বাংলাদেশের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট খ্যাত ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের কাছ থেকে তারা যুগোপযোগী ইশতেহার চেয়েছেন। পাশাপাশি বিজয়ী হয়ে প্রতিশ্রুত ইশতেহার বাস্তবায়ন করে শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন বলেই প্রত্যাশা করেন।
তারা বলছেন, ডাকসু অচল থাকায় শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কেউ কথা বলতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে বাজেট অধিবেশনে ছাত্র প্রতিনিধি অনুপস্থিতি ছিল বছরের পর বছর। ডাকসুর ফি সচল থাকলেও শিক্ষার্থীদের সমস্য সমাধানে তেমন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। তাই এবারের ডাকসু নির্বাচন বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিষ্ঠার শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে এলেও আবাসন সমস্যা বেড়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট, নিরাপত্তা, অ্যাকাডেমিক বিষয়, খাবারের মান, শিক্ষক নিয়োগ, পরিবহনসহ শিক্ষার্থীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় প্রার্থীদের গুরুত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে জোর দিয়েছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্দীন হলের মাস্টার্সের ছাত্র মারুফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে অন্য সময়ের চেয়ে। বিশেষ করে আবাসন সমস্যা, ক্যান্টিনে খাবারের মান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা কথা বললেও কর্তৃপক্ষ সেভাবে আমলে নেয়নি।
‘ডাকসুর ছাত্রবান্ধব নেতৃত্ব নির্বাচিত হলে এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। যেসব সংগঠন তাদের ইশতাহার-প্যানেলে এসবের প্রতিফলন ঘটিয়ে শিক্ষার্থীদের মন জয় করতে পারবে তাদের জয় নিশ্চিত। ’
শিক্ষার্থীদের সমস্যা চিহ্নিত করে ইশতেহারের পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন মনোবিজ্ঞানের ছাত্র নাঈম। তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতির নিয়মতান্ত্রিক ধারা ফিরে আসুক। হলে হলে কৃত্রিম সিট সংকট দূর হোক, গড়ে উঠুক একঝাঁক তরুণ নেতৃত্ব; যারা শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় সাহসী ভূমিকা রাখবে।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ডাকসু নির্বাচনে যারা ভোটার তারা সবাই প্রার্থী হতে পারবেন। তাই যোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করতে ইশতেশার-ই ভূমিকা রাখবে মনে করছেন রোকেয়া হলের মাস্টার্সের ছাত্রী মুনিরা দিলশাদ।
তার মতে, শিক্ষার্থীদের সমস্যা চিহ্নিত করে প্রকাশের পাশাপাশি নির্বাচিত হলে এসব সমস্যা দূরীকরণ স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
এদিকে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলেও সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। চিশতী হোসাইন চৌধুরী নামে এক ছাত্র বলেন, একটি সিস্টেম নতুন করে প্রতিষ্ঠা করার চেয়ে বিলুপ্তপ্রায় সিস্টেমকে পুনর্বহাল করা অধিকতর কঠিন। ২৮ বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন না হওয়ার সংস্কৃতি চালু থাকলেও ইশতেহার ঘোষণা এবং বাতিলের সংস্কৃতি দম ফেলে ফেলে চলেছে।
‘ক্রিয়াশীল সংগঠনের প্রতি প্রত্যাশা থাকবে ইশতেহার বাতিলের সংস্কৃতির প্রভাবক হবেন না তারা। আর প্রশাসনের প্রতি প্রত্যাশা তারা ইশতেহার বাতিলের বাস্তবায়নকারী হবেন না। আশা করি সুষ্ঠুভাবেই ভোট হবে। ’
অর্থনীতি বিভাগের ইমরান আহমদ বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রথম কাজ হবে হলের আবাসন সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য করা। এই সমস্যা বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব থেকে বড় সমস্যা।
তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যাবস্থাপনা বিভাগের এক ছাত্র বলেন, নির্বাচন আমাদের প্রাণের দাবি। কিন্তু এটা নিয়ে অস্থিতিশীল কোনো কিছুই চাই না। সুষ্ঠুভাবে ভোট হোক এবং নির্বাচিতরা ক্যাম্পাসের সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হোক। শিক্ষার্থীদের দাবি বুঝতে চেষ্টা করুক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে নিশ্চিত করছে একাধিক সূত্র। ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক এসএম মাহফুজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে স্পষ্ট বলা যাবে না। মার্চের ১১ তারিখ যেহেতু নির্বাচন, আমরা একটা সময় হাতে রেখে তফসিল ঘোষণা করবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৯
এসকেবি/এমএ