো বোন মমতা হেনারও পড়াশোনার ইচ্ছে জাগে। ১৯৯৩ সালে এসএসসি পাস করার ২৪ বছর পর আবারো হাতে তুলে নেন বই। দুই বোন একই কলেজে একই ট্রেডে ভর্তি হয়ে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন।
রোববার ( ২৩ জুলাই) প্রকাশিত এইচএসসির ফলাফল প্রকাশের পর মা-ছেলে ও খালার একসঙ্গে পাসের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের একে অন্যকে মিষ্টি খাইয়ে আনন্দ-উল্লাস করতে দেখা গেছে। এক নজর দেখতে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন তাদের বাড়িতে।
শাহনাজ বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ ফলাফলের নেপথ্যে ইচ্ছাশক্তি কাজ করেছে। অনেক কষ্ট করে ছেলে-মেয়েকে বড় করার পর নিজেরও মনে হয়েছে, পড়াশোনা দরকার। কিন্ত দুই সন্তানের পর নিজের পড়ালেখার খরচ চালানোর সামর্থ্য ছিলো না। পড়াশোনার ইচ্ছার কথা শুনে বাবা হাজী শাহজাহান আলী ও ভাই কাউসার আলী এগিয়ে আসেন’।
‘তারা বই ও ফরম পূরণের টাকা দেন আর স্বামী দেন অনুপ্রেরণা। এভাবেই আমার অর্জন আজকের ফলাফল। আজ থেকে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের আকাঙ্খা আরো বেড়ে গেলো। সুযোগ পেলে আরও পড়াশোনা করতে চাই’।
মমতা হেনা বলেন, ‘নতুন করে পড়াশোনা করতে গিয়ে ভাই ও মেয়ের কাছ থেকে উৎসাহ পেয়েছি। আর বাকিরা করেছেন উপহাস ও বিদ্রুপ। পড়তে গিয়ে আর্থিক টানাপড়েন হয়েছে। অন্যদের মতো প্রাইভেট পড়তে পারিনি। দুই বোন মিলে একসেট বই কিনে পড়েছি। বড় মেয়ের টাকায় ফরম পূরণ করেছি’।
রাকিব বলেন, ‘অর্থিক সমস্যায় বই কিনতে না পেরে ধার করতে হয়েছে। মা আমার চেয়ে ভালো ফলাফল করলেও কোনো কষ্ট নেই। বরং আনন্দ এজন্য যে, মা ও খালা এতোকিছুর পরও প্রমাণ করতে পেরেছেন, ইচ্ছা থাকলেই যেকোনো কিছু করা যায়’।
মেয়ে, ভাগিনি ও নাতির ভালো ফলাফলের সংবাদে খুশি শাহনাজ বেগমের বাবা হাজী শাহজাহান আলীও। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘জীবন সায়াহ্নে এসে এমন ঘটনা আমাকে গর্বিত করেছে। মেয়ে ও নাতির জন্য সামর্থ্যমতো সবকিছু করবো’।
রাকিব আমিনের বাবা রহুল আমিন বলেন, ‘একজন স্বামী ও বাবা হিসেবে আমি গর্বিত। ছেলের সঙ্গে মায়ের পড়া নিয়ে ভাবনা ছিল, তারা পারবেন কি-না। অথচ সব শঙ্কা দূর করে আর দশজনের মতো মাথা উঁচু করেছেন’।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৭
এএসআর