ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

রাবির ভর্তি পরীক্ষার নতুন নিয়মে দুশ্চিন্তায় ভর্তিচ্ছুরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৯
রাবির ভর্তি পরীক্ষার নতুন নিয়মে দুশ্চিন্তায় ভর্তিচ্ছুরা

রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রথমবারের মতো বহুনির্বাচনীর পাশাপাশি লিখিত পদ্ধতিতেও পরীক্ষা নেওয়া হবে। 

নতুন এ নিয়মে ইউনিট ভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে সীমাবদ্ধতা ও ভর্তি ফরমের উচ্চমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে ভর্তিচ্ছুদের মধ্যে দুশ্চিন্তা ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ৫টি ইউনিট থাকলেও এ বছর তিনটি ইউনিটে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ‘এ’ ইউনিটের অধীনে কলা, আইন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ‘বি’ ইউনিটের অধীনে ব্যবসায় শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও ইনস্টিটিউট এবং ‘সি’ ইউনিটের অধীনে বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন নিয়মে কোনো শিক্ষার্থী যে বিভাগ থেকে এইচএসসি পাশ করবে কেবল সে বিভাগেই পরীক্ষা দিতে পারবেন।

প্রতি ইউনিটে ৩২ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবেন। নতুন নিয়মে একজন ভর্তিচ্ছু কেবল একটি ইউনিটেই পরীক্ষা দিতে পারবেন। মোট ১শ’ নম্বরের পরীক্ষার মধ্যে ৬০ নম্বর এমসিকিউ এবং ৪০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হবে। কেবল ২০১৯ সালে এইচএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীরাই আবেদনের সুযোগ পাবেন।

দুই ধাপে এ আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। আবেদনের প্রথম ধাপে শিক্ষার্থীদের ৫৫ টাকা দিয়ে আবেদন করতে হবে। এসএসসি ও এইচএসসি’র ফলের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই শেষে প্রাথমিকভাবে ৩২ হাজার শিক্ষার্থীকে মনোনীত করা হবে।

আবেদনের দ্বিতীয় ধাপে মনোনীত শিক্ষার্থীরা ১৯৮০ টাকা দিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করবেন। দুই ধাপের আবেদনে শিক্ষার্থীদের মোট ২০৩৫ টাকা ব্যয় করতে হবে।

কয়েকজন ভর্তিচ্ছু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নতুন এ নিয়মের ফলে অনেকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। আবেদনের উচ্চমূল্যের কারণে দরিদ্র ও মেধাবী ভর্তিচ্ছুদের জন্য এ ব্যয় ভার বহন করা অসম্ভব। নতুন নিয়মে অনেক ভর্তিচ্ছুই আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিনিয়র অধ্যাপক মনে করছেন, প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত পরীক্ষার নামে বাণিজ্য ছাড়া আর কিছুই নয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র অধ্যাপক বলেন, ফরমের উচ্চমূল্য নির্ধারণ করে পরিকল্পিতভাবে গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় শিক্ষার্থীর চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজেদের লাভকেই বড় করে দেখেছে। তিনি বলেন, ‘ফরমের মূল্য অবশ্যই সহনীয় পর্যায়ে রাখা উচিত। ’

নগরীর বিনোদপুরের বাসিন্দা ও ভর্তিচ্ছু সাফায়াত জামিল বলেন, ‘একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য ভর্তিচ্ছুদের বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ হয়ে যায়। আর এই টাকা জোগাড়ের জন্য আমাদের হিমশিম খেতে হয়। অস্বচ্ছল ভর্তিচ্ছুদের কথা বিবেচনায় রেখে ভর্তি ফরমের মূল্য নির্ধারণ করা উচিত ছিল। ’

জান্নাতুল ফেরদৌস নামের আরেক ভর্তিচ্ছু বলেন, ‘ইউনিটের সীমাবদ্ধতা ভতিচ্ছুদের মানসিকভাবে দুর্বল করে দেবে। অনেকে বিজ্ঞান বা বাণিজ্য শাখা থেকে পাশ করার পর মানবিক শাখায় ভর্তির প্রস্তুতি নিয়েছেন। নতুন নিয়মে তারা আবেদন করতে পারলেও চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ’ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি উপ-কমিটির সভাপতি ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘নতুন নিয়মে ফরমের মূল্য বাড়ানো হয়নি, বরং আগের তুলনায় কমেছে। আগে একাধিক ইউনিটে পরীক্ষা দিতে যে খরচ হত, এখন একাধিক ইউনিটকে একীভূত করায় আগের তুলনায় অনেক কম খরচ হবে। ইউনিট কমিয়ে আনার ফলে ফরমের মূল্য বেশি মনে হচ্ছে। ’

তিনি আরও বলেন, নতুন নিয়মে শিক্ষার্থীরা যে শাখা থেকে পাশ করবে কেবল সে বিভাগেই পরীক্ষা দিতে পারবেন। তবে চান্স পাওয়ার পর বিভাগ পছন্দক্রম ফরম পূরণ করার সময় ইউনিট পরিবর্তনের সুযোগ থাকছে। বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ইউনিটের (সি ইউনিট) কোনো শিক্ষার্থী চাইলে ইউনিট পরিবর্তন করে কলা বা বাণিজ্য অনুষদভুক্ত ইউনিটে (এ/বি ইউনিট) ভর্তি হতে পারবেন। এসব ইউনিটে অন্য শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু সংখ্যক সিট নির্ধারিত থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।