শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এজন্য কারিগরি শিক্ষা এবং উদ্ভাবনে অভিভাবক এবং পুঁজিপতিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন মিলনায়তনে ‘স্কিলস কম্পিটিশন-২০১৭’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, পৃথিবীর সকল উন্নত রাষ্ট্রে মোট শিক্ষার্থীর ৬৫ শতাংশের ওপরে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত। অথচ আমরা যখন ক্ষমতায় আসলাম, এদেশে কারিগরি শিক্ষার্থী ছিল ১ শতাংশেরও কম! গত কয়েক বছরে সেটা ১৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। হয়েছে ১৪টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তাই এখন আর কারিগরি শিক্ষা পিছিয়ে নেই। তবে শিক্ষার্থী ও বিনিয়োগের অভাব রয়েছে। দক্ষ শিক্ষকেরও অভাব রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বড় বড় সার্টিফিকেটধারী বানাতে চান। কিন্তু কোনো উদ্ভাবক বানাতে চান না। অথচ এটাই সবচেয়ে বেশি জরুরি। নতুন নতুন উদ্ভাবন ছাড়া দেশে এগুতে পারে না। এছাড়া এর মাধ্যমে আয়ও ভাল হয়। তাই আমাদের দরকার বেশি বেশি উদ্ভাবক, আবিষ্কারক। তবে এই উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হচ্ছে বিনিয়োগ। তাই বেসরকারি উদ্যোক্তা, পুঁজিপতি, ব্যবসায়ী এবং কারখানা মালিকদের এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন নতুন উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে।
‘আপনারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আপনাদের স্বার্থেই বিনিয়োগ করুন। কেননা, নতুন উদ্ভাবনের ফলে আপনাদর উৎপাদন বেড়ে যাবে। লাভবান আপনারাই হবেন। অন্যদিকে দেশের মেধাসত্ব বাড়বে। ’-যোগ করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, আগে যখন ৫ কোটি মানুষ ছিল তখনও দুর্ভিক্ষ হতো। আর এখন ১৬ কোটি মানুষ। কিন্তু কষ্ট করতে হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগে আর দুর্ভিক্ষ হয় না। এর কারণ আমাদের কৃষক ও কৃষি বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন উদ্ভাবন। তাই কারিগরি শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অশোক কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ডিপার্টমেন্ট অব পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেডমার্কস’র রেজিস্ট্রার মো. সানোয়ার হোসেন, বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র অপারেশন্স অফিসার ড. মো. মোখলেছুর রহমান প্রমুখ।
ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, টমাস আলভা এডিসন এক হাজারেরও বেশি আবিষ্কার করেছিলেন। যেগুলো তার নিজের নামেই পেটেন্ট করা আছে। তিনি তেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেননি। স্কুলে গিয়েছেন মাত্র ১২ সপ্তাহ। কিন্তু কারিগরি উদ্ভাবনী তাকে পেয়ে বসেছিল। বৈদ্যুতিক বাল্ব তার উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার। তাই কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব অনেক।
তিনি বলেন, আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগে খরচ বহন করতে পারতো না। এখন তারা বিভিন্ন আবিষ্কারের মাধ্যমে রাজস্ব দেয় সরকারকে। আমাদের এখানেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্ভাবন করতে হবে। যেগুলোর উদ্ভাবক থাকবে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু পেটেন্ট বা স্বত্ব পাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে বিভিন্ন বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসতে হবে।
আলোচনা শেষে মন্ত্রী প্রতিযোগিতার ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন। একই সঙ্গে আগামী ২১ অক্টোবর থেকে জাতীয় পর্যায়ে স্কিলস প্রতিযোগিতা আয়োজনের ঘোষণা দেন। এরপর তিনি দেশের বিভিন্ন ইনস্টিটিউট থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া ৩০টি প্রজেক্ট ঘুরে ঘুরে দেখেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৪ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
ইইউডি/আরআই