ঢাকা, সোমবার, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৯ জুলাই ২০২৪, ২২ মহররম ১৪৪৬

শিক্ষা

আন্দোলন দেখলেই ‘হাওয়া’ জবির মূল ফটক!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৪ ঘণ্টা, মে ৯, ২০১৮
আন্দোলন দেখলেই ‘হাওয়া’ জবির মূল ফটক! জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের একাংশ খুলে ফেলা হয়েছে

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মূল ফটকের লোহার গেট ‘হাওয়া’ হয়ে যাওয়া যেন একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি জবিতে বড় ধরনের ছাত্র আন্দোলন শুরু হলেই মূল ফটকের লোহার দরজার একাংশ খুলে তা মেরামতে পাঠানো রীতিতে পরিণত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সম্প্রতি প্রকাশনা জালিয়াতির অভিযোগে চাকরিচ্যুত ইংরেজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মাথায় আবারো মূল ফটকের অর্ধেক অংশ খুলে তা কথিত মেরামতে পাঠানো হয়েছে।

গত কয়েকদিন ধরে চলা আন্দোলনের প্রথম দিকে কিছু কিছু বিভাগের ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও সর্বশেষ ৩ মে (বৃহস্পতিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক অবরুদ্ধ করে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

ফলে বেশকিছু বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় ৭০ ভাগেরও বেশি ছাত্র অনুপস্থিত থাকেন। প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা বার বার হুমকি-ধামকি দিয়েও মূল ফটকের তালা খোলাতে পারেননি। ফলাফল ফটক অবরুদ্ধ থাকায় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেননি স্বয়ং উপাচার্য ড. মীজানুর রহমানও।

এরপর ৬ মে (রোববার) একযোগে প্রায় সব বিভাগে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ওই দিন ২০-২৫টি বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাও বর্জন করেন তারা। কিন্তু ওই দিন পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির বাড়তি সতর্ক অবস্থান ও হার্ডলাইনের কারণে মূল ফটক বন্ধ করতে না পারলেও ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ করে আন্দোলন করেন তারা। আন্দোলন চলার এক পর্যায়ে উপাচার্যের সাথে বৈঠক করে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল।  

এ সময় উপাচার্য আন্দোলনকারীদের জাননা, নাসির উদ্দিনকে অফিসিয়ালি চাকুরিচ্যুত করা হয়নি, শিগগিরই ক্লাসে ফিরছেন। কিন্তু কিছু সময় পর উপাচার্য সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় এ ধরনের কিছু বলেননি বলে দাবি করেন। ফলে এক ধরনের ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা আবারো আন্দোলনে নামতে পারেন এমন ধারণা করে প্রশাসন।

এরপর দিন অর্থাৎ ৭ মে (সোমবার) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের অর্ধেক অংশ হাওয়া হয়ে যায়। পরে জানা যায় ১ বছরের কম সময়ের ব্যবধানে ফের একই অংশের গেটটিকে মেরামতে পাঠিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা মানতে নারাজ। তারা মনে করেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যেন ফের জমজমাট না হতে পারে এজন্যই পরিকল্পিতভাবে এমন কাজ করা হয়েছে।

এর আগে গত বছরের আগস্ট মাসের শুরুতে হলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন জবি শিক্ষার্থীরা। দিন কয়েক স্বাভাবিক আন্দোলন হওয়ার পর তা রূপ নেয় বিশাল আন্দলনে। দিন কয়েকের মাঝেই শীক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষা বর্জন কর মূল ফটকে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। প্রক্টরিয়াল বডির লোকজন শিক্ষার্থীদের নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখিয়েও যখন ফটক উদ্ধার করতে ব্যর্থ ঠিক এমন সময় ২২ আগস্ট (সোমবার) রাতের আঁধারে হঠাৎ মূল ফটকের অর্ধেক অংশ মেরামত করার কথা বলে খুলে ফেলা হয়। এরপর আন্দোলন চলাকালীন সময়ে সেই গেট মেরামত ও লাগানোর সাহস করেনি প্রশাসন।

বার বার আন্দোলনের সময়েই একই পাশের গেট নষ্ট হয় বা মেরামতে পাঠানোর নাম করে আন্দোলনের মাত্রা কমানো বা প্রশমনের জন্য এমন পদক্ষেপ নিয়ে তাই এক হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী মহলে।

আহসান আবীর নামে এক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষার্থীরা সবসময় ন্যায়ের দাবিতে আন্দোলন করেন। কিন্তু প্রশাসন সবসময় প্রতিটা ক্ষেত্রে এর বিরোধিতা করে তা প্রশমনের চেষ্টা চালায়। কিন্তু যখন তা করতে ব্যর্থ হয় তখন তারা ছলচাতুরির আশ্রয় নেয়। হল আন্দলনের মতো এবার ক্যাম্পাসের মূল ফটকের অর্ধেক অংশ কেটে রেখে তাই প্রমাণ করেছে প্রশাসন।

আরেক শিক্ষার্থী রুদ্রনীল হালদার বাংলানিউজকে বলেন, আন্দোলন দমাতে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক কেটে রেখে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা এক ধরনের হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে। আমাদের ন্যায্য দাবির বিপক্ষে যে তাদের অবস্থান তা প্রমাণিত হয়েছে। তারা ইচ্ছাপূর্বক নাসির স্যারকে চাকরিচ্যুত করেছে, এখন এটা প্রমাণিত।

এ বিষয়ে ইশতিয়াক আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্রদের হুমকি-ধামকি দিয়ে যখন ক্লাসে ফেরাতে পারছিলেন না, তখন তারা গেট খুলে ছাত্রদের বাধ্যতামূলকভাবে ক্লাসে নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন।

বার বার ক্যাম্পাসের মূল ফটক অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নুর মোহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। রেজিস্ট্রারকে জিজ্ঞেস করুন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওয়াহিদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, পুরো গেটটিই সংস্কার করা হবে, তাই গেটটি খুলে ফেলা হয়েছে। অপর গেটটিও হয়তো আজ খুলে ফেলা হবে।

মূল ফটক অবমুক্ত হয়ে যাওয়ায় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তো কোনো গেটই নেই সেখানে কি নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে? তাই এখানেও হবে না। আমরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ করব। অনেক সময় তারা ঘুমিয়ে পড়েন, গেট না থাকলে তারা না ঘুমিয়ে দায়িত্ব পালন করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৬ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৮
কেডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।