দুদক সূত্রে জানা যায়, কমিশনে ২০১৬ সালের শেষের দিকে ঢাকা মহানগরীর নামি-দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি বাণিজ্য, কোচিং বাণিজ্য ও নিয়োগ বাণিজ্যের নামে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ আসে। কমিশন তাৎক্ষণিকভাবে পরিচালক মীর মোঃ জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি বিশেষ টিম গঠন করে।
প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীর বেশ কয়েকটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন এই কমিটি। পরিদর্শনকালে দেখা যায়, অনেক শিক্ষক পাঠদানে মনোযোগী না হয়ে প্রাইভেট পড়ানোর কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। যার মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকাধীন গভ:মেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, ধানমন্ডি গভ:মেন্ট বয়েজ হাইস্কুল, শেরে বাংলা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, গণভবন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ধানমন্ডি কামরুনন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়সহ ২৪টি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫২২ জন শিক্ষক রয়েছেন। যারা ১০ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ বছর পর্যন্ত একই বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। এসব শিক্ষককে সরকারি নীতিমালা, নির্দেশিকা অনুসারে বদলি করা হয়নি বা হচ্ছে না।
এদিকে শিক্ষা প্রশাসন দুদকের টিমকে জানিয়েছে, সরকারি নীতিমালা মোতাবেক একই কর্মস্থলে ৩ বৎসরের অধিক সময় অতিবাহিত হলেই অন্যত্র বদলি করার নির্দেশনা রয়েছে। এই বদলি না করার মূলে রয়েছে চাপ প্রয়োগ, তদবির ও অনৈতিক আর্থিক লেন-দেন। কিছু শিক্ষক কোচিং বা প্রাইভেট বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে বছরের পর বছর ঢাকার একই বিদ্যালয়ে অবস্থান করছেন। একই কর্মস্থলে বছরের পর বছর থাকার ফলে এ সব শিক্ষক প্রাইভেট পড়ানোর নামে কোচিং বাণিজ্য গড়ে তুলেছেন এবং এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছেন যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রাইভেট পড়তে বাধ্য হয়।
প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, কোনো কোনো বিদ্যালয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ইংরেজি শিক্ষক বা গণিত শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন. আবার কোনো কোনো বিদ্যালয়ে ইংরেজি বা গণিতের শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে তা সমন্বয় করা হচ্ছে না। এর মূল কারণ হচ্ছে কোচিং বাণিজ্য ও সিন্ডিকেট। এ প্রেক্ষাপটে প্রাইভেট বা কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার লক্ষ্যে বিশেষ টিমের প্রতিবেদনে কতিপয় সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, দেশের ৭ জন জেলা শিক্ষা অফিসারকে জেলার দায়িত্ব না দিয়ে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের বদলি করে জেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে বদলি নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ জাতীয় কর্মকর্তাদের প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদায়ন না করতে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, প্রতিবেদনটি কমিশনের কর্মকর্তা পর্যায়ে জমা হয়েছে বলে শুনেছি। প্রতিবেদনটি এখনও কমিশন পর্যায়ে আসেনি। কমিশনে উপস্থাপিত হলে কমিশন পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষা নিয়ে কারো ছিনিমিনি করার অধিকার নেই। এক্ষেত্রে আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৭
এসজে/জেডএম