এদিকে শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত এক পক্ষীয় দাবি করে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষক সমিতি। শিক্ষকের প্রতি অন্যায়ভাবে ব্যক্তিগত ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে উপাচার্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দাবি করে বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) বিকাল ৫টা থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষক সমিতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃবৃন্দরা অবস্থান নিয়েছে।
কার্যালয় থেকে বাসভবনে যাওয়ার জন্য জিপে উঠলে ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য শিক্ষক নেতারা উপাচার্যের জিপ ঘিরে ধরেন। রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষকরা উপাচার্যের জিপ ঘিরে রেখেছেন। এদিকে ছুটি প্রত্যাহার না করা হলে শিক্ষক সমিতি কঠোর আন্দোলনে যাবে বলে সমিতির সভাপতি জানান।
বৃহস্পতিবার (আগস্ট ১৭) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো: মজিবুর রহমান মজুমদার স্বাক্ষরিত পৃথক দুইটি অফিস আদেশ সূত্রে জানা যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। উক্ত কর্মসূচি চলাকালীন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া কর্তৃক তাঁর বিভাগের ১ম ব্যাচের ক্লাস নেয়াকে কেন্দ্র করে বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাকে ২০ আগস্ট থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটি দেয়া হয়।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ডা: মোসলেহ উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো: আবু তাহেরকে সদস্য ও সহকারী রেজিস্ট্রার মো: আমিরুল হক চৌধুরীকে সচিব করে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
জানা যায়, গত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে ক্লাস নেয়ার অভিযোগে তুলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার বহিষ্কারের দাবিতে মঙ্গলবার উপাচার্যকে স্মারকলিপি প্রদান করে শাখা ছাত্রলীগ। বুধ ও বৃহস্পতিবার তার বহিষ্কারের দাবিতে প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবন গুলোতে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ করে। এতে দুই দিনে ১৯টি বিভাগে ক্লাস অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। বুধবার ১১টি ও বৃহস্পতিবার ৯ টি সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা জানান, ওই শিক্ষক তখন ক্লাস নেননি। পরীক্ষা সংক্রান্ত একটি বিষয় বুঝিয়ে দিতে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলছিলেন তিনি।
অভিযুক্ত শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলো। কিন্তু আমার সাথে প্রশাসন এক বারের জন্যও কথা বলেনি। ’ তদন্ত না করে কিভাবে এ সিদ্ধান্ত নেয় এমন প্রশ্ন এ শিক্ষকের।
এদিকে শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের বাধ্যতামূলক ছুটির সিদ্ধান্ত জানার সাথে সাথে ছুটি প্রত্যাহারের দাবিতে বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষক সমিতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
পরে সন্ধ্যা ৬টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আলী আশরাফ কার্যালয় থেকে বাসবভনে যাওয়ার জন্য জিপে উঠলে তার জিপ ঘিরে ধরেন শিক্ষক নেতারা। তারা মাহবুবুল হকের ছুটি প্রত্যাহারের দাবিতে উপাচার্যের জিপের সামনে ও পিছনে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের সাথে শিক্ষক সমিতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতাদের সাথে বাকবিতন্ডা হয়।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আবু তাহের বলেন, ‘ঐ শিক্ষকের উপরে উপাচার্যের ব্যক্তিগত ক্ষোভ রয়েছে। দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে কথা বলায় মাহবুবুল হকের বিরুদ্ধে কোন প্রকার যাচাই বাছাই ছাড়া এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উপাচার্য। তিনি স্বেচ্ছাচারিতার র্শীষে উঠে এ হীন কাজ করেছেন। ’
ঐ বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিযুক্ত শিক্ষকের সাথে কথা বলে প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার মো: মুজিবুর রহমান বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনা করে উপাচার্য এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। ’
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৭
আরআই