মাঘের এ শীতে খুবি সৌন্দর্যের ডালি খুলে রেখেছে। শীতে এক অন্যরকম খুবি ক্যাম্পাস।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজার শিক্ষার্থীর উৎসবমুখর পদচারণায় ক্যাম্পাসে তৈরি হয় অন্যরকম আনন্দময় আবহ।
শীতের সকালে সব থেকে মনোমুগ্ধকর আকর্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক জুড়ে। লেকের দু’পাশে সবুজ বৃক্ষের নুয়েপড়া ডাল-পাতা থেকে ঝরেপড়া শিশিরের টুপটাপ শব্দ আর মাঝে মাঝে দু’একটা পাখির কলরবে আন্দোলিত হয়ে ওঠে। কুয়াশা ভেদ করে যখন সকালের প্রথম সূর্য লেকের উপর উঁকি মারে তখন ঝলমল করে ওঠে তার চারপাশ। এক অভিন্ন অপরূপ স্নিগ্ধময় আলোকসজ্জ্বা নজর কেড়ে নেবে যে কারও।
হলে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, অনেক রাত করে তারা ঘুমায়। কুয়াশা ঠেলে সূর্যটা উঁকি দিতে দিতে প্রায় দুপুর হয়ে যায়, কিন্তু তাদের তো আলসেমি করার সুযোগ নেই।
তারা আরও জানান, প্রচণ্ড শীতের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মানিয়ে নিতে হয়। ছোট ছোট আনন্দের উপলক্ষ খুঁজে বের করে শীতকে তারা উপভোগ করেন। শীতকালের মজাটা আলাদা। ক্যাম্পাসে প্রতি শীতে ব্যাডমিন্টন খেলা হয়। চায়ের কাপের উত্তাপ, ভাপা পিঠার ধোঁয়া কিংবা ব্যাডমিন্টন খেলার আনন্দ শিক্ষার্থীদের হৃদয়টাকে উষ্ণ করে। শীত তাদের কাবু করতে পারে না।
বুধবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষর্থী সায়মা সুলতানা মীম বাংলানিউজকে বলেন, শীতের প্রকৃতি আমার ভালো লাগে। শীতের সকালে আমাদের ক্যাম্পাস আরো বেশি সুন্দর লাগে। আমি অপরাজিতা হলে থাকি এবং রোজ শীতের সকালে ক্যাম্পাসে হাঁটতে বের হই। সকালের চা নাস্তা আমি হলের বাইরে করি। সকালবেলা হাঁটতে এসে বন্ধুরা মিলে তপনের চা দোকানে আড্ডায় মেতে উঠি।
খুবির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তৈয়েবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমার কাছে মনে হয় ক্যাম্পাস জীবনে শীত আসে আনন্দের বার্তা নিয়ে। ক্যাম্পাসের অপরূপ প্রকৃতি এবং চারদিকে সবুজ গাছের সমারোহের কারণে খুবি শীতে অনন্যা। সবুজ ক্যাম্পাসকে একটু রঙের ছোঁয়া লাগায় শীতে ফোটা রং বে-রঙের ফুল।
তিনি জানান, অনেকে শীতে উঞ্চতা খুঁজতে খেলার মাঠ, মুক্ত মঞ্চ, শহিদ মিনারের সামনে গ্রুপ স্টাডি করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফুলে ফুলে ভরে গেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। গাছ ঠাঁসা ফোটা এসব ফুলের মিষ্টি সুবাসে পাগলপারা মৌমাছি আর প্রজাপতিরা। যা দেখে মুগ্ধ সবাই। ডালিয়া, জিনিয়া, হরেক রকম গাদা, গোলাপের মতো নাম জানা নানা বর্ণের ফুল তো আছেই, তার সঙ্গে ফুটেছে এবার নতুন নতুন নামের নানা আকার ও বর্ণের অসংখ্য ফুল। শীতকালীন নানা প্রজাতির প্রস্ফুটিত এ ফুলের সমারোহে এখন সুশোভিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ফুলে ফুলে সজ্জিত ক্যাম্পাস যেনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা নয়ন জুড়ানো সৌন্দর্যমুগ্ধ কোনো ছবি। আর ফুলে সুশোভিত ক্যাম্পাস দেখতে আসছেন প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থী। তারা ফুলের বাগানে ঘুরছেন। ছবি তুলতেই যেন তারা বেশি ব্যস্ত। তবে সেলফি তুলতেও ভুলছেন না। বেশিরভাগই আসছেন সপরিবারে।
ক্লাসের ফাঁকে মুক্ত মঞ্চ, হাদি চত্বর, অদম্য বাংলা, আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সামনে ও খেলার মাঠের সামনে অনেকে গ্রুপ স্টাডি করছেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ইংরেজি ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক সামিউল হক বাংলানিউজকে বলেন, শীতে সৌন্দর্যের ডালি খুলেছে খুবি ক্যাম্পাস। এ সময় ক্যাম্পাসে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে এখানকার বাগানগুলোতে ফুটে থাকা নানা রঙের ফুল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত উপভোগ করেন এ সৌন্দর্য। প্রশাসনিক ভবন, বিভিন্ন বিভাগের সামনে, শহীদ মিনারের পাশে, বিভিন্ন হলের ভেতর, সবখানে যেন একই চিত্র। নানা রঙের ফুলের পসরা যেন সাজিয়ে বসেছে খুবি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মহানগরী খুলনা থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক সংলগ্ন ময়ূর নদীর পাশে এক মনোরম পরিবেশে গল্লামারীতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। প্রতিষ্ঠাকালের দিক থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নবম। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী এখানে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা, চারুকলাসহ অন্যান্য বিষয়ের প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বুয়েটের পরই ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স ক্রেডিট পদ্ধতি চালু হয়।
বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি স্কুল (অনুষদ) ও ২টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। এখানে মোট ২৯টি ডিসিপ্লিনে (বিভাগ) শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়মিত ব্যাচেলর ডিগ্রি, ব্যাচেলর অব অনার্স ডিগ্রি, মাস্টার্স ডিগ্রি, এম ফিল এবং পিএইচডি দেওয়া হয়।
স্কুলগুলোর মধ্যে কলা ও মানবিক স্কুলের আওতায় রয়েছে ইংরেজি, বাংলা এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিন। আইন স্কুলের আওতায় রয়েছে আইন ডিসিপ্লিন।
জীববিজ্ঞান স্কুলের আওতায় রয়েছে অ্যাগ্রো টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি, ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি, ফার্মেসি ও সয়েল ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিসিপ্লিন।
ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের আওতায় রয়েছে ব্যবসায় প্রশাসন এবং হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিন।
বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের আওতায় রয়েছে আর্কিটেকচার, আরবান অ্যান্ড রুরাল প্লানিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান এবং পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিন।
সমাজ বিজ্ঞান স্কুলের আওতায় আছে অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের আওতায় তিনটি ডিসিপ্লিন চালু রয়েছে, এগুলো হলো ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং, প্রিন্টমেকিং ও ভাষ্কর্য ডিসিপ্লিন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪শ। ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে প্রায় সাত হাজার। এছাড়া কর্মকর্তা রয়েছেন আড়াই শতাধিক এবং কর্মচারী রয়েছে দুই শতাধিক। শিক্ষাকার্যক্রমের গত ২৮ বছরে ২৪টি ব্যাচ থেকে উত্তীর্ণ গ্রাজুয়েট সংখ্যা ১০ সহস্রাধিক। যারা দেশে-বিদেশে দক্ষতা, সুনাম ও সাফল্যের সঙ্গে নানা পেশায় কাজ করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৯
এমআরএম/এসএইচ