ঢাকা, রবিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৮ জুলাই ২০২৪, ২১ মহররম ১৪৪৬

শিক্ষা

প্রশ্নফাঁস: ‘পরীক্ষার যথার্থতা’ মূল্যায়নে কমিটি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৮
প্রশ্নফাঁস: ‘পরীক্ষার যথার্থতা’ মূল্যায়নে কমিটি জরুরি সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়েছে কি-না বা ফাঁসের কারণে পরীক্ষার্থীদের ওপর প্রভাব পড়েছে কি-না, তা পর্যালোচনা করে পরীক্ষা মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিতে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করেছে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীরকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে।

চলমান এই পরীক্ষার বিষয়ে রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জাতীয় মনিটরিং এবং আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির জরুরি সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ কথা জানান।

শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধি সভায় উপস্থিত ছিলেন।

 

এসএসসি পরীক্ষার শুরুর দু’টি বিষয়ের প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জরুরি বৈঠকে কমিটি গঠন এবং তার সুপারিশের প্রেক্ষিতে পরীক্ষা বাতিল বা অন্য কোনোভাবে মূল্যায়ন করা হবে কি-না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নির্দেশ করছে বলে মনে করা হচ্ছে।  

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের এই পরীক্ষার সময় যেসব প্রশ্ন উঠেছে, যে ফাঁস হয়েছে, এটা ঠিক বা ভুল বলা হচ্ছে। এসব বিষয় যাচাই-বাছাই করে এবং তার ফলে আমাদের পরীক্ষার্থীদের উপর কী প্রভাব পড়ছে, কে কী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, হয়নি- সব মিলিয়ে পরীক্ষাটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করা যায়, সেটা মূল্যায়ন করে পরীক্ষা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তারা সুপারিশ করবেন। এ ধরনের একটা কমিটি আমরা করে দিচ্ছি। তারা পরীক্ষা মনিটর করবেন এবং পরীক্ষার পরে তার একটা গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদরদফতর ও ঢাকা মহানগর পুলিশ, বিটিআরসি, আট সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি এবং মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধি থাকছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কমিটি প্রয়োজন মনে করলে সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবেন।

মন্ত্রী বলেন, সার্বিকভাবে যে বিষয়টা দেখা যাচ্ছে যে, এটা শুধু ফাঁস করে টাকা ইনকাম করবার জন্য কিংবা তার কোনো লাভ হবে, এই উদ্দেশ্যে শুধু নয়। মূলত এটার উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেভাবে তারা প্রচার করছে একটা লক্ষ্য আছে। সেই লক্ষ্যটা হচ্ছে আমাদের সরকারকে বা মন্ত্রণালয় বা দলকে মানুষের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করে দেওয়া এবং মানুষের আস্থাটাকে নষ্ট করে দেওয়া। সেই হিসেবে এটার পেছনে একটা সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য রয়েছে। যারা করছেন, তারা মানুষের কাছে সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চান। তাই এটা একটা গভীর ষড়যন্ত্রমূলকভাবেই পেছন থেকে এটার সমর্থন বা এটার ওস্তাদি রয়েছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, আমাদের সমস্ত তথ্য-উপাত্ত প্রমাণ করে…। সেই বিষয়টা পুলিশ দেখবে।

হুঁশিয়ারি দিয়ে মন্ত্রী নাহিদ বলেন, তদন্ত করে জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে। তারা প্রত্যেকেই ধরা পড়বে। কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র।  

প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কারের ঘোষণাও দেন শিক্ষামন্ত্রী।

তিনি বলেন, পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করার যারা হোতা, যারা এ বিষয়গুলোর সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত, সেই ধরনের যারা অপরাধী, তাদের ধরিয়ে দিতে পারলে, চিহ্নিত করে দিতে পারলে, সঠিক প্রমাণিত হলে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষার হলে কোনো শিক্ষক, পরীক্ষার্থী, কর্মকর্তা বা বাইরে থেকে যে কেউ কোনো কাজে যান না কেন, কোন ধরনের মোবাইল ফোন বা ডিভাইস নিতে পারবেন না। যদি পাওয়া যায়, সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করা হবে এবং তিনি জেলে যাবেন। পরীক্ষার্থী হলে তার পরীক্ষা বাতিল হয়ে যাবে। ৩০ মিনিট আগে সিটে গিয়ে বসতে হবে।
 
ফেসবুকে যেসব লিংক দিয়ে প্রশ্নফাঁসের বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো বন্ধ করা হবে কিনা- প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, সেগুলো বন্ধ করার দায়িত্ব বিটিআরসি ও পুলিশের। যে যেখানে পান সেগুলো আমাদের জানান। এটা অবশ্যই করবো।
 
এক্ষেত্রে সহযোগিতা কম পাচ্ছেন কি-না, এমন প্রশ্নে নাহিদ বলেন, তারা (বিটিআরসি) বলে গেছেন যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। এটা শুধু হাতে নয়, এটা ফেসবুকের যে হেড কোয়ার্টার আছে, সেখান থেকে লিংক, যার ফলে এখানে তাদের কনসার্ন হয়। এই সমস্যা তারা কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করবেন।
 
ফেসবুক বন্ধ রাখা যায় কি-না, এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আপাতত সব ধরনের সহযোগিতা চেয়েছি। তারা (বিটিআরসি) চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে কী করে বন্ধ করতে পারেন, এটার লিংক হচ্ছে কেন্দ্র পর্যন্ত।
 
তিনি বলেন, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে প্রশ্নের খাম খোলা যাবে না- এটা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সব ডিসি এবং ইউএনওকে নির্দেশ দিচ্ছি, তারা ওখানে একজন অফিসার ও একজন পুলিশ অফিসারকে মনোনীত করবেন।
 
তিনি বলেন, এমসিকিউ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। এটা নিয়ে ২০১৫ সালে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলাম যে ২০১৭ সালে এটা বন্ধ হবে। ১০ নম্বর কমানো হবে। এখন আমাদের শিক্ষাবিদ, শিক্ষক যারা এসব বিষয়ের প্রবক্তা ছিলেন, সবাইকে নিয়ে আমরা সেমিনার করে করণীয় ঠিক করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৮
এমআইএইচ/এইচএ/

** প্রশ্নফাঁসের হোতাকে ধরিয়ে দিলে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।