জানা যায়, কে কে গভ. ইনস্টিটিউশন স্কুলে ৪৯টি শিক্ষক পদের বিপরীতে বর্তমানে শিক্ষক রয়েছেন ৩৪ জন। ১৫টি পদই খালি রয়েছে।
কে কে গভ. ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মনসুর আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, দুই শিফট মিলিয়ে মোট এক হাজার ৭০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। স্কুলে ৪৯ জন শিক্ষকের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৩৪ জন। পদার্থ, রসায়ন বিষয়ের শিক্ষক প্রয়োজন চারজন কিন্তু রয়েছে দু’জন। বাংলা বিষয়ের জন্য দুই শিফটে ছয়জন শিক্ষক প্রয়োজন হলেও শিক্ষক রয়েছেন একজন। অফিস সহকারী চারটি পদে একজনও নেই। দুই বছর ধরে সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছি।
তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষকে শিক্ষক সংকটের ব্যাপারে জানানো হয়েছে। আড়াই বছর ধরে এ সমস্যা চলমান। আমি যখন এখানে এসেছি তখন ২৪-২৫ জন শিক্ষক ছিলেন। প্রতিদিন ছয়টি করে ক্লাস নিয়েছেন শিক্ষকরা। একটি শিফটে বাংলার কোনো শিক্ষক নেই বলে অন্য বিষয়ের শিক্ষক দিয়ে ক্লাস পরিচালনা করতে হচ্ছে। আর এক বছর পর হয়তো এ প্রতিকূলতা কেটে যাবে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, স্কুলের পড়ালেখার মান ভালো করার জন্য অনেক চেষ্টা করছি। কিন্তু এবার এসএসসি পরীক্ষায় ৬০ জন শিক্ষার্থীকে ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে ১২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণি (প্রভাতি) ‘ক’ শাখার শিক্ষক আতাউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমার শ্রেণিতে ৭২ জন ছাত্র রয়েছে। একজন শিক্ষক তিনটি করে ক্লাস নেওয়ার কথা থাকলেও ছয়টি করে ক্লাস নিচ্ছেন। শিক্ষক সংকটের কারণে ছাত্ররা প্রাইভেট ও কোচিংয়ের দিকে আগ্রহী হচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ছাত্ররা মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ফেসবুকের প্রতি বেশি আসক্ত। সময় নষ্ট করার জন্য অনেক মাধ্যম তাদের কাছে এসে গেছে। যার কারণে অভিভাবক ও শিক্ষক চেষ্টা করেও পড়ায় মনোযোগী করতে পারেন না। পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল হলেও তাদের মাঝে কোনো ভালো করার চেষ্টা দেখা যায় না।
ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, ক্লাস ঠিকমতো হয় না। কখনও কখনও ছয়টি ক্লাসের বিপরীতে চারটি ক্লাস হচ্ছে। শিক্ষকরা ক্লাসে এসে বাসায় প্রাইভেট পড়ানোর কথা বলেন। স্কুলে বসে পড়ায় মনযোগ দেওয়ার পরিবেশ বেশিরভাগ সময় থাকে না। শ্রেণিগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি থাকায় স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে এ ভি জে এম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শিউলি আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে এক হাজার ৮২১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। স্কুলে ৫৩টি পদের বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন ৩১ জন। এরমধ্যে ২৯ জন সহকারী শিক্ষক ও দু’জন সহকারী প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকের পদ খালি। বাংলা বিষয়ে আটজন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন দু’জন।
তিনি বলেন, মানবিক বিভাগে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেশি। প্রতিদিন ছয়টি করে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। অনেক সময় একটি বিষয়ের শিক্ষক অন্য বিষয়েও ক্লাস নিয়ে থাকেন।
ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির (দিবা) শ্রেণি শিক্ষক শামসুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, দুই বছর ধরে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে কোনো শিক্ষক ছিল না। তখন ছাত্রীরা কোচিং নির্ভর ছিলো। তবে বর্তমানে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে দুই শিফটে শিক্ষক রয়েছেন তিনজন।
তিনি বলেন, আমারা সিলেবাস শেষ করতে পারছি না। কারণ বিভিন্ন সময় স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থী আগ্রহী, তবে আগের থেকে কম। শিক্ষার্থীরা মনে করে বাসায় শিক্ষকের কাছ থেকে বিষয়বস্তু বুঝে নিবে। আমাদের ছাত্রীরা যেটি শিখে খুব ভালোভাবেই শিখে।
ছাত্রীরা জানায়, শিক্ষকরা ক্লাসে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আসেন না। কিছু শিক্ষক আছেন যারা বাসায় প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার জন্য ছাত্রীদের নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করেন।
জেলা শিক্ষা অফিসার ইউনুছ ফারুকী বাংলানিউজকে বলেন, সারাদেশেই হাই স্কুলগুলোতে শিক্ষক সংকট রয়েছে। তবে খুব শিগগির এ সমস্যা সমাধান হবে। শিক্ষকদের কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানোর ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ ও প্রমাণ মিললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১৯
জিপি