বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডাকসু নির্বাচনে যে কেউ অংশগ্রহণ করতে পারলেও বড় ভূমিকা থাকে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ও বিরোধী সংগঠনগুলোর। যার কারণে লড়াইটা হয় তাদের সমর্থিত প্যানেলের মধ্যে।
এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্যানেল, প্রগতিশীল ছাত্রজোট, স্বতন্ত্র জোট, ইসলামী শাসনতন্ত্র, ছাত্রমুক্তিজোটসহ বেশ কয়েকটি প্যানেলের প্রার্থীরা।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নির্বাচনে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ মনোনীত প্রার্থী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, ছাত্রদলের মোস্তাফিজুর রহমান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নূরুল হক নূর, প্রগতিশীল ছাত্রজোটের লিটন নন্দী ও স্বতন্ত্র জোটের অরণি সেমন্তি খানের মধ্যে।
বাকি ১৬ প্রার্খীই ক্যাম্পাসে অপরিচিত, শিক্ষার্থীদের কাজে সংযোগ না থাকা, ছাত্রসংগঠনের সমর্থন না থাকা, দীর্ঘ দিন পরে নির্বাচন হচ্ছে স্মৃতি হিসেবে মনোনয়ন নেওয়ার কারণে মূল আলোচনায় আসতে পারবেন না ধারণা অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর।
দল ক্ষমতায় থাকা, হলে একক অবস্থান, জনপ্রিয়তা, কর্মীর কারণে পর্যবেক্ষণে এগিয়ে থাকছে ছাত্রলীগ। যদিও নির্বাচনী প্যানেলে স্থান না পাওয়া, পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি না হওয়া ও দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে বাধ্য করায় অসন্তুষ্টিও আছে একাংশের নেতকর্মীদের মধ্যে।
তারপরেও সার্বিক বিবেচনায় আইন বিভাগের ছাত্র ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন। নির্বাচিত হলে কি বিষয় নিয়ে কাজ করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের প্যানেল জয়লাভ করলে আবাসিক হল, খাবারের মানও উন্নয়ন করব। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভর্তুকি দেবে। শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে কর্মপরিকল্পনা করব।
ডাকসু নির্বাচনের ভিপি প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ইংরেজি বিভাগের ছাত্র নূরুল হক নূর। আন্দোলনকালীন সময়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে সহমর্মিতা পেয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে প্রতিবাদ আন্দোলনে ভূমিকা ছিল সংগঠনটির।
এসব কারণে নির্বাচনে প্রচুর সাড়া পাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে বিদ্যমান সমস্যাটা হচ্ছে যারা ক্ষমতায় থাকে তারা আধিপত্য বিস্তার করে দখলদারিত্ব বজায় রাখতে চায়। আমরা সেই জায়গাটা বন্ধ করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। গণরুম, গেস্ট রুম বন্ধ করে প্রথমবর্ষ থেকে সিট নিশ্চিতে কাজ করার চেষ্টা করব। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে সবুজায়ন, মেডিকেল, পরিবহন, একাডেমিক সব বিষয়ে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার চেষ্টা করব।
নেতাকর্মীরা হলে অবস্থান করতে না পারলেও ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মধুর ক্যান্টিনে আসতে পারে ছাত্রদল। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর তারাও প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিগত দশ বছরে দৃশ্যমান কার্যক্রম চালাতে না পারলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সরকারবিরোধী এ ছাত্রসংগঠনের ভোটার রয়েছে। যার কারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন তারাও। এ প্যানেলর ভিপি প্রার্থী লোক প্রশাসন বিভাগের (সান্ধ্যকালীন) মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি ২০০৯-১০ সেশনে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেন। বাংলানিউজকে ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজ বলেন, প্রতিকূল পরিবেশেও ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করার চেষ্টা করেছে। নির্বাচিত হলে আবাসন, গ্রন্থাগার আধুনিকীকরণ, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে পরিবহন বিষয় নিয়ে কাজ করব। প্রচারণায় শিক্ষার্থীদের সাড়া পাওয়ার পাশাপাশি সুষ্ঠু ভোট হলেও নির্বাচনে জয় লাভ করবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দীকে ভিপি প্রার্থী করে পূর্ণ প্যানেল দিয়েছিল প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ঐক্য। কিন্তু পরবর্তীতে মতানৈক্য হওয়ায় ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীরসহ একটা অংশ স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে দাঁড়ান। যার কারণে বামজোটের এ ভাঙন ভোটে প্রভাব ফেলবে। জানতে চাইলে ভিপি প্রার্থী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের (সান্ধ্যাকালীন) লিটন নন্দী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। আমাদের আহ্বান থাকবে শিক্ষার্থীরা সবাই ভোট দিতে আসুক। তাদের অধিকার প্রয়োগ করুক, যাকে ইচ্ছা ভোট দিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনুক।
ওই চার প্রার্থীর বাইরে আলোচনায় রয়েছেন নারী ভিপি প্রার্থী স্বতন্ত্র জোটের অরণি সেমন্তি খান। বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের এ ছাত্রী মেয়েদের হলের সমস্যার পাশাপাশি সার্বিক বিষয় নিয়ে কাজ করতে চান। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমরা কোনো ছাত্র সংগঠনের না হওয়ায় শুধুমাত্র ছাত্রদের ছাড়া কারো কাছে জবাবদিহি করতে হবে না। তবে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হওয়ায় আমরা শঙ্কিত। জোর করে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য করা হচ্ছে। কর্মচারীদের নিয়ে ব্যানার লাগানো হচ্ছে। আমরা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ চাই।
অন্যান্য সংগঠনগুলোর মধ্যে থেকে ভিপি প্রার্থীরা হলেন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের এসএম আতায়ে রাব্বী, ছাত্রলীগ-বিসিএল নাইম হাসান, ছাত্রমৈত্রীর মো. রাসেল শেখ, ছাত্রমুক্তিজোটের শিহাব শাহরিয়ার সোহাগ। স্বতন্ত্র ও অন্যান্যা ভিপি প্রার্থীরা হলেন- মো. আব্দুল আলীম, মো. গোলাম রাসেল, এডিএম আব্বাস আল কোরেশী, সফিক সরকার, আবদুল্লাহ আল লাবিব, আবদুল্লাহ জিয়াদ, ওমর ফারুক, টিটো মোল্লা, ফাহমিদা মজিদ, শফিকুল ইসলাম, ওমর ফারুক, নকীবুল হাসান ও মো. রাকিবুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৯
এসকেবি/এসএইচ