ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

অনিয়মের শিকার ঢাবির মেধাবীরা বিদেশমুখী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০১৭
অনিয়মের শিকার ঢাবির মেধাবীরা বিদেশমুখী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০০৭-৮ সেশনের শিক্ষার্থী মাহবুবুল হক ওসমানী। এ বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছিলেন তিনি। অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি হিসাবে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে গ্রহণ করেছেন স্বর্ণপদকও। পড়ালেখা শেষ করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ও কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেছিলেন। অথচ তুখোড় এই মেধাবীকে নিয়োগ দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। হতাশ হয়ে এক পর্যায়ে তিনি দেশ ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন কানাডায়।

শুধুমাত্র মাহবুবুল হক ওসমানী নন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে বিদেশ চলে যাচ্ছেন ‌আরো অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক খন্দকার আবু তোফায়েলের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।

বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ না করার বিষয়টি উল্লেখ করে হাইকোর্টে এ নিয়ে রিট করেছিলেন একই বিভাগের ভালো ফলাফলকারী মিরাজ সৌরভ। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা রিট না করেন না। তারা বরং মূল্যায়িত না হবার বঞ্চনা বুকে পুষে বিনা প্রতিবাদে নীরবে বিদেশমুখি হচ্ছেন। সেখানে গিয়েই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করছেন।

আপিল বিভাগের রায়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, আগে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা প্রথম শ্রেণীতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হতেন তাদেরকেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হতো। কিন্তু এখন সেটি আর হচ্ছে না। এটা অ্যালারমিং (অশনিসংকেত)। বর্তমানে শিক্ষক নিয়োগে ঢাবি তার আগের ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, অত্যন্ত ভালো ফলাফল করেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করার সুযোগ না পেয়ে মেধাবীদের বিদেশ চলে যাওয়াটা খুবই দূর্ভাগ্যজনক। এটি বিশ্ববিদ্যালয় তো বটেই, দেশের জন্যও ক্ষতিকর। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন মানসম্মত গবেষণাধর্মী কাজও কমে গেছে। মেধাবীদের এভাবে বিদেশ চলে যাওয়া একসময় আমাদের পুরো জাতিকেই ভোগাবে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, দু্‌ই কারণে মেধাবীদের আমাদের দরকার। প্রথমত, আমাদের দেশের উন্নয়নে মেধাবীদের প্রয়োজন রয়েছে। দ্বিতীয়ত, মেধাবী শিক্ষার্থীরা তৈরি হচ্ছে দেশের অর্থে। দেশের সম্পদের ব্যবহার করে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ না পেয়ে তাঁরা যদি বিদেশমুখি হয়, তাহলে সেটা দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। শিক্ষক নিয়োগে অবশ্যই মেধাবীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। তা না করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নয়নও হবে না।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০০৩-২০০৪ সেশনের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হওয়া শিক্ষার্থীদের কাউকেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়নি। একারণে এদের মধ্যে দুজন এরই মধ্যে  বিদেশে চলে গেছেন। শিক্ষক নিয়োগে মেধাবীদের প্রাধ্যন্য না দেয়াটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের লঙ্ঘন হিসেবেই দেখছেন শিক্ষাবিদরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৭
এসকেবি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।