দিনাজপুর সদর উপজেলার পুলহাট করিমুল্লাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এক মাঠে স্কুল রয়েছে দু’টি। একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং অন্যটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল।
সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত টিনের ছাউনিতে প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদেন ক্লাস নেওয়া হয়। আর বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হয়। গত বছর জুলাই মাসে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য বিদ্যালয়ের একটি ভবন ভাঙা হয়। কিন্তু প্রায় সাত মাস হয়ে গেলেও ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র সুমন ইসলাম (৫) বাংলানিউজকে জানায়, ‘বড়রা যখন মাঠে খেলাধুলা করেন তখন আমারা ঠিক মতো ক্লাস করতে পারি না। আমাদের ক্লাস রুম চারিদিকে খোলা থাকায় অনেক ধুলাবালি ঢুকে। পড়াশোনা করতে অনেক সমস্যা। ধুলাবালির কারণে আমাদের নিশ্বাস নিতে সমস্যা হয়। ’
বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সাবিনা (৭) বাংলানিউজকে জানায়, ‘স্কুলে এসে পড়াশোনা করতে খুব ভালো লাগে। স্কুলের শিক্ষকরা খুব ভালো করে আমাদের পড়াশোনা করান। শ্রেণিকক্ষ কম থাকায় যখন আমাদের মাঠের মধ্যে ক্লাস করতে হয় তখন খুবই খারাপ লাগে। ইচ্ছে হয় এখনই বাড়িতে চলে যাই। গত বছর আমাদের ক্লাস রুমের বিল্ডিংটা নতুন করার জন্য ভাঙে দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক দিন পার হওয়ার পরেও নতুন ক্লাস রুম করার কাজ শুরুই করেনি। এখানে ক্লাস করতে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। ’
অভিভাবক নজরুল ইসলাম ও আকলিমা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘গত বছরের জুলাই মাসে ক্লাস রুমের ভবনটি ভেঙে দেওয়া হয়। তখন কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের বলেছেন— কয়েক মাসের মধ্যে নতুন ভবন হয়ে যাবে। কিন্তু দীর্ঘ সাত মাস হয়ে গেলেও নতুন ভবন হওয়ার তো দূরে কথা কাজই শুরু করতে পারেনি। এতে করে আমাদের সন্তানরা স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। আগামীতে বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীরা কিভাবে ক্লাস করবে তা নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যথা নাই। ’
পুলহাট করিমুল্লাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রায়েবা খানম বাংলানিউজকে বলেন, ‘ছোট ছোট শিশু শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে মাঠে টিনের ছাউনির মধ্যে ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছি। বাচ্চাদের মাঠে ক্লাস নেওয়ায় অনেক অভিভাবক অসন্তুষ্ট হয়ে তাদের বাচ্চাকে অন্য স্কুলে নিয়ে যাচ্ছেন। এমন সমস্যা নিয়ে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। স্কুলের বর্তমানে প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থীরা রয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়েছেন— স্কুলের জন্য একজন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো কাজ শুরু করেনি ঠিকাদার। ’
স্কুল নির্মাণ কাজের ঠিকাদার ও শেখপুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মোমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘কাজ করার জন্য কোনো কার্যাদেশ পাননি, তাই কাজ শুরু করেননি। কার্যাদেশ পেলেই কাজ শুরু করবেন’ বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খলিলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পুলহাট করিমুল্লাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য কিছুদিন আগে একটি টেন্ডার হয়ে গেছে। শেখপুরা ইউপি চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণের কাজটি পেয়েছে।
মৌখিকভাবে ওই ওই প্রতিষ্ঠানকে ভবন নির্মাণ কাজ করতে বলা হয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যে লিখিতভাবে নির্দেশনা দেওয়া হবে বলেও জানান স্থানীয় সরকারের এ নির্বাহী প্রকৌশলী।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৯
জিপি