ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করলেন ভাসানীর ৫৬ শিক্ষক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০১৮
পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করলেন ভাসানীর ৫৬ শিক্ষক

টাঙ্গাইল: পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) ৫৬ শিক্ষক।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পাঁচ নেতাকে বহিষ্কার করায় মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে শিক্ষকরা নিজেদের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেন।  এর আগে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন তারা।

এদিকে, সংগঠনের নেতাদের বহিষ্কারের প্রতিবাদে এবং বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিনেন্স সংশোধনের দাবিতে মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। সংবাদ সম্মেলন করে তারা বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

প্রক্টর ড. সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, সোমবার উপাচার্যের সভাপতিত্বে রিজেন্ট বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রোববার পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে জোর করে পরীক্ষা দেওয়ানোকে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাদের অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়টি আলোচনা করা হয়।  ওই সভায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার, সহসভাপতি ইমরান মিয়া ও পান্না দাস এবং যুগ্ম সম্পাদক জাবির ইকবাল ও ইয়াসিন আরাফাত। মঙ্গলবার তাদের সাময়িক বহিষ্কারের চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না সাতদিনের মধ্যে তার কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।  

অন্যদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. পিনাকী দে বাংলানিউজকে জানান, শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণে জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় প্রশাসনের বিভিন্ন দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করা শিক্ষকদের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

প্রক্টর জানান, সোমবার রিজেন্ট বোর্ডের সভায় বোর্ড সদস্য নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য সাইদুল হক চৌধুরীকে প্রধান করে একটি অর্ডিনেন্স সংশোধনী কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদের ডিন এ কমিটির সদস্য। এছাড়া রোববার শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের ঘটনায়ও বোর্ড সদস্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শরীফ এনামুল কবিরকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।  

এদিকে, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মহিউদ্দিন তাসনিমের বিরুদ্ধে ওই বিভাগের এক শিক্ষার্থীর আনা যৌন হয়রানির অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘যৌন নির্যাতন ও হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’কে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।  

প্রসঙ্গত, শনিবার দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ। এ পরীক্ষায় ঈশিতা বিশ্বাস নামে এক ছাত্রী উত্তীর্ণ হতে পারেননি। জিপিএ-৪ এর মধ্যে তিনি পেয়েছেন ১.৯৮। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সর্বনিম্ন পাস নম্বর জিপিএ- ২.২৫। এদিকে, রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ছিল কোয়ান্টাম মেকানিক্স-১ পরীক্ষা। কিন্তু ওই ছাত্রী পদার্থে  উত্তীর্ণ না হওয়ায় বিভাগ তাকে কোয়ান্টাম মেকানিক্স-১ পরীক্ষার অনুমতি দেয়নি। কিন্তু পরীক্ষার একদিন আগে ফলাফল ঘোষণাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ বিরোধী উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার তার সহযোগীদের নিয়ে ঈশিতাকে জোড় করে পরীক্ষার সিটে বসিয়ে দেন। বিভাগের শিক্ষকরা এতে বাধা দিতে গেলে সজীব পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মনিরুজ্জামান, শিক্ষক ড. আনোয়ার হোসেন ও মহিউদ্দিন তাসনিনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং মারধর করতে উদ্যত হন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঈশিতাকে পাহারা দিয়ে সম্পূর্ণ পরীক্ষা শেষ করান।  

পরীক্ষা শেষে তারা সব শিক্ষার্থীকে ডেকে অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করেন। এ সময় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা বন্ধ করা হয়। অসৌজন্যমূলক আচরণে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোমবার দুপুরে প্রশাসনের বিভিন্ন দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছিলেন ৫৬ শিক্ষক।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।