এছাড়া বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে।
বছরের শুরু থেকেই আলোচনার শীর্ষে ছিল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে গণিত ও পরিসংখ্যান বিভাগের ১০০ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের বিষয়টি।
২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের মতো ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায়ও বেশ অসংগতি লক্ষ্য করা যায়। ‘জি’ ইউনিটের বাণিজ্য বিষয়ে অবাণিজ্য প্রশ্নপত্র, ‘সি’ ইউনিটের দুই শিফটে একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়টি বছরের শেষের দিকে বেশ সমালোচনার জন্ম দেয়।
এছাড়া বরাবরের মতো এ বছরও আবাসন সংকট, পরিবহন সমস্যা, ক্লাসরুম সংকট, চিকিৎসা সেবা এবং ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে চালু হওয়া তিন বিভাগে (ফোকলোর, মার্কেটিং, রাষ্ট্রবিজ্ঞান) শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা বেশ বিপাকে রয়েছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফোকলোর বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিভাগের যাত্রাকালে আমাদের টিএসসিসির বারান্দায় ক্লাস হচ্ছে। ক্লাসরুম সংকটের কারণে এ বছর নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে তিনটি ব্যাচের ক্লাস টিএসসিসির বারান্দাতেই করতে হবে বলে মনে হচ্ছে। তার মধ্যে আবার আমাদের বিভাগের নিজস্ব কোনো শিক্ষক নাই। অন্য বিভাগের ধার করা শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে আমাদের। ’
তবে অন্যান্য বছরের তুলনাই এ বছরে সাফল্যের পাল্লাই ভারী বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিরা। সম্প্রতি সরেজমিনে পরিদর্শন করে তার চিত্রও ফুটে উঠে। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সেশনজটমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার টার্গেট নেন।
এজন্য তিনি বছরের শুরু থেকেই ক্লাস বিমুখ শিক্ষকদের ক্লাসমুখীকরণ, একাডেমিক সময় সকাল ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা করণসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নেন। যার ফলে এ বছরে দু’একটি বিভাগ ব্যতিত প্রায় সব বিভাগে সেশনজট লক্ষণীয় মাত্রায় কমেছে বলে জানা যায়।
বছরের শুরুতেই আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দু ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন। অবশেষে আগামী ৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি প্রতিফলিত হতে যাচ্ছে। সমাবর্তনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগকে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে। যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ বছরের সেরা সাফল্যের দাবিদার রাখে।
২০১৭ সালের আরও একটি সাফল্য হলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরাসরি অ্যাকশন নেওয়া। বছর জুড়েই দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে ছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
২২ আগস্ট ২৩৬তম সিন্ডিকেটে নিজ বিভাগের ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সাবেক সভাপতি ও সহকারী অধ্যাপক আসাদুজ্জামনকে স্থায়ী বরখাস্ত করা হয়। একইদিনে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সাবেক সভাপতি রুহুল আমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এছাড়া বছরের বিভিন্ন সময়ে তিন শিক্ষকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বরখাস্তসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
২০১৭ সালে ঘটে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বাংলানিউজকে বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজটমুক্ত ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে আসছি। অচিরেই আমরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্নীতিমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলব। ’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন বছরে আমরা ইসলামী বিশ্বিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলব, যাতে আমরা দক্ষ ও নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে পারি। ’
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭
আরবি/