ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

প্রশ্নের স্তূপে বসে সর্টিংয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৮
প্রশ্নের স্তূপে বসে সর্টিংয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা! প্রশ্নপত্র সর্টিং করছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা/ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: বাক্স থেকে বের করে থানার বারান্দায় রাখা অসংখ্য খাম, খামের ভিতর রয়েছে প্রশ্নপত্র। সেই প্রশ্নপত্রের স্তূপের উপর বসে আছেন স্থানীয় ধুনকুন্ডি আয়শা মওলা বক্স দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক খোদা বক্স। পাশেই দেখা যাচ্ছে আরও দুজন শিক্ষককে।

প্রশ্নপত্রের আরেকটি বাক্স ঘিরে কাজ করছেন তিনজন। বাক্সের তালা খুলছেন স্থানীয় শহীদিয়া আলিয়া মাদ্রাসার দফতরী মিনহাজ।

পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন একই মাদ্রাসার শরীরচর্চা শিক্ষক মাহমুদুল্লাহ ও স্থানীয় কাফুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুল হালিম।

তারা সবাই প্রশ্নপত্র সর্টিং (বাছাই) করার কাজে ভীষণ ব্যস্ত। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী তারা কেউই এ কাজটি করতে পারেন না। অথচ থানার ভেতরে বসে স্থানীয় শিক্ষক সমিতির নেতাদের পছন্দনীয় ১৫-২০ জন শিক্ষক-কর্মচারী মিলে সম্পর্শকাতর এই কাজটি করছেন।

খোঁজ-খবর করে জানা গেলো এসব প্রশ্নপত্র দিয়ে আসন্ন এসএসসি, দাখিলসহ সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এসব প্রশ্নপত্র সর্টিংয়ের সময় যাচাই-বাছাই কমিটির প্রধান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি।

এ অবস্থায় প্রশ্নপত্র বাছাইয়ের ধরন ও এ কাজে নিয়োজিত শিক্ষক-কর্মচারীদের ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠেছে। কারণ দেশব্যাপী সম্প্রতি হয়ে যাওয়া বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার রেশ এখনও কাটেনি। সর্বত্রই আলোচনা-সমালোচনা ঝড় বইছে। ঠিক সেই মুহূর্তে দায়িত্বশীল কর্তাদের ছাড়া শিক্ষক-কর্মচারীদের দিয়ে এসব প্রশ্নপত্র সর্টিং করা নিয়ে বেশ শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বেলা ২টার দিকে বগুড়ার শেরপুর থানার ভেতরে এমন দৃশ্য ধরা পড়ে। বিকেলে এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত একইভাবে প্রশ্নপত্র বাছাইয়ের কাজ চলছিলো।

থানা ভবনের প্রধান ফটক বন্ধ ছিলো। তবে ডিউটি অফিসারের কক্ষের দরজা দিয়ে সার্বক্ষণিক লোকজন আসা যাওয়া করছিলো। এছাড়া পেছনের দরজাটাও খোলা ছিলো। এ অবস্থায় থানার উত্তরপ্রান্তের বারান্দায় বসে এলোমেলোভাবে দায়িত্বশীল কর্তারা ছাড়াই শিক্ষক-কর্মচারীরা মিলে খোশগল্পে মশগুল হয়ে প্রশ্নপত্র বাছাইয়ের কাজ করছিলেন।

শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, তালা মেরে প্রশ্নপত্রগুলো সংরক্ষণ করা তার দায়িত্ব। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে তালা খুলে বাক্সগুলো বের করা হয়েছে। তালা খোলার পর সব ধরনের কার্যক্রমের জন্য সংশ্লিষ্টরা দায়ী থাকবেন। তবে প্রশ্নপত্র সর্টিং করার জন্য তিনি কোনো চিঠি পাননি।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোপাল চন্দ্র সরকার বাংলানিউজকে জানান, প্রশ্নপত্র সর্টিংয়ের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নেতৃত্বে একটি কমিটি থাকবে। তিনি থানার ওসিকে চিঠি দিবেন। কমিটি প্রধান হিসেবে এ কাজে তিনি উপস্থিতি থাকবেন। সেই কমিটির সদস্য ছাড়া কেউ এ কাজটি করতে পারবে না।

তাই এ নিয়মের বাইরে গিয়ে প্রশ্নপত্র সর্টিংয়ের কোনো সুযোগ নেই। কারণ এতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঝুঁকি থেকে যায় বলেও জানান গোপাল চন্দ্র সরকার।

শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে যাচাই-বাছাই কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ করে জানান, তিনি না গেলেও তার প্রতিনিধি হয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেখানে রয়েছেন। এছাড়াও রয়েছেন কেন্দ্র সচিব।

এক প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, ৬০টি বাক্স বের করা, সেগুলো খোলা, খামে ভরা প্রশ্নপত্র বের করে চাহিদামতো সংখ্যা জেনে সেগুলো বাক্সে ভরে আবার তালা মেরে থানা হেফাজতে রাখা; এই কয়েকজন ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব না। তাই কাজটি করতে পিয়ন-কর্মচারীর সহযোগিতা নেওয়া হয়। এতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের তো কোনো কারণ দেখি না।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হকের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পরে ফোন করেন, এখন ভীষণ ব্যস্ত আছি। বলেই ফোনের সংযোগ কেটে দেন ওই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৮
এমবিএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।