ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

অধ্যাপক আকমলকে ক্ষমা চাইতে বলছে শিক্ষক সমিতি

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৮
অধ্যাপক আকমলকে ক্ষমা চাইতে বলছে শিক্ষক সমিতি ঢাবির কলা ভবনের মূলফটকে মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতি। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আকমল হোসেনের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ এনেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (ডুটা)। এজন্য তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে বক্তব্য প্রত্যাহার করার কথা বলেছে সমিতি। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ডুটা’র সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।

বুধবার (২৫ জুলাই) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূলফটকে এক মানববন্ধনে বক্তৃতায় মাকসুদ কামাল এ ‍হুঁশিয়ারি দেন। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে অশোভন ও কটূক্তিমূলক বক্তব্য ও বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টার প্রতিবাদ’ জানিয়ে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

 

গত ১৯ জুলাই নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকদের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক আকমল। ডুটা তার বিরুদ্ধে কটূক্তির অভিযোগ আনলেও অধ্যাপক আকমলের দাবি, সেদিন তার দেওয়া বক্তব্য খণ্ডিত আকারে প্রচার হয়েছে।

অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, শিক্ষক সমিতি চুপ থাকতে পারে না। আমরা শিক্ষক সমিতি থেকে বলেছি তাকে (অধ্যাপক আকমল) নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।  

তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর আজকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন আঘাত করা হয়, তখন এদেশের প্রতিটি ইঞ্চি জায়গার ওপর আঘাত করা হয়। এদেশের মানুষের ধমনীতে আঘাত করা হয়। তিনি যদি নিঃশর্ত ক্ষমা চান এবং এ কথা বলেন, এমন কথা তিনি আর ভবিষ্যতে বলবেন না এবং অন্তরে যদি এমন কথা বিশ্বাস করে থাকেন, তাহলে অন্তর থেকে সে কথা-ধুয়ে মুছে ফেলবেন, তাহলে শিক্ষক সমিতি এ বিষয়ে বিবেচনা করে দেখবে, ভবিষ্যতে আর কোনো কর্মসূচি দেবে কি-না। এটা যদি না হয়, শিক্ষক সমিতি এ বিষয়ে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলন করবে। এমনকি ভবিষ্যতে এদেশের কোনো নাগরিক যেন এমন কথা মুখ থেকে বের করতে না পারেন- যার মাধ্যমে এদেশের মানুষকে অপমান করা হয়, শিক্ষক সমিতি সেই পথে যাবে।  

ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি বলেন, অধ্যাপক আকমল মুক্তিযুদ্ধের সময় টগবগে যুবক, তিনি কেন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেন না? তিনি ৩৭ বছর তার শ্রেণিকক্ষে কী পড়িয়েছেন, সে বিষয়ে দেখার অবকাশ রয়েছে। ১৯৭০ সালে যখন বাংলাদেশের মানুষ একটি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে যাচ্ছিল, তখন এই চীনপন্থী বুদ্ধিজীবীরাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাউঞ্জে বসে বলেছিলেন, ভোটের বাক্সে লাথি মারো বাংলাদেশ স্বাধীন করো। যখন মুক্তিযুদ্ধ হয় তখন তারা বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ হলো দুই কুত্তার কামড়াকামড়ি সুতরাং আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেবো না।  

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন প্রসঙ্গে মাকসুদ কামাল বলেন,  আমরা শুরু থেকেই যে কথা বলেছি- কোটা আন্দোলন এদেশে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন নয়। এটা নির্বাচনের বছর, যেন একটি অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে সরকারকে অস্থিতিশীল করে যেন ক্ষমতায় যাওয়ার একটি পথ উন্মোচন করা যায়, সে ষড়যন্ত্রই করা হয়েছে। (যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা) নিজামী আর সাঈদী বলেছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করার কথা। আজ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তাদের একজনের ফাঁসি হয়েছে আরেকজন জেলে আছে। ছাত্ররা যখন তাদের কথার সুরেই কোটা বাতিলের কথা বলে, যুগের প্রয়োজনে তারপরও আমরা সংহতি প্রকাশ করেছিলাম। এরপরও আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলবো, আপনার মাধ্যমেই এ বিষয়ে যৌক্তিক ও আইনি সমাধান আসতে পারে।

এর আগে ১৯ জুলাই নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকদের সমাবেশে অধ্যাপক আকমল বলেন, ‘এখানে আমার কাছে যেটা মনে হয়, এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানানোর কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। কেননা ইতিমধ্যেই শিক্ষকরা বিভিন্ন ধরনের সমাবেশ করেছেন এবং আমরা সেখানে উপস্থিত থেকেছি। এখন…সেদিন আমার সহকর্মী তানজীমকে (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান) বলা হয়েছে যে সে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল কিনা। এখন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করাটা যদি আপনার এ ধরনের আন্দোলনের… এ ধরনের আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়ার কোনো যোগ্যতা হয়, তাহলে আমার মনে হয়, আমাদের অনেকেই সেই যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হবেন না। এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তানজীম বা ফাহমিদের বয়স মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার বয়সের সমান। আর মুক্তিযুদ্ধের মতো একটা মহান একটি ঘটনা আমাদের জাতির জীবনে, সেটা নিয়ে যেভাবে আপনার অবস্থান নেওয়া হয়, বা বক্তব্য রাখা হয়, তাতে আমার মনে হয়, যে মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করা হয়। আমার প্রশ্ন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী, তিনি কি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন? তার পিতা…তার পিতা, যিনি এই আন্দোলনের যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, যার মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল, তিনি কি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন? তাহলে মুক্তিযুদ্ধের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই যে বিচার করা, কে প্রতিবাদ করতে পারবে, কে অন্যায় করতে পারবে, সেটা আমার মনে হয় অত্যন্ত নেতিবাচক চিন্তা। ’

তার এ বক্তব্যের পর প্রথমে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সচেতন শিক্ষক সমাজ’ মানববন্ধন করে। এরপর ডুটা এ কর্মসূচি পালন করলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৮
এসকেবি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।