কী কারণে এই ফল বিপর্যয়? সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, আপাতদৃষ্টে দুই কারণে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ফলাফলে ধস নেমেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ দু’টি কারণ হলো- ইংরেজি বিষয়ে দক্ষ শিক্ষক সংকট এবং নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা আয়োজন।
ফল বিপর্যয়ের কারণে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের অবস্থান এবার দশমে পৌঁছে স্থান হয়েছে তলানিতে। শুধু ইংরেজি বিষয়েই ৩৭.৯৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী ফেল করায় এ ফল বিপর্যয় ঘটছে বলে বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এ বিষয়ে আলাপ করলে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল খালেক বাংলানিউজকে বলেন, বোর্ডের আওতায় শহরের কলেজ ছাড়া মফস্বল পর্যায়ে অধিকাংশ কলেজে দক্ষ ও ভালো মানের শিক্ষক সংকট রয়েছে। এ কারণে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় ৩০ শতাংশের বেশি ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে মানবিক ও বিজ্ঞান বিভাগের ফলে। তাই কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশে নেমে এসেছে।
এ বছর সবচেয়ে খারাপ ফলাফল হয়েছে ইংরেজি বিষয়ে। সব মিলিয়ে ৫১.৮ শতাংশ ফেলের মধ্যে কেবল ইংরেজি বিষয়েই ফেল করেছে ৩৭.৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। গত বছরের তুলনায় এ বছর ইংরেজিতে ২১.৪৮ শতাংশ বেশি শিক্ষার্থী ফেল করেছে।
বোর্ডে এ বছর শতভাগ পাশ করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭টি এবং শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩টি।
চলতি বছর এ বোর্ডে মোট এক লাখ ৩৭২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। যার মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ২০ হাজার ১৬৪ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেছে ১৪ হাজার ৬৬৩ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৫৭ জন। মানবিকে ৪২ হাজার ৩৯৩ জনের মধ্যে কৃতকার্য হয়েছে ১৬ হাজার ২৭২ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৯ জন এবং বাণিজ্যে ৩৭ হাজার ৮১৫ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেছে ১৮ হাজার ৭৬৯ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮২ জন শিক্ষার্থী।
গত পাঁচ বছরের কুমিল্লা বোর্ডের এইচএসসি ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় পাশের হার ছিল ৬১.৪১ শতাংশ, ২০১৪ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৭০.১৪ শতাংশ, ২০১৫ সালে আবার কমে দাঁড়ায় ৫৯.৮০ শতাংশ, ২০১৬ সালে আবার তা বেড়ে হয় ৬৪.৪৯ শতাংশ এবং চলতি বছর সব রেকর্ড ভেঙে দিয়ে তা নেমে যায় ৪৯.৫২ শতাংশে।
গত পাঁচ বছরে কুমিল্লা বোর্ডে শতভাগ ফেল করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা একটিও না থাকলেও এবার তিনটি প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে। কলেজগুলো হলো- ফেনী সদরে অবস্থিত বেগম শামসুন্নাহার গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে অবস্থিত ফজু মিয়ারহাট হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার উপার মডেল কলেজ।
বেগম শামসুন্নাহার গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১৪ জন, ফজু মিয়ারহাট হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে চারজন ও উপার মডেল কলেজ থেকে অংশ নেয় ১৭ জন পরীক্ষার্থী।
আর শতভাগ পাশ করা আট প্রতিষ্ঠান হলো কুমিল্লার ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ, ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ, চাঁদপুরের কচুয়া ড. মনসুর উদ্দিন মহিলা কলেজ, কুমিল্লার বরুড়ার ছোট তুলাগাঁও মহিলা কলেজ, চাঁদপুরের কচুয়ার নিন্দুপুর এম কে আলমগীর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, দেবিদ্বারের কুমিল্লা মডেল কলেজ, চাঁদপুরের দি কার্টার একাডেমি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইউনাইটেড কলেজ।
এসব বিষয়ে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল খালেক বলেন, কুমিল্লা বোর্ডের আওতাভুক্ত সদরের কলেজগুলোতে ফল ভালো হয়েছে। বিভিন্ন কারণে গ্রামের কলেজগুলোর ফল খারাপ হয়েছে। ফল খারাপের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সমস্যাগুলো উৎঘাটন করার পর তা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৭
এইচএ