সন্তানের কাঙ্ক্ষিত ফলাফলে আনন্দ ভাগাভাগি করছেন ভর্তিযুদ্ধে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বাবা-মাও। আবার এ ফল বঞ্চনার হতাশাও ছিল অনেক অভিভাবকের চোখে-মুখে।
দৃশ্যটি ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের নোটিশ বোর্ডের সামনের। সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১২ টায় এ মাধ্যমিক স্কুলের তিন শ্রেণিতে চলতি বছরের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। আর এর পরই এমন চিত্রের দেখা মেলে।
ভর্তিচ্ছু সন্তানের পরীক্ষার ফলাফল জানতেই মধ্যরাত অবধি স্কুলটির সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়েন তারা।
গত শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) নগরীর ময়মনসিংহ জিলা স্কুল, বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং সরকারি ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
এ পরীক্ষার দু’দিনের মাথায় প্রকাশিত হয় ফলাফল। প্রতিটি স্কুলের ওয়েবসাইটে ফলাফল প্রকাশিত হলেও উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার আবহে বিদ্যালয়গুলোর আঙিনাতে ভিড় করেন অভিভাবকেরা।
ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে তৃতীয়, চতুর্থ ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে প্রভাতী ও দিবা শাখায় মোট ৪১০ জন শিক্ষার্থী মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে।
বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে চতুর্থ ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ৩০৮ জন এবং সরকারি ল্যাবরেটরি হাই স্কুলে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ৬ষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে মোট ৪৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবার গৌরব অর্জন করেছেন।
ফলাফল প্রকাশের খবর পেয়ে সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১ টা থেকে স্কুলগুলোর আঙিনায় অপেক্ষা শুরু হয় উৎকণ্ঠিত অভিভাবকদের। শীতের রাতে যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটেই দলে দলে স্কুলমুখী হন অনেকে।
স্কুলের দেয়ালে ফলাফল সাঁটিয়ে দেওয়ার পরই যেন শুরু হয় রুদ্ধশ্বাস এক প্রতিযোগিতা। প্রত্যাশা মাফিক সন্তান ফলাফল করায় অনেকের চোখে গড়াগড়ি করে আনন্দাশ্রু।
মোবাইলে আর ইন্টারনেটের গতিময় দিনে স্কুল বা কলেজে এমনিতেই পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে আগের মতো উচ্ছ্বাস চোখে পড়ে না। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এ সময়ে ঘরে বসেই ফলাফল জানা যায় অনায়েসেই।
কিন্তু এদিন অভিভাবকদের বিদ্যালয়কেন্দ্রিক উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
‘সন্তানকে ভালো একটি স্কুলে ভর্তি করাতে সব অভিভাবকের মতো আমারও ঘুম হারাম ছিল। ছেলেটাকে দিনরাত পড়ালেখায় নিবিষ্ট রেখেছি। আজ তার ফল পেয়েছি’-একদমেই যেন কথাগুলো বললেন ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তিযুদ্ধে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী সাদমান সাকিব ফাহিমের মা।
তার সঙ্গে এসেছিলেন স্বামীর বোন ময়মনসিংহ পৌরসভার সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রোকসানা শিরিন।
তিনি বলেন, ‘দক্ষ শিক্ষক, আধুনিক পাঠদানের কারণে এ ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ই শিশুদের জন্য সেরা। যে কারো সন্তান এমন বিদ্যালয়ে পড়বে এটিই অভিভাবকদের স্বপ্ন। মেধার লড়াইয়ে যারা টিকেন তারাই বিজয়ী। ’
তাদের সঙ্গে আলাপের সময়ই পেছন থেকে একটি কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। ‘কনগ্র্যাচুলেশন বাবা, তুমি চান্স পেয়েছো’ এভাবেই মধ্যরাতে সন্তানকে মোবাইলে এ সুসংবাদ জানিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলেন স্থানীয় একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম।
স্মীত হেসে এ শিক্ষক বলেন, ‘জীবনের সূচনাতেই আমার সন্তান মেধার দৌড়ে এগিয়ে গেছে। সন্তানের ফলাফলে নিজেকে গর্বিতই মনে হচ্ছে। ’
নগরীর বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেলো, সন্তানের ফলাফল দেখার পাশাপাশি স্মার্টফোনে ছবি তুলেও নিচ্ছেন অভিভাবকদের অনেকেই।
ইন্টারনেটের দুনিয়ায় স্কুলে কেন, এমন প্রশ্নে এক অভিভাবক বললেন, ‘ওয়েবসাইটে ফল আগেই দেখেছি। তবুও আনন্দে বিদ্যালয়ে ছুটে এসেছি। সন্তানের মেধার গরিমায় আমরাও (অভিভাবক) নিজেদের মাধ্যমিকে পড়ার সময়টাতে যেন ফিরে গেলাম। সন্তানের সাফল্য কোন অভিভাবককেই না উদ্দীপ্ত করে!’
বাংলাদেশ সময়: ০৬০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭
এমএএএম/এসআইজে/এমএ