ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

জয়ের গল্পটা একটু অন্যরকম

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৮
জয়ের গল্পটা একটু অন্যরকম জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারীরা।

ঢাকা: ‘এই গল্পটা একটু অন্যরকম। ছোট বোন নিজে রেজিস্ট্রেশন করার সময় লিখে দিয়েছিল আমার নাম। সেখান থেকেই এতদূর। ফলাফল ঘোষণার সময় যখন অনেকগুলো নাম পার হয়ে গেল, তখন মনে হচ্ছিল, আমি হয়তো নেই। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন আমার নামটা ঘোষণা হলো’। 

এমনটাই বলছিলেন ইরানে অনুষ্ঠিত ২৯তম আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে (আইবিও) ব্রোঞ্চ পদক জয়ী বাংলাদেশের প্রতিযোগী অদ্বিতীয় নাগ।

পাশ থেকে আরেক প্রতিযোগী প্রকৃতি প্রযুক্তি যোগ করেন, ওরা বাংলাদেশকে ‘বেংলাদেস’ নামে ডাকে।

ফলাফল ঘোষণার সময় খুব করে চাইছিলাম, যে নামেই ডাকুক না কেন, বাংলাদেশের নামটা যেন একবার হলেও ডাকে। আর যখন ডাকলো, তখন আমাদের উল্লাসে সেই শব্দ প্রায় মলীনই হয়ে গিয়েছিলো।

মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটে (ডিআরইউ) অনুষ্ঠিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপে এমনটাই বলছিলেন বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের নাম উজ্জল করা এ প্রতিযোগীরা। এ সময় তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আরেক প্রতিযোগী তামজিদ হোসেন তামিম। তার মতে, জীবনের সেরা সময়গুলোর মধ্যে এটি উল্লেখযোগ্য।

ইরানে অনুষ্ঠিত ২৯তম আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে (আইবিও) বাংলাদেশের হয়ে ব্রোঞ্চ পদক জয় করায় অদ্বিতীয় নাগ এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া বাকি প্রতিযোগীদের এ দিন সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারীরা।  রাজধানীর গ্রীন হেরাল্ড স্কুলের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী অদ্বিতীয় নাগ বলেন, যখন ফলাফলে আমার নাম ঘোষণা করলো, আমরা সবাই দৌড়ে বাংলাদেশের পতাকাটা হাতে নিয়েছিলাম। তারপর মেডেল নিতে মঞ্চে যাই। নিজ দেশের পতাকা বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে পারাটা সত্যিই  অনেক ভালো লাগার ব্যাপার। আর এজন্য আমি গর্বিত।

বাংলাদেশে গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড এখন অনেক জনপ্রিয়। কিন্তু সেগুলোর পরিবর্তে জীববিজ্ঞান কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে অদ্বিতীয় বলেন, আমার বাবা-মা দু’জনেই ডাক্তার। তাই জীববিজ্ঞানের সঙ্গে আমার পরিচয়টা অনেক ছোট থেকেই। আর বাবা বলেন, লাইফ সাইন্স ইজ দ্যা বেস্ট সাইন্স, সেই জায়গা থেকেই জীববিজ্ঞানের প্রতি একটু বেশি আকর্ষণ।

অদ্বিতীয়র বাবা ডা. দীপক কুমার নাগ বর্তমানে কর্মরত আছেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ভিট্রিও-রেটিনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে। আর তার মা ডা. রিংকু পাল কর্মরত আছেন রাজধানীর লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে।

বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হলে অদ্বিতীয়র মা রিংকু পাল বলেন, ও ভালো কিছু করবে এমন প্রত্যাশা আমাদের ছিল। ওকে তো আমি ছোট থেকেই দেখে আসছি, সেখান থেকেই ধারণাটা জন্মেছিল। ও সেই প্রত্যাশা পূরণ করেছে, দেশের নাম উজ্জল করেছে। এটা অনেক বড় একটা ব্যাপার।

অদ্বিতীয়র বাবা দীপক কুমার নাগ বলেন, ছেলে বড় হয়ে গাড়ি-বাড়ি করবে এটা স্বাভাবিক প্রত্যাশা। কিন্তু ছেলে যে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে পরিচিত করালো, এটা অনেক বড় প্রাপ্তি।

২৯তম আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের হয়ে আরও অংশ নিয়েছিলেন ভিকারুন্নেছা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসির পরীক্ষার্থী প্রকৃতি প্রযুক্তি, ইন্টারন্যাশনাল টার্কিস হোপ স্কুলের মো. বায়েজিদ মিয়া এবং সরকারি এমএম সিটি কলেজের শিক্ষার্থী মো. তামজিদ হোসেন তানিম।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাখহরি সরকার, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. তারেক আরাফাত, বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের সাধারণ সম্পাদক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী এবং সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভুঁইয়া।  

বাংলাদেশ সময়: ২২২৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৮
এইচএমএস/এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।