আহতদের মধ্যে অন্তত ১৭ শিক্ষার্থীর অবস্থা গুরুতর। তাদের মধ্যে ১০ জন রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, ছয়জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ও একজনকে ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউটে অব নিউরোসায়েন্সে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ময়মনসিংহ বঙ্গ ও উত্তর বঙ্গের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। রাত দেড়টা পর্যন্ত দুই পক্ষই রড ও লোহার পাইপ নিয়ে ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ ও আবাসিক হলগুলোতে সংঘর্ষে জড়ায়। পরে শেরে-ই-বাংলা নগর থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে।
সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (১০ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে প্রশাসন। পাশাপাশি বন্ধ ছিল শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রমও। সংঘর্ষ থামলেও ক্যাম্পাসে এখনও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বুধবার বিকেলে শাখা ছাত্রলীগের উদ্যোগে ক্যাম্পাসে মিছিল হওয়ার কথা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের জন্মস্থানের বিভাগ অনুযায়ী ক্যাম্পাসে বিভিন্ন গ্রুপের অধীনে আবাসিক হলগুলোতে থাকেন। এ গ্রুপগুলো ক্যাম্পাসে বঙ্গ নামে পরিচিত। বঙ্গের নিয়ন্ত্রণ থাকে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতাদের হাতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক পরামর্শক ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, রাত ৮টার সংঘর্ষের পর আমরা ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দদের নিয়ে বসেছিলাম। আমরা বিচার করার আশ্বাস দিলেও একটি পক্ষ তা মানেনি। পরে ছাত্রলীগের সভাপতি উপস্থিত শিক্ষকদের চলে যেতে বললে আমরা চলে আসি।
‘সভাপতি মিঠু উত্তরঙ্গের শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করছিল। এসময় উত্তরবঙ্গের শিক্ষার্থীরা মিঠুকে অপমান করে। এরপর ছাত্রলীগের সভাপতি মিঠুও সাধারণ সম্পাদক মিজানের সঙ্গে যোগ দিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল করে। মিছিলটি নির্মাণাধীন টিএসসি’র সামনে আসলে দু’পক্ষের মধ্যে আবার মারামারি শুরু হয়। ’
সামান্য একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে এতো বড় ঘটনা ঘটার কথা নয়। মঙ্গলবারের সংঘর্ষে কতিপয় পুরাতন ছাত্র নেতৃত্ব দিয়েছে। এতে তাদের কোনো স্বার্থ জড়িত থাকতে পারে। এছাড়া বর্তমান ছাত্রলীগ কমিটির প্রায় অর্ধেক নেতাই চাকরি পাওয়ায় কমিটি ছোট হয়ে গেছে। সেটিও একটা সমস্যা বলে জানান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নির্মাণাধীন টিএসসির সামনে উত্তরবঙ্গের শিক্ষার্থীরা ময়মনসিংহ বঙ্গের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এসময় ময়মনসিংহ বঙ্গের প্রায় ১৮ জন আহত হন। পরে ময়মনসিংহ বঙ্গের শিক্ষার্থীরাও তাদের ওপর চড়াও হলে উত্তরবঙ্গ গ্রুপের শিক্ষার্থীরা কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে আশ্রয় নেয়। এরপর ময়মনসিংহ বঙ্গের শিক্ষার্থীরা ওই হলে ঢুকে উত্তর বঙ্গের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এসময় অন্তত ৫২ শিক্ষার্থী আহত হয়। আহতদের মধ্যে লাবিব নামে এক শিক্ষার্থীর গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।
সংঘর্ষ চলাকালীন উভয় পক্ষ শেরেবাংলা হল ও কবি কাজী নজরুল হলে ভাঙচুর চালিয়েছে। এসময় অনেক শিক্ষার্থী হেলমেট পড়ে ছিলেন বলে জানিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ।
উত্তর বঙ্গের নেতা রিয়ন সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ‘সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ছেলেরা আমাদের ওপর পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা চালিয়েছে। নিরীহ ছাত্ররা এতে আহত হয়েছে। ’
উত্তর বঙ্গের আরেক নেতা আশেক মো. আশিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘উত্তরের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকেই প্রবঞ্চনা করা হচ্ছে। এরই বহিঃপ্রকাশ করে তারা যখন তাদের নায্য অধিকার চায়, বর্তমানের সুবিধাভোগী, মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রসী হামলা করেছে। এতেই প্রমাণিত হয় তারা সব শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি না। আমরা এ কমিটি বিলুপ্ত পূর্বক নায্য বিচার দাবি করছি। ’
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাসেলকে মারার পর ও হলে চলে আসতে আসতেই দুই-আড়াইশ ছেলে জিআই পাইপ নিয়ে মাঠে চলে আসে। এটা উত্তরবঙ্গ নেতাদের পূর্ব পরিকল্পিত। আমি আমার গ্রুপের ছেলেদের প্রায় তিন ঘণ্টার মতো হলে আটকিয়ে রাখছি। যাতে কোনোভাবেই মারামারি না হয়। এরপর স্যাররা আমাদের সঙ্গে বসছিলেন। তখন পর্যন্ত যারা দোষী তাদের চিহ্নিত করে ঝামেলা মিটানো হয়। ’
তিনি আরও বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের রিয়ন সরকার, উত্তম, আসিফ, সৈকত, প্রান্তসহ বেশ কয়েকজন উত্তরঙ্গের শিক্ষার্থীদের ইন্ধন দিয়েছে। এরপর তারা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তারা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিল। এসময় আমার গ্রুপের ছেলেরাও মিছিল করে। মিছিলের মধ্যেই তারা আবার অতর্কিত হামলা করে। এসময় আমার অনুসারীরা তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। ’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. ফরহাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৯
জিপি