সর্বশেষ ২০০২ সালের ২৮ মার্চ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। সমাবর্তন এখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি।
চতুর্থবারের মতো সমাবর্তনের স্বাদ পেতে যাচ্ছে ইবি শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানায়, সমাবর্তন উপলক্ষে ইতোমধ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সমাবর্তনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে ফাইল প্রক্রিয়া চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেলে নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে আগাম সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শুরু করা হয়েছে। সমাবর্তনের অতিথিসহ আসা সবার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ক্যাম্পাস হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে গাছ লাগালো, স্থাপনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নসহ নানা রকম কাজ চলছে। একই সঙ্গে একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন ভবন সংস্কারের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের স্নাতক-স্নাতকোত্তর ডিগ্রির মূল সনদ দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর কাজ শুরু করেছে।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ কে আজাদ লাভলু বাংলানিউজকে বলেন, উপাচার্য সমাবর্তনের বিষয়টি আমাদের অবহিত করেছেন। উপাচার্যের নির্দেশে আমরা সনদপত্র মুদ্রণের কাজ শুরু করে দিয়েছি এবং এ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এদিকে দীর্ঘ বিরতির পর আবার সমাবর্তনের আভাস পেয়ে খুশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন পর প্রাণের দাবি পূরণ হওয়ার পথ সুগম করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তারা।
অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু হুরাইরা বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিটি সমাবর্তন বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের দরবারে নতুন করে পরিচিত করে। সমাবর্তন মানেই অতীত ও বর্তমানের মিলনমেলা। আমরা থাকা অবস্থায় সমাবর্তন হবে শুনে ভালো লাগছে। আশা করছি ক্যাম্পাসে স্মরণীয় কিছু মুহূর্ত কাটাতে পারবো।
অন্যদিকে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অভিনন্দন জানিয়েছে সাবেক শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি প্রশাসনের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এ বছরের শেষের দিকেই যেন সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় এবং পরে এ ধারা যেন অব্যাহত থাকে।
২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের রাষ্ট্রনীতি ও লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আখতারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হওয়ার পর সবারই প্রত্যাশা থাকে মূল সনদ পাওয়ার। দীর্ঘদিন ধরে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় তা আর সম্ভব হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেওয়া সময় অনুযায়ী এ বছরই যেন সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়। একইসঙ্গে মূল সনদের জন্য চাকরি জীবনে আমরা যে মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছি আমাদের পরবর্তীরা যেন এ মানসিক বিপর্যয়ে না পড়ে। এ জন্য প্রতিবছর না হলে ও দুই বছরে অন্তত একবার হলেও সমাবর্তন অনুষ্ঠান করার দাবি জানাচ্ছি।
সমাবর্তনের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক রাশিদ আসকারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সমাবর্তন বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় একাডেমিক উৎসব। বর্তমান প্রশাসন সমাবর্তন অনুষ্ঠানের জন্য কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে আমরা দ্রুতই নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে পারবো।
১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৪ বছর পর ১৯৯৩ সালের ২৭ এপ্রিল প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম সমাবর্তনের সাত বছর পর ১৯৯৯ সালের ৫ ডিসেম্বর দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। পরে এর তিন বছর পর ২০০২ সালের ২৮ মার্চ তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৫ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৭
আরবি/আরএ