ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

জাবির বাসচালক প্রমোশন পেয়ে হবেন টেকনিক্যাল অফিসার! 

নুর আলম হিমেল, জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৭
জাবির বাসচালক প্রমোশন পেয়ে হবেন টেকনিক্যাল অফিসার! 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অষ্টম শ্রেণি পাস বাসচালক প্রমোশন পেয়ে হবেন টেকনিক্যাল অফিসার (অফিসারদের সমমান)। কর্মচারী নীতিমালায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত না থাকলেও গত ১২ আগস্ট অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৩০২তম সভায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আর ডিসেম্বর মাসেই শর্ত পূরণ হওয়ায় কয়েকজন চালক এ পদে পদোন্নতিও পাবেন বলে জানা যায়।

বিষয়টি জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বমহলে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

সিন্ডিকেট সভার আদেশনামা থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিসসহ অন্য অফিসের অঙ্গীভূত ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি পাস হেভি/লাইট ড্রাইভারদের (বড় বাস ও মাইক্রোবাস চালক) স্থায়ী পদে সক্রিয় চাকরির মেয়াদ ২৩ বছর পূর্ণ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত পদোন্নতি অনুসরণ করে তাদের টেকনিক্যাল অফিসার পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে।

অফিসার হিসেবে পদোন্নতি পেলেও তাকে গাড়ি চালানোর দায়িত্ব অব্যাহত রাখতে হবে।  

তবে টেকনিক্যাল অফিসার হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্তির দিন থেকে তাদের মাসিক সর্বোচ্চ ১০০ ঘণ্টার উৎকালীন ভাতা দেওয়া হবে। এছাড়া চালকদের উৎকালীন ভাতার বিল পরিশোধের সময় লগ বইতে (রেজিস্ট্রি খাতা) গাড়ি ব্যবহারকারীর স্বাক্ষর আছে কিনা তা যাচাই করতে হবে। প্রকৃত ডিউটির সময় অবশ্যই রেকর্ড করতে হবে লগ বইয়ে। এ আদেশ ১২ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে বলে আদেশনামায় উল্লেখ রয়েছে।  

একজন সাধারণ চালক মাসে ২৫০ থেকে ৩০০ ঘণ্টা গাড়ি চালালেও অফিসারদের জন্য ১০০ ঘণ্টা গাড়ি চালালেই হবে বলে জানান এক কর্মকর্তা।  

রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, আগামী ডিসেম্বর মাসে পদোন্নতির সার্কুলার দেওয়া হবে। ২৩ বছর পূর্ণ হয়েছে এমন ৯ থেকে ১০ জন চালক রয়েছে। এদিকে এ সিদ্ধান্তকে হাস্যকর ও স্নাতকোত্তর পাস করে যারা অফিসার হয়েছেন তাদের জন্য অপমানের বলে মনে করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।  

আগামী বছর অফিসার পদে নির্বাচনে আওয়ামীপন্থি কর্মচারীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ পন্থা নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক।  

একাধিক শিক্ষক বাংলানিউজকে জানান, একজন অষ্টম শ্রেণি পাস করা ব্যক্তি যদি অফিসার হন, তাহলে শিক্ষিত-অল্পশিক্ষিতের পার্থক্য থাকলো কই। দীর্ঘদিন কাজ করার কারণে তাদের বেতন বাড়তে পারে। তাই বলে অফিসার পদের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ দিতে হবে? 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মচারী সমিতির এক নেতা বাংলানিউজকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী নীতিমালায় এ ধরনের কোনো নিয়ম নেই। প্রশাসন নিজের ইচ্ছায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের সমিতির সঙ্গে প্রশাসনের কোনো কথা হয়নি বা আমরা কোনো দাবিও উত্থাপন করিনি।  

দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, এখানে তো লেখাপড়ার কোনো মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। স্পষ্ট বৈষম্য। এটা করলে শিক্ষক-কর্মচারী মহলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।  

সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. শামছুল আলম সেলিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারীদের পদোন্নতির নীতিমালা এখানে মানা হয়নি বলেই বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে যথাযথ শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার কোনো মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। এভাবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব না।  

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি ইমরান নাদিম বলেন, এটা কোন ধরনের নিয়ম যে অষ্টম শ্রেণি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার হয়ে যাচ্ছেন। তাহলে স্নাতকোত্তর শেষ করার দরকার কি।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে ফোন করা হলে তার ব্যক্তিগত সচিব ফোন ধরেন বলেন, ম্যাম এখন খাওয়া-দাওয়া করছে আধা ঘণ্টা পরে ফোন দেন। পরে ফোন দেওয়া হলে উপাচার্য ফোন কেটে দেন।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।