ঢাকা, সোমবার, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৯ জুলাই ২০২৪, ২২ মহররম ১৪৪৬

শিক্ষা

পা দিয়ে লিখে দাখিল পাস করলো বেল্লাল

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১০ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৮
পা দিয়ে লিখে দাখিল পাস করলো বেল্লাল বেল্লাল আকন ও তার বাবা খলিল আকন, ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালী: বেল্লাল আকন জন্মগত শারীরিক প্রতিবন্ধী। জন্ম থেকেই তার দুটি হাত নেই। পা দুটিতেও রয়েছে জন্মগত ত্রুটি। হাত না থাকলেও মনের জোরের কমতি ছিল না বেল্লালের। তাই এবারের দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে খাতায় উত্তর লিখেছে পা দিয়ে। পাসও করেছে বি-গ্রেডে। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চায় সে।

বেল্লাল পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের উমেদপুর গ্রামের খলিল আকন ও হোসনে আরা বেগমের ছেলে। উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের উমেদপুর দাখিল মাদ্রাসার ছাত্র।

এবারের দাখিল পরীক্ষায় বেল্লাল বি-গ্রেডে (৩. ৮৫) পাস করেছে বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা। তবে এ ফলাফলে উচ্ছ্বসিত নয় বেল্লাল।

তার বাবা খলিল আকন বিভিন্ন স্থানে দিন মজুরের কাজ করে অতিকষ্টে সংসার চালান। কিন্তু ছোট থেকেই পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ ছিল বেল্লালের। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও মনের জোর ছিলো অসীম। একমাত্র ভরসা পা দিয়ে চলাচলের পাশাপাশি লেখার কাজটিও করেছে সে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও মায়ের অনুপ্রেরণায় এগিয়ে যাচ্ছে সে। বিদ্যালয় থেকে শুরু করে গোটা এলাকাজুড়ে মেধাবী ও উদ্যোমী বেল্লালের পায়ের জাদুর গল্প এখন সবাই জানে।

পা দিয়ে লিখেই ইবতেদায়ি ও জেডিসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে বেল্লাল। এবারে দাখিল পরীক্ষায় পেয়েছে বি-গ্রেড।

বেল্লালের সহপাঠীরা জানায়, সবাই যখন স্বাভাবিক নিয়মে বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দেয়। তখন বেল্লাল দু’পায়ে কাঠের বিশেষ আসনে দাঁড়িয়ে পা দিয়ে লিখে পরীক্ষা দেয়।

বেল্লালের মা বাংলানিউজকে জানান, ছেলের দু’টি হাত নেই। প্রথমে এ নিয়ে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে। পরে এক শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় লেল্লালকে লেখাপড়া করানোর সিদ্ধান্ত নেন। ঘরে বসেই বেল্লালকে পড়াতেন আর পায়ের আঙুলের মধ্যে চক দিয়ে লেখা শেখানোর অভ্যাস তৈরি করতেন। এরপর বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে উমেদপুর মাদ্রাসায় ভর্তি করেন তাকে। আর এখন তো সেই পা দিয়ে লিখেই অসাধ্যকে সাধন করে দাখিল পাস করেছে সে।

তার বাবা খলিল আকন জানান, আমার ছেলে প্রতিবন্ধী এটা বলতে পারছি না। কারণ ওতো দক্ষতা দিয়ে সমাজে নিজের স্থান তৈরি করে নিয়েছে। আমি বেল্লালের লেখা-পাড়া বন্ধ করতে চাই না।

মো. বেল্লাল জানায়, শুধু ডান পায়ের আঙ্গুল দিয়ে লিখে পিএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছি। তবে দাখিল পরীক্ষায় সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারিনি। কারণ শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়ায় অর্থ সঙ্কট ছিলো প্রকট। আমি নানা প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে মাধ্যমিক পেরিয়েছি। এখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় আরো ভালো করতে চাই।

তিনি আরো জানায়, প্রতিবন্ধী হলেও সে সমাজের বোঝা হয়ে বাঁচতে চায় না। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সে সমাজের অন্যান্য মানুষের মতো বাঁচতে চায়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৮
এমএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।