জুলাই, ২০১৭ মাসে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় খুলনা জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে স্কুল চলাকালে এ জেলায় কোনো কোচিং চলতে পারবে না।
শনিবার (২৮ আগস্ট) এ ব্যাপারে খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে সবাইকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়।
রোববার (২৭ আগস্ট) জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশনায় জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেন ও ক্ষেমালিকা চাকমা জেলা শিক্ষা অফিসের প্রতিনিধি ও পুলিশ সদস্য নিয়ে মহানগরীর বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করেন।
জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, অভিযানকালে দৌলতপুরে অবস্থিত ইংলিশ টিউটোরিয়াল হোম সেন্টারে প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী পাওয়া যায়। কিন্তু শিক্ষক অভিযানের নাম শুনে সেখান থেকে পালিয়ে যান।
প্রায় ৪৫ মিনিট অপেক্ষা করেও শিক্ষককে হাজির করা যায়নি। পরে শিক্ষার্থীদের বের করে কোচিং সেন্টারটি তালাবদ্ধ করে নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয় যে, জেলা প্রশাসনের অনুমোদন ব্যতীত সেটি চালু করা যাবে না।
অভিযানে সামিট কোচিং, বানরগাতি বাজার ও করোনেশন স্কুলের সামনে ইন্টারএইড কোচিং তালাবদ্ধ করা হয়। চিলড্রেন ভয়েস স্কুলে অভিভাবকদের সাথে মতবিনিময় করা হয়। সকল অভিভাবকই জানান যে, স্কুল চলাকালে তাদের সন্তানকে কোনো কোচিংয়ে দেবেন না এবং এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনকে তারা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিতকরণে এবং স্কুল চলাকালীন সময়ে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে জেলা প্রশাসনের এ অভিযান চলবে বলেও জানান জাকির হোসেন।
এদিকে প্রশাসন কর্তৃক কোচিং শিক্ষা ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে কোচিং শিক্ষকদের সংগঠন খুলনা কোচিং সেন্টার অ্যাসোসিয়শন ও খুলনা কোচিং ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।
দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন খুলনা কোচিং ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শ্যামল কুমার রায়।
লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেন, কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় স্থানীয় প্রশাসন কোনো প্রকার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষিত বেকারের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। খুলনায় কর্মসংস্থানের তেমন কোনো সুযোগ না থাকায় এখানে শিক্ষিত বেকারদের একমাত্র অবলম্বন হলো বাসায় বাসায় গিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পাশাপাশি বিভিন্ন কোচিংয়ে পাঠদান করানো।
কোচিং সেন্টারগুলো কখনো কোনো অবস্থাতেই বিদ্যালয়ের প্রতিপক্ষ বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। বরং কোচিং সেন্টারগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে। যার ফলশ্রুতিতে খুলনার শিক্ষার্থীরা পিইসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসিসহ সকল বোর্ড পরীক্ষায় অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করছে বলে দাবি করেন তিনি।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়ে কোচিং শিক্ষকরা বলেন, আমরা কোচিংয়ের জন্য একটি নীতিমালা চাই। তার আলোকে কোচিং পরিচালনা করতে চাই। এর জন্য সরকারের সহযোগিতা চাই।
খুলনা কোচিং সেন্টার অ্যাসোসিয়শনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কে. এম. এ. জলিলের সঞ্চালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশনের নেতা শ্যামা প্রসাদ রায়, অসিত কুমার, নির্মল কুমার রায়, শাহরিয়ার শামীম, রতন পাল, মুকুল রায়, জাহাঙ্গীর ইসলাম, বিজয় কৃষ্ণ সরকার, বিশ্বজিৎ নন্দি অপু, হিমাংশু কুমার বৈরাগী, সরজিৎ কুমার মন্ডল।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৭
এমআরএম/এমজেএফ