ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

আতিথেয়তার অনন্য দৃষ্টান্ত নোয়াখালী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৮
আতিথেয়তার অনন্য দৃষ্টান্ত নোয়াখালী আমরা-ই নোয়াখালী সংগঠন। ছবি: বাংলানিউজ

নোয়াখালী: লক্ষাধিক শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আবাসন ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে আতিথেয়তার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো নোয়াখালীবাসী।

সারাদেশ থেকে আগত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অবাক বিস্ময়ে উপভোগ করলো এমন অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তি। সব অনিশ্চয়তা হারিয়ে গেলো আতিথেয়তার বন্ধনে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসা আর কৃতজ্ঞতায় ভাসছে নোয়াখালীর মানুষের উদারতা ও প্রতিদানের কথা।

এনএসটিইউ অ্যাডমিশন হেল্পলাইন ২০১৮-১৯ এর ফেসবুক পেজ থেকে ইফতেখার নামে এক শিক্ষার্থীর মুগ্ধতা ও কৃতজ্ঞতার চিত্রটা এরকম:-
 
‘ট্রেনে কুমিল্লার লাকসাম থেকে বাম দিকে (দক্ষিণে) গেলেই একটা বৃহত্তর জেলা। এই জেলার মুখে ঢুকলেই বাতাসের ঝাপটাই বলে দেয় এটাই নোয়াখালী।

ট্রেন থেকে নামামাত্র এক ভাই আমার ব্যাগগুলো নামিয়ে দিলেন। আরেকজন ব্যাগগুলো নিয়ে স্টেশনের কাউন্টারে। আমি বললাম কোথায় যাচ্ছেন?

উনি বললেন: আপনার থাকার জায়গার ব্যবস্থা করতে, আসেন। আমি বললাম ভাই আমি তো আপনাকে চিনি না।

উনি বলেলন: তো কি হইসে, আসেন। ওদের গাড়িতে করে নিয়ে থাকার জায়গা দিলো রাতের খাবার, সকালের নাস্তা। আমি বাংলাদেশের কোথাও এমনটা দেখি নাই। ভাই মনের মধ্যে যেভাবে আপনারা জায়গা করে নিছেন তা কখনো ভুলব না।

এখানকার অলিগলি মনে হয়েছে যেন আমি সব চিনি। অনেক পরিচিত। আসার সময় দাঁড়িয়ে আছি। এক ভাই বললো আসেন। তখন আমি উনাকে কিছু জিজ্ঞেস করি নাই। দেখছিলাম উনি কি করেন। আমাকে চৌরাস্তার একটা সিএনজিতে তুলে দিলেন। আবার জিজ্ঞেস করলেন ভাই ভাড়া আছে তো। আমি তো পুরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। আমি বললাম ভাই আমি তো আপনাকে চিনিই না।

উনি বললেন: তো কি হইসে। আমরা এমনই। ভাড়া না থাকলে বলেন। না হয় আমি যাই আরো অনেককে হেল্প করতে হবে। এরপর সিএনজি চালক আমাকে নিজে এসে বাসে তুলে দিলেন।

আমি এইবারই এখানে প্রথম এসেছি কিন্তু একবারের জন্যও মনে হয়নি আমি আমার জেলার বাইরে আছি। আসলে আমি এমন কিছু আশা করিনি। মনে হচ্ছে ওদের শরীরের সবটাই কলিজা। ধন্যবাদ নোয়াখালী। আমি আবার ফিরে আসব তোমার কাছে। ’

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার জন্য সারাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের টানা তিন দিনব্যাপী সহযোগিতা ও আপ্যায়ন করে যাচ্ছে নোয়াখালীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। এমন সহযোগিতা ও আপ্যায়নে মন ছুঁয়ে গেলো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের।

স্বেচ্চাসেবী সংগঠন।  ছবি: বাংলানিউজ

বাংলাদেশের দক্ষিণের একটি জেলা নোয়াখালী। ২০০৫ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) প্রতিষ্ঠিত হয় । প্রথমে স্বল্প পরিসরে কার্যক্রম শুরু হলেও দিনদিন এর ব্যাপ্তি প্রসারিত হয়েছে কয়েকগুন। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধুমাত্র ভর্তি যুদ্ধে অংশ নেয় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। কিন্তু এই বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীরা যখন তাদের অভিভাবকসহ একসঙ্গে কয়েকদিনের জন্য নোয়াখালী আসেন, তখন শহরের সকল আবাসিক হোটেল বা সরকারি বেসরকারি গেস্ট হাউজে জায়গা দেওয়া সম্ভব না। এতে ভোগান্তি পড়েন দেশের দূর-দূরান্তের জেলা থেকে আগত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।  

সেই সমস্যাকে দূর করতে আতিথেয়তার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে নেমেছে নোয়াখালী পৌরসভা, সদর উপজেলা পরিষদ, জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা ছাত্রলীগ, জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আমরা-ই নোয়াখালীসহ নানা সংগঠনের কর্মীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে তিন দিনব্যাপী ভর্তি পরীক্ষা শুক্রবার (২৬ অক্টোবর) থেকে শুরু হয়েছে। এ পরীক্ষা চলবে আগামী রোববার (২৮ অক্টোবর) পর্যন্ত। এবার ৩০টি বিষয়ে এক হাজার ৩২০ আসনের বিপরীতে ভর্তির জন্য আবেদন জমা পড়েছে ৭০ হাজার ২৯৮টি। সে হিসেবে প্রতি আসনের জন্য লড়বে ৫৩ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী।  

প্রথমদিন শুক্রবার এ এবং বি ইউনিটের পরীক্ষা যথাক্রমে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দিন শনিবার সি এবং ডি ইউনিটে পরীক্ষা সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। তৃতীয় দিন রোববার ই এবং এফ ইউনিটের পরীক্ষা যথাক্রমে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১১টা এবং বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাড়াও জেলা সদর এবং বেগমগঞ্জ উপজেলার ২৯টি কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্লাহ খাঁন সোহেল বাংলানিউজকে জানান, পৌরসভার চারটি স্থানে (মাইজদী বাজার সোনালী ব্যাংকের সামনে, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, টাউন হল মোড় ও সোনাপুর রেলস্টেশনের পাশে) শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরী তথ্য সেবাকেন্দ্র বসানো হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের রাতে থাকার জন্য পৌর এলাকায় অবস্থিত সব মসজিদ ও মাদ্রাসায় ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা এসব স্থানেও জায়গা পাবেন না (বিশেষ করে ছাত্রী) তাদের জন্য পৌরসভা কার্যালয়ের তৃতীয় তলা ও মেয়রের বাড়িতে আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।  

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা।  ছবি: বাংলানিউজ

তিনি আরো জানান, শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, যাতায়াতের সুবিধার্থে জাতীয় পতাকা সম্বলিত মোটরবাইকের ব্যবস্থা, প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে পৌরসভার লগো সম্বলিত কলম প্রদান এবং শিক্ষার্থীদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন বাংলানিউজকে জানান, ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মিলিয়ে প্রায় লক্ষধিক মানুষের সমাগম হচ্ছে। এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে কোনভাবেই আবাসিক হোটেল বা সরকারি বেসরকারি গেস্ট হাউজে জায়গা দেওয়া সম্ভব না। তাই মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের জন্য সদর উপজেলা পরিষদ, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসা, রেডক্রিসেন্ট ভবন, এফপিএনবিসহ বিভিন্ন স্থানে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পড়াশোনায় ব্যস্ত কয়েকজন শিক্ষার্থী।  ছবি: বাংলানিউজ

এদিকে, নোয়াখালী-৪ (সদর-সূবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করীম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ভর্তিচ্ছুদের চলাচলের জন্য ৩০টি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে শহরে বিনা ভাড়ায় সহজেই যাতায়াত করতে পারে। এছাড়াও ৩০ হাজার লিটার পানি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করেছেন। এছাড়া শহরে যাতে যানজটের সৃষ্টি না হয় সেজন্য প্রতি মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরা যানবাহন নিয়ন্ত্রণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৮
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।