ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

সমাবর্তন ঘিরে উৎসবের আমেজ ঢাবিতে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৮
সমাবর্তন ঘিরে উৎসবের আমেজ ঢাবিতে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী দিদার, নুরুল ইসলাম, সুবর্ণা, মশিউর ও মুনতাসির।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় সারিবদ্ধ হয়ে ব্যাচের অন্য বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলছেন। সবার মাথায় সমাবর্তনের ক্যাপ, শরীরে কালো গাউন।

দেখতে নব্য গ্র্যাজুয়েটের ভাব। ছবির ফ্রেমে নিজেদের শেষ সময়গুলো বাঁধাই করছেন। নানা রঙে, নানা ঢঙে।

ক্যাম্পাসের প্রিয় স্থানগুলোর সবখান থেকে যেন একটা করে ছবি চাই। কারণ এসবের সঙ্গে গত পাঁচ বছর মিশে আছে কত স্মৃতি। রাখবেন না-ই-বা কেন? মাত্র একদিন পরেই যে শনিবার (৬ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালযের ৫১ তম সমাবর্তনের মধ্য দিয়ে অফিসিয়ালি সাবেকদের তালিকায় যুক্ত হবে তাদের নাম। তাইতো শেষ সময়ে পুরো ক্যাম্পাস চষে বেড়াচ্ছেন তারা। কখনো অপরাজেয় বাংলা, কখনো টিএসসি, মল চত্বর কিংবা সিনেট আবার ছুটে যাচ্ছেন কার্জনের লাল দালানের সামনে। সবমিলিয়ে সমাবর্তনকে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।

ক্যাম্পাস জীবনের স্মৃতি নিয়ে জানতে চাইলে দিদারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, পাঁচটা বছর কেটে গেল এই ক্যাম্পাসে। যেখানকার প্রতিটি দিনই এক একটি স্মৃতি। দলবেঁধে আড্ডা, ঘুরাঘুরি ও বন্ধুদের সঙ্গে গ্রুপ স্টাডিসহ অসংখ্য চিত্র ভেসে ওঠে। সবকিছুই মিস করব। শুধু দিদার নয়, এ অনুভূতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে অংশ নেওয়া হাজার হাজার শিক্ষার্থীর।

এদিকে সমাবর্তন সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও সেজেছে সমাবর্তনের সাজে। মূল অনুষ্ঠানস্থল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠসহ ক্যাম্পাসের সবখানে শোভা পাচ্ছে ব্যানার, ফেস্টুন। নিজেদের হাজারো আবেগ-স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক কার্জন হল, টিএসসি, রাজু ভাস্কর্য, স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর, কলা ভবন, বটতলা, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ চত্বর, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, সিনেট ভবন, হলসবখানেই ফ্রেমবন্দি করে অতীতকে ধরে রাখার প্রণান্তকর চেষ্টা গ্র্যাজুয়েটদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের সোনালি অর্জনের আনন্দ ভাগাভাগি করতেই অনেকেই প্রিয় মা-বাবাকে ক্যাম্পাসে নিয়ে এসেছেন। নিজের গাউন ক্যাপ দিয়ে ঘুরে ঘুরে তুলছেন ছবি। সন্তানের এমন আনন্দের দিনে অভিভাবকরাও উচ্ছ্বসিত।

কলা ভবনের বটতলায় সবুজ চত্বরে বান্ধবীদের সঙ্গে ফ্রেমবন্দি হওয়ার পাশাপাশি আড্ডা দিচ্ছিলেন আইন বিভাগের ছাত্রী নুসরাত জাহান।

নুসরাত জাহান বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু-বান্ধবীরা স্কুল-কলেজের ফ্রেন্ডদের চেয়ে আলাদা। পাঁচটা বছর আমরা ছিলাম পরিবারের সদস্যদের মতো। অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন, বিপদে-আপদে সবাই সবার পাশে ছিলাম। কর্মক্ষেত্র আলাদা হওয়ার কারণে দূরে থাকতে হবে হয়তো, কিন্তু যে বন্ধনটা তৈরি হয়েছে সেটা কোনো দিন ছিন্ন হওয়ার মতো নয়।

ঢাবির শিক্ষার্থী ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের অধীনে অধিভুক্ত কলেজগুলোর গ্র্যাজুয়েটরা অংশ নেবেন সমাবর্তনের অনুষ্ঠানে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের অধীনে ফিজিওথেরাপি থেকে গ্র্যাজুয়েট করা আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সমাবর্তনের মাধ্যমে আমরা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাচ্ছি। এখন আমরা নিজেদের দেশের সেবায় নিযুক্ত হতে পারব। একাডেমিক লাইফে অনেক স্মৃতি রয়েছে সেগুলোকে ভীষণ মিস করবো।

বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সমাবর্তন মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

অনুষ্ঠানস্থলের আশেপাশে ও মূল মঞ্চে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের তল্লাশি চালায়। আর গ্র্যাজুয়েটরাও ঘুরে ঘুরে দেখেন পুরো অনুষ্ঠানস্থল।

ঢাবির ৫১তম সমাবর্তন অনুষ্ঠান শনিবার সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও  রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সভাপতিত্ব করবেন। এবারের সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখবেন ঢাবির ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। অধিভুক্ত সাত কলেজের রেজিস্ট্রেশন করা গ্র্যাজুয়েটরা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজ ভেন্যু থেকে সরাসরি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। ৫১তম সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য ২১ হাজার ১শ’ ১১জন গ্র্যাজুয়েট রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এই সংখ্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তনের ইতিহাসে সর্বাধিক। অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ৯৬টি স্বর্ণপদক, ৮১জনকে পিএইচডি এবং ২৭জনকে এমফিল ডিগ্রি দেওয়া হবে। ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ৫১তম সমাবর্তন অনুষ্ঠান সফল করতে গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৮
এসকেবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।