ঢাকা, রবিবার, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৮ জুলাই ২০২৪, ২১ মহররম ১৪৪৬

শিক্ষা

কোটা ও কোটার শূন্যপদে নিয়োগ স্পষ্ট করলো সরকার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৮
কোটা ও কোটার শূন্যপদে নিয়োগ স্পষ্ট করলো সরকার লোগো

ঢাকা: সরকারি চাকরিতে কোটা ও কোটার শূন্য পদে নিয়োগের পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলনের মধ্যে বিষয়টি স্পষ্ট করেছে সরকার। এক আদেশে কোটা সংরক্ষণ ও কোটার শূন্য পদ থাকলে সেক্ষেত্রে নিয়োগ নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

গত ৬ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খানের স্বাক্ষর করা এক আদেশে বলা হয়, ‘সব সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটার কোনো পদ যোগ্য প্রার্থীর অভাবে পূরণ করা সম্ভব না হইলে সে সেসকল পদ মেধা তালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী প্রার্থীদের মধ্য হইতে পূরণ করিতে হইবে। ’
 
২০১০ সালের একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মুক্তিযোদ্ধা কোটার শর্ত শিথিল করে অন্যসব সরাসরি নিয়োগে সব কোটার ক্ষেত্রে শূন্য পদে মেধাবীদের নিয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।


 
এই নির্দেশনার পরে কোনোভাবে যেন কোটার পদে নিয়োগ না হয় সেজন্য কোটার পক্ষের সংশ্লিষ্টরা দাবি জানিয়েছিল। আর কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
 
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার (৫ এপ্রিল) কোটা বহাল রেখেই কোটা এবং কোটার শূন্যপদে মেধাবীদের নিয়োগের বিষয়ে স্পস্ট করে ব্যাখ্যা দিয়েছে।
 
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান স্বাক্ষরিত আদেশে গত ৬ মার্চের স্মারকের নির্দেশনার স্পষ্টীকরণ করে বলেছে, ‘উক্ত নির্দেশনা জারির ফলে সরকারি/আধা সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত এবং বিভিন্ন করপোরেশন ও দফতরের সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা পদ্ধতি যথাযথভাবে অনুসরণের লক্ষ্যে নিম্নরূপ ব্যাখ্যাসহ স্পষ্টীকরণ করা হইল:
 
(ক) প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে:
১. প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বিষয়ে ২০১০ সালের ৫ মে পরিপত্র অনুসরণপূর্বক বিশেষ কোটার অধীন কোনো জেলার বিতরণকৃত পদের সংখ্যা হইতে যোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা কম হইলে উক্ত বিশেষ কোটার অপূর্ণ পদসমূহ জাতীয় ভিত্তিক স্ব-স্ব বিশেষ কোটার (অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা, মহিলা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী) জন্য প্রণীত জাতীয় মেধা তালিকা হইতে পূরণ করিতে হইবে।
 
২. উক্ত সিদ্ধান্ত অনুসরণের পর সংশ্লিষ্ট নিয়োগের জন্য মহিলা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটার কোনো কৃতকার্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে উক্ত পদগুলো অবশিষ্ট কোটা অর্থাৎ জেলার সাধারণ প্রার্থীদের দ্বারা পূরণ করিতে হইবে।
 
৩. উপরিউক্ত পদ্ধতিদ্বয় অনুসরণ করিবার পরও কোনো বিশেষ কোটার (মুক্তিযোদ্ধা, মহিলা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী) পদ পূরণ করা সম্ভব না হইলে অপূরণকৃত সে সকল পদ জাতীয় মেধা তালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী প্রার্থীদের দ্বারা পূরণ করিতে হইবে।
 
(খ) ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির পদসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে:
৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির পদসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ কোটার (মুক্তিযোদ্ধা, মহিলা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, এতিম ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা সদস্য) কোনো পদ যোগ্য প্রার্থীর অভাবে পূরণ করা সম্ভব না হইলে অপূর্ণ পদসমূহ জেলার প্রাপ্যতা অনুযায়ী স্ব-স্ব জেলার সাধারণ প্রার্থীদের মধ্য হইতে মেধা তালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী প্রার্থীদের দ্বারা পূরণ করিতে হইবে।
 
(গ) কোটা সংক্রান্ত বিদ্যমান অন্যান্য বিধান অপরিবর্তিত থাকিবে।
(ঘ) উপরিউক্ত স্পষ্টীকরণ সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগকে তাহাদের অধীন সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের সকল পর্যায়ের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে অবগত করিতে অনুরোধ করা হইলো। ’
 
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, সব মন্ত্রণালয়/বিভগের সচিব, পিএসসি সচিব, মহা-হিসাব নিরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রক, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) বিতরণ করা হয়েছে।
 
এছাড়া গেজেটে প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয়ের উপ-পরিচালককেও বিতরণ করা হয়েছে।
 
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা দীর্ঘদিনের। ১৯৭২ সালের ৫ নভেম্বর এক নির্বাহী আদেশে সরকারি, আধাসরকারি, প্রতিরক্ষা এবং জাতীয়করণ করা প্রতিষ্ঠানে জেলা ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং ১০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের জন্য কোটা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়।
 
পরে বিভিন্ন সময়ে এই কোটা পদ্ধতির সংস্কার, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করেছে সরকার।
 
বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনি ৩০ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, পশ্চাদপদ জেলাগুলোর জন্য কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ কোটা পদ্ধতি সংরক্ষিত চালু আছে। সব মিলিয়ে ৫৬ শতাংশ কোটা পদ্ধতি রয়েছে।
 
কোটা নিয়ে আলোচনার মধ্যে চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ হচ্ছে কিনা- তা জানতে চেয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
 
গত ২ এপ্রিল সব মন্ত্রণালয়/বিভাগে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারির স্মারক অনুযায়ী সরকারি দফতর, স্বায়ত্তশাসিত/আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা এবং উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে মুক্তিযোদ্ধা/মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা এবং পুত্র-কন্যা পাওয়া না গেলে পুত্র-কন্যার পুত্র-কন্যার অনুকূলে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের নির্দেশনা রয়েছে।
 
এছাড়াও গত বছরের ১৯ জুন জারি করা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যে কোনো নিয়োগের তালিকা সংযুক্ত ছকে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা বলা হয়ছে। কিন্তু কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশ মন্ত্রণালয় এ তথ্য পাঠায়নি।
 
জনপ্রশাসন সচিব বলে আসছেন, কোটা নিয়ে নির্দেশনার ফলে কোনো পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। একদিকে শূন্যপদে নিয়োগ হবে, অন্যদিকে মেধাবীরাও বঞ্চিত হবে না।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৮
এমআইএইচ/এএ

** 
জেলাওয়ারিসরাসরি নিয়োগের কোটা নির্ধারণ

** কোটার পদ মেধা তালিকা থেকে পূরণের সিদ্ধান্ত

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।