খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৭ আগস্ট (সোমবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১তম একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং এ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নতুন এ নিয়ম অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী যদি কোনো কারণে আবারো পরীক্ষা দেয় বা মান উন্নয়নের জন্য পরীক্ষা দিয়ে ‘বি প্লাস’ এর বেশি মার্ক তুলতে পারে, তবুও তাকে সর্বোচ্চ ‘বি প্লাস’ এর বেশি না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বাংলা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইকরামুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একজন শিক্ষার্থীর শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক, আর্থিক অথবা অন্য যেকোন সমস্যা থাকতেই পারে। শিক্ষার্থীরা মানুষ, যন্ত্র নয়। তাছাড়া, যে প্রশ্নে নিয়মিত ব্যাচের সবাই পরীক্ষা দেবে সেই প্রশ্নে মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিলে মানোন্নয়নে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীকে জিপিএ ‘৩.২৫’ এর বেশি না দেয়ার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। চলমান সেমিস্টারের সাথে তাল রেখে মানোন্নয়নের জন্য পড়াশোনা করে কোন শিক্ষার্থী ভালো করতে পারলে কেন তাকে সর্বোচ্চ জিপিএ দেয়া হবে না? মেধা ধ্বংসকারী এমন সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। ’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, আসলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের যে অবস্থা তা দেখে মাঝে মাঝেই খুব হাসি পায়। মনে হয় তারা শিক্ষক হয়ে জন্ম নিয়েছেন। কখনো শিক্ষার্থী ছিলেন না। সত্যিকথা বলতে, খবর নিয়ে দেখেন জগন্নাথের শিক্ষদের অনেকেই ইম্প্রুভমেন্ট দিয়ে শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। তারা আজ সেটিও ভুলে গেছেন।
জবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমীন বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী যে রাতদিন কেবল পুঁথিগত বিদ্যা অর্জন করবে তা অবশ্যই নয় । বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ হয়ে ওঠে। এই সকল শিক্ষার্থীই একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণতা দান করে। আর এ সকল সৃজনশীল কাজে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় ভালো মত পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে না। তাছাড়া কেউ শারীরিক অসুস্থতা, কেউবা পারিবারিক সমস্যার কারণে অনেক সময় সামর্থ্য অনুযায়ী ফল করতে পারে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইম্প্রভমেন্ট বা পুনঃ পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু, সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ম করা হয়েছে যে, পুনঃ পরীক্ষা যত ভালই হোক না কেন, ৩.২৫ এর বেশি নম্বর দেওয়া হবে না । আমরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাই । আমরা মনে করি এই সিদ্ধান্ত সৃজনশীলতার পথে অন্তরায় এবং স্বৈরাচারী । এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে শিক্ষার্থীরা এই অন্যায় সিদ্ধান্ত বাতিল করাতে বাধ্য করবে। '
এ সময় শিক্ষার্থীদের রাজপথে নামতে বাধ্য না করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক জাকারিয়া মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, এর উদ্দেশ্য, কোনো অনিয়মিত শিক্ষার্থী যেন নিয়মিত শিক্ষার্থীর চেয়ে ভালো ফলাফল করতে না পারে। ইম্প্রুভমেন্ট থাকলে অনেকেই সুযোগ নেয়। এতে একজন অনিয়মিত শিক্ষার্থী বেশি সময় নিয়ে ভালো রেজাল্ট করে। ফলে একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী অনিয়মিত শিক্ষার্থীর কাছে হেরে যাচ্ছে। এ নিয়মটি ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে কার্যকর হওয়ার আগেই জবির রসায়ন বিভাগে একটি ব্যাচে এ নিয়ম অনুযায়ী ফলাফল দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে কমিটির সদস্য সচিব একেএম আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘এরকম একটি নিয়ম আমরা গত একাডেমিক মিটিং এ পাশ করেছি। এই সিদ্ধান্ত ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স থেকে কার্যকর হবে। তবে অনার্স এ কোন ব্যাচ থেকে বা কোন শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যকর হবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। পরবর্তী মিটিং এ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
রসায়ন বিভাগের সম্মান শ্রেণির সাম্প্রতিক একটি ফলাফলে নিয়মটি কার্যকর হওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, রসায়ন বিভাগের একটি ফলাফলে এটি কার্যকর করা হয়েছে তবে এটা সংশোধন যোগ্য। যেহেতু এটা এখনো কার্যকর হয়নি তাই এরকম হয়ে থাকলে তা সংশোধন করা হবে। ’
জবি রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘একাডেমিক এ নিয়মটি গত ৪১ তম একাডেমিক কাউন্সিলে অনুমোদন হয়েছে তবে আমি এখনো কোনো বিভাগে নোটিশ পাঠাইনি। রসায়ন বিভাগের রেজাল্ট নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমি বলতে পারছি না । খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। এরপর পরবর্তী একাডেমিক কাউন্সিলে এটা পাশ হয়ে সিন্ডিকেটে পাশ হবে এরপর এটি কার্যকর হবে। কবে থেকে এটা কার্যকর হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যকর হতে পারে। ’
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘন্টা, আগস্ট ১১, ২০১৭
ডিআর/আরআই