সমাবর্তন বলতে আমরা সাধারণভাবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি বলে বুঝি। আর যার জন্য প্রয়োজনও জমকালো আয়োজনের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ১ম সমাবর্তন এ বছরের (২০১৯) নভেম্বরে। যার জন্য তাদের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে গত বছর থেকেই। রেজিস্ট্রেশনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে ৮ মাস (মার্চ) আগে থেকে। এমনকি জবি’র ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বাজেটে (রাজস্ব) সমাবর্তনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে সাড়ে তিন কোটি টাকা।
জানা যায়, গত ২৪ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৪২ কোটি ১৭ লাখ টাকার বাজেট পাস হলেও সেখানে সমাবর্তনের জন্য কোনো টাকা ব্যয়ের খাতে উল্লেখ করা হয়নি। যেখানে টাকা ছাড়া সমাবর্তন অসম্ভব। নামেমাত্র একটি কমিটি গঠন ছাড়া উপাচার্যের প্রতিশ্রুতির প্রায় এক বছর অতিবাহিত হলেও সমাবর্তন নিয়ে এখনও কোনো প্রস্তুতি সভা, সমাবর্তন বক্তা নির্বাচন, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া, ভেন্যু নির্বাচনসহ দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রমই করতে দেখা যায়নি। এসব কারণে এ বছর কোনোভাবেই সমাবর্তন করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।
আশ্বাসের পরেও সমাবর্তন না হওয়ায় ক্ষোভ বিরাজ করছে শিক্ষার্থীদের মনে। এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাঁচ জন উপাচার্য অতিবাহিত হলেও কেউই সমাবর্তন করে যেতে পারেননি। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা বহুবার স্মারকলিপি, আন্দোলন এবং বার বার দাবি জানিয়ে এলেও তাতে কেউ কর্ণপাত করেননি।
তবে কী বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরীর বেলায়ও একই অবস্থা হবে?
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একাধিক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গত বছর উপাচার্যের আশ্বাসে আমরা খুব আশাবাদি হয়েছিলাম যে, এ বছর আমরা সমাবর্তন পাব। কিন্তু প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং উদাসিনতা দেখে অনায়াসেই বলা যায় কুবিয়ানদের জন্য সমাবর্তন এ বছরও নেই। সমাবর্তনের প্রস্তুতির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বড় বড় অভিজ্ঞ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ন্যূনতম ১ বছর আগে থেকে কার্যক্রম শুরু করে। সেখানে আমাদের সমাবর্তন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ।
এ নিয়ে সমাবর্তন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ড. একেএম রায়হান উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে সমাবর্তনের অনুমতির জন্য আচার্য বরাবর সাক্ষাতের সময় চেয়ে আবেদন করেছি এবং রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার কাজও শিগগির শুরু করবো। এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য সদস্য সচিবের কাছে জানতে পারবেন। ’ যোগাযোগ করা হলে সমাবর্তন আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ নূরুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘একাডেমিক কমিটির ৫২তম সভায় ১২ সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। আমরা ইতোমধ্যে উপ কমিটিগুলো করার বিষয়ে কাজ করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ সমাবর্তনের আওতাভুক্ত। আমরা এ কাজগুলোও দ্রুত সময়ের মধ্যে করার তাগিদ দিচ্ছি। ’
সমাবর্তন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. আবু তাহের আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে সমাবর্তন নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে এবং খুব দ্রুতই আচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবো। সমাবর্তনের বাজেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেভাবে রাখা হয় না। রেজিস্ট্রেশন ফি, স্পন্সর, ইউজিসির অনুদান এবং অন্যান্য মাধ্যম থেকে তা ব্যবস্থা করা হয়। ’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলার জন্য মোবাইল ফোনে এবং কার্যালয়ে গিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০১৯
আরএ