বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীদের কাছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে যাওয়ার প্রবণতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, সহায়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা, পেশাগত দক্ষতা অর্জনের প্রবণতা এবং আন্তর্জাতিক জীবন-যাপনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রবল ইচ্ছা এ সামগ্রিক বিষয়টিকে এখন ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে।
আকাঙ্ক্ষিত বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার জন্য কি ধরনের যোগ্যতা এবং প্রস্তুতি প্রয়োজন তা সম্পর্কে আগে থেকেই তথ্য সংগ্রহ করা এ পুরো পরিকল্পনাটিকে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে নেওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাগত অর্জনের পাশাপাশি ইংরেজির দক্ষতা প্রমাণের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া টিউশন ফি, বসবাসের খরচ, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কোনো সুযোগ আছে কিনা এ সার্বিক বিষয়গুলো ভালোভাবে জেনে নিয়েই পরিকল্পনা মাফিক অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন। তবে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে এবং ভিসা পাওয়ার ব্যাপারে ইংরেজিতে দক্ষতা প্রমাণের বিষয়টি অনেকেরই স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করছে পি টি ই একাডেমিক (PTE Academic)।
পিয়ার্সনের পি টি ই একাডেমিক (PTE Academic) এখন বিশ্বের অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং বিভিন্ন দেশের সরকার অনুমোদিত ইংরেজি দক্ষতা যাচাইয়ের কার্যকর পরীক্ষা হিসেবে একটি বিশ্বস্ত নাম। অনেক উন্নত দেশ অভিবাসন এর সুযোগ করে দেওয়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গে এ পরীক্ষার পাওয়া নম্বরকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
পি টি ই একাডেমিক (PTE Academic) পরীক্ষার বেশকিছু চমৎকার বৈশিষ্ট্য আছে যা একেবারেই স্বতন্ত্র। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলো হলো- এটি শতভাগ কম্পিউটারের মাধ্যমে পরিচালিত একটি পরীক্ষা এবং পরীক্ষার ৪৮ ঘণ্টা আগে অতিরিক্ত ফি ছাড়া পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন সহজে সম্পন্ন করা যায়। বছরের ৩৬০ দিনই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং নিরীক্ষণের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণভাবে কম্পিউটারের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। যার ফলে ফলাফল যাচাইয়ের প্রক্রিয়াটি ত্রুটিমুক্ত। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিখুঁত ব্যবহারের মাধ্যমে সব পরীক্ষার্থীর ফলাফল একটি অ্যালগরিদমের সাহায্যে নির্ণয় করা হয়। এর ফলে সম্পূর্ণ পক্ষপাত শূন্য ফলাফল দেওয়া সম্ভব হয়।
সর্বোচ্চ পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে পি টি ই একাডেমিকের (PTE Academic) ফলাফল প্রকাশ করা হয় এবং সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পরীক্ষার্থীরা ফলাফল অনলাইনের মাধ্যমে পাঠাতে পারে যেকোনো সংখ্যক প্রতিষ্ঠানে। ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতি ১০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে আটজনই দু’দিনে ফলাফল পেয়েছেন। ৫৩টি দেশে সর্বমোট ২৫৬টি পরীক্ষা কেন্দ্র আছে।
পরীক্ষার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বায়োমেট্রিক-স্ক্যানিং, ডিজিটাল স্বাক্ষর, রেন্ডমাইজড পরীক্ষার ফরমেট, ইলেকট্রনিক ফলাফল এবং সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ব্যবহার করা হয়। সম্পূর্ণ পরীক্ষাটি যেহেতু তিন ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন হয়, তাই পরীক্ষার্থীদের জন্য এটি খুবই স্বস্তিদায়ক। ইংরেজি ভাষার চারটি (শ্রবণ, পঠন, লিখন এবং কথন) দক্ষতাসহ প্রত্যেকটি ধাপ যেহেতু কম্পিউটারের মাধ্যমে সব পরীক্ষার্থীদের একই পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হয়, তাই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ এবং বিচ্যুতিমুক্ত। অর্থাৎ ফলাফলের ক্ষেত্রে মানবসৃষ্ট কোনো ত্রুটি বা প্রভাব পড়ার কোনো সুযোগ থাকে না।
চারটি মূল যোগাযোগ দক্ষতার বাইরেও ব্যাকরণ, উচ্চারণ, বানান, অনর্গল বলতে পারাসহ ছয়টি বিষয়ে স্কোর রিপোর্টে আলাদা করে স্কোর প্রদর্শন করে থাকে যার মাধ্যমে একজন পরীক্ষার্থী নিজের দুর্বলতাগুলো সহজে শনাক্ত করতে পারেন এবং সার্বিক দক্ষতা অর্জনের পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। অন্য কোনো ইংরেজি দক্ষতা যাচাইয়ের পরীক্ষার স্কোর রিপোর্টে এতো বিস্তারিত স্কোর দেওয়া হয় না।
বিশ্বের খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদনের ক্ষেত্রে পি টি ই একাডেমিক (PTE Academic) সমাদৃত। ক্রমান্বয়ে এ স্বীকৃতির তালিকা দীর্ঘতর হচ্ছে এবং ইংরেজিভাষী দেশগুলোর পাশাপাশি অ-ইংরেজিভাষী দেশগুলোও ইংরেজির দক্ষতা যাচাইয়ের মাধ্যম হিসেবে এটিকে পছন্দের তালিকায় রাখছে।
১৩০টিরও বেশি ভাষার সংযোজনের কারণে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনন্য প্রয়োগের ফলে ভিন্ন বাচন ভঙ্গির কারণে কোনো পরীক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয় না যদি সঠিকভাবে তিনি ভাষার সঠিক প্রয়োগ, যথাযথ উচ্চারণ এবং সাবলীল গতিতে কথা বলা নিশ্চিত করতে পারেন।
পি টি ই একাডেমিকের (PTE Academic) রিজিওনাল ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার এম জহির উদ্দিন জানিয়েছেন, প্রাত্যহিক জীবনের ব্যবহৃত ভাষা এবং সাম্প্রতিক বিশ্বের ঘটে যাওয়া ঘটনা বা আলোচিত বিষয়কে ঘিরে সাধারণত পিটিই পরীক্ষার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয়। ফলে পরীক্ষার্থীদের কাছে এর বিষয়বস্তু দুর্বোধ্য প্রতিময়মান হয় না বরং তারা সাম্প্রতিক বিষয়ের প্রতিফলন খুঁজে পান।
পরীক্ষার প্রস্তুতি সংক্রান্ত তথ্য এবং বিস্তারিত দিক নির্দেশনার জন্য পিটিই-এর ওয়েবসাইট (www.pearsonpte.com) অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এছাড়াও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আছে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে যারা পরীক্ষার প্রস্তুতির ব্যাপারে সহযোগিতা করে থাকে। শিক্ষার্থীরা চাইলে স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী কোর্সে এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি হতে পারেন। পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার ক্ষেত্রেও তারা সহযোগিতা করে থাকেন।
পি টি ই একাডেমিক (PTE Academic) পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ঢাকার ধানমন্ডি ও উত্তরায় দু’টি পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ছুটির দিনগুলো ছাড়া বছরের বাকি দিনগুলোতে প্রতিদিন দু’টি সেশনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যকরী পরামর্শ এবং নিয়মিত তথ্যের জন্য facebook.com/Pearson.bangladesh এ ভিজিট করা যেতে পারে। সেসঙ্গে বিস্তারিত তথ্যের জন্য [email protected] এ ই-মেইল করা যেতে পারে।
লেখক: সৈয়দ রবিউস সামস, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও প্রধান নির্বাহী, র'দিয়া আইএনসি, ই-মেইল- [email protected]।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৯
আরবি/