ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

মন কাঁদে, তবু ঈদে বাড়ি যেতে চান না তারা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৩ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৮
মন কাঁদে, তবু ঈদে বাড়ি যেতে চান না তারা! বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়ন কক্ষ। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ঈদে বাড়ি যেতে কার না মন চায়। আমাদেরও ফিরে যেতে নাড়ির টান আসে। মন কাঁদে তার জন্য। কিন্তু যেতে চাই না! গেলেই নানা প্রশ্ন, কী জব করছেন? কেন করছেন না বা হচ্ছে না? শিক্ষাজীবনে এসব নিয়ে লজ্জার সম্মুখীন হতে হয়। আর এ বিড়ম্বনা এড়াতেই মন চাইলেও বাড়ি যাই না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন যারা এক প্রকার বাধ্য হয়েই ক্যাম্পাসে ঈদ করেন। দেশের চাকরির বাজারে সংকটের কারণে এসব শিক্ষার্থীদের বেকারত্বের গ্লানি বয়ে বেড়াতে হয়।

যার ফলে প্রতি বছর ঈদ আসলেও তাদের জীবনে আনন্দ বলতে কিছুই থাকে না। বেকারত্বের গ্লানিতেই ম্লান হয়ে যায় তাদের ঈদানন্দ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০০৫-০৬ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন মোস্তফা (ছদ্মনাম)। বিসিএস, ব্যাংকসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েছেন একের পর এক। কখনও প্রিলি, কখনও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ভাইভা দিয়েও কাঙ্ক্ষিত চাকরি মেলে নি এখনও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা’ সূর্য সেন হলের এ শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, ‘পরিবারের বড় ছেলে আমি। স্বভাবতই আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন সবাই। যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই, সেই প্রত্যাশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু অনেক নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েও কিছু হয়নি। এজন্য এবারও ঈদ ক্যাম্পাসে করতে হবে..। ’

শুধু মোস্তফা নয়, এমন অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন, যাদের বাড়ি যেতে মন চাইলেও এই গ্লানি নিয়ে ক্যাম্পাসেই ঈদ করেছেন।

মুসলমানদের দুইটি ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম হচ্ছে ঈদুল ফিতর। কুরবানির ঈদে পরিবারের সবাই এক সঙ্গে না হতে পারলেও এই ঈদে সবাই মিলিত হওয়ার চেষ্টা করেন।

রমজান উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি শুরু হয়েছে অনেক আগেই। পরীক্ষা, টিউশনি, রাজনীতির কারণে অনেকেই হলে থেকেছেন ছুটিতেও। এখন ঈদ কাছে আসায় অধিকাংশই বাড়ির পানে ছুটেছেন। কিন্তু যাদের আর্থিক সমস্যা রয়েছে, তারা বাড়ি যাওয়ার কথা চিন্তাই করতে পারেন না।

বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র আক্তার জামিলের মতো কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর অবস্থা আবার ভিন্ন। বাংলানিউজকে আক্তার বলেন, ঈদের পরে বিসিএস’র লিখিত পরীক্ষা হবে। আব্বুর অসুস্থতার কারণে অনেক দিন পড়া হয়নি। যার কারণে প্রস্তুতি সেভাবে হয়নি। সিলেবাস অনেক বেশি হওয়ায় পড়া শেষ করতে ঈদে বাড়ি যাচ্ছি না।

তিনি আরও বলেন, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থী হওয়ায় পরিবারের পাশাপাশি আমাদের কাছে সমাজের অন্য লোকদেরও একটা প্রত্যাশা থাকে। তাই ঈদে বাসায় গেলেই সবার কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। কী চাকরি করছ? কেনো করছ না? হচ্ছে না কেনো? ভালো করে জব প্রস্তুতি নিচ্ছ না কেনো? ইত্যাদি, ইত্যাদি...। সে কারণেই মন কাঁদলেও বাসায় যাই না।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১০-১১ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন শাহ আলম। একবার হলে ঈদ করেছেন। বিসিএস লিখিত পরীক্ষার তারিখ দিয়েছে। সেজন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জব না হলে এক প্রকার মানসিক টেনশন কাজ করে বলে এবারও তিনি বাড়ি যাচ্ছেন না ঈদে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়ন কক্ষগুলোতে এখন শিক্ষার্থীদের কম উপস্থিতি। শুধুমাত্র পড়াশোনার জন্য যারা থেকে গেছেন, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে দেখো গেছে।

এদিকে, হলে ঈদ করা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঈদের দিন বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা’ সূর্য সেন হলের ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য ঈদের দিন সকালে সেমাই এবং দুপুরে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা ঈদের দিনটি আনন্দ সহকারে কাটাক।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৮ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৮
এসকেবি/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।