ঢাকা, রবিবার, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৮ জুলাই ২০২৪, ২১ মহররম ১৪৪৬

শিক্ষা

পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে দিতে হচ্ছে ৯শ’ টাকা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৮
পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে দিতে হচ্ছে ৯শ’ টাকা!

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও আলিম পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেওয়ার সময় পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পরীক্ষাকেন্দ্রে ব্যয়ের বিভিন্ন খাত দেখিয়ে আলিম পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৯শ’ টাকা এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫শ’ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।

এভাবে একটি চক্র প্রবেশপত্র দেওয়ার নামে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতনদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

এরআগেও ২০১৬ সালেও অতিরিক্ত টাকা আদায়ের করা হয়েছিল। ওই সময় বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে মাদ্রাসার পরীক্ষার্থীদের দুইশ’ টাকা করে ফেরত দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) থেকে উপজেলার পাঁচটি মাদ্রাসা ও তিনটি কলেজের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রবেশপত্র নিতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার খবর পাওয়া যায়। অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী প্রবেশপত্র না নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।

জানা গেছে, হাজিরহাট হামেদিয়া ডিগ্রি মাদ্রাসা, ফরাশগঞ্জ ফয়েজে-আম আলিম মাদ্রাসা, মাতাব্বনগর দারুচ্ছুন্নাত আলিম মাদ্রাসা, জগবন্ধু ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা ও চরমার্টিন মুন্সিগঞ্জ আলিম মাদ্রাসার ১৭৫ জন শিক্ষার্থী আলিম পরীক্ষায় অংশ নেবে।

অপরদিকে, হাজিরহাট উপকূল কলেজ ৫৭৬ জন, কমলনগর কলেজে ২জন ও ফজুমিয়ারহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১৩জন পরীক্ষা অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানায়, পরীক্ষা ফরমপূরণের সময় তাদের কাছ থেকে নির্ধারিত টাকার চেয়ে বাড়তি টাকা আদায় করা হয়েছে। ফের প্রবেশপত্র আটকিয়ে ৯শ’ টাকা করে আদায় করছে।

একজন নারী অভিভাবক জানান, তার ছেলে হাজিরহাট হামেদিয়া ডিগ্রি মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষায় অংশ নেবে। প্রবেশপত্র নিতে গেলে ৯শ’ টাকা দাবি করায় ছেলেটি বাড়ি ফিরে আসে।

দরিদ্র এই মায়ের পক্ষে ৯শ’ টাকা দেওয়া সম্ভব না জানিয়ে টাকা আদায়কারী শিক্ষকের কাছে ফোন করে বলেন, তার কাছে দেড়শ টাকা আছে। এই টাকা প্রবেশপত্র দিতে অনুরোধ করেন তিনি। কিন্তু শিক্ষক সাফ জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত টাকার চেয়ে কম নেওয়া সম্ভব না।  

টাকা আদায়ের দায়িত্বে থাকা ওই মাদ্রাসার শিক্ষক মাকছুদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেওয়ার সময় প্রতি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৯শ টাকা করে আদায় করতে বলেছেন। সে কারণে প্রবেশপত্র দিতে ৯শ’ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে, কয়েকজন শিক্ষক জানান, পরীক্ষা কেন্দ্রের বেশ কিছু টাকা ব্যয় হয়ে থাকে। এছাড়াও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সম্মানী দিতে হয়, যেকারণে প্রবেশপত্র দেওয়ার সময় টাকা আদায় করা হচ্ছে।

কমলনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এফএম আবদুল ওয়াজেদ তালুকদার বলেন, পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে টাকা দিতে হয় এ বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি জানাতে মাদ্রাসা ও কলেজ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর নদী ভাঙন কবলিত উপজেলা। এখানকার ৮০ ভাগ মানুষ দরিদ্র কৃষক ও জেলে। মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনের শিকার বেশিরভাগ পরিবার। তাদের পক্ষে প্রবেশপত্র নিতে অতিরিক্ত টাকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সচেতন মহল মনে করছেন এভাবে নানা অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে থাকলে শিক্ষার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৮
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।