পরীক্ষায় প্রশ্ন কমন আসার লোভ দেখিয়ে কোচিং সেন্টারগুলোর ‘মডেল টেস্ট’ বা ‘মূল্যায়ন টেস্ট’ প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানোরও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
সম্প্রতি ‘কোচিং পাড়া’ বলে খ্যাতি পাওয়া রাজধানীর ফার্মগেটে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের বিজ্ঞাপন সম্বলিত ব্যানার ও সাইনবোর্ড দেখতে পাওয়া যায়।
‘শেষ সময়ের প্রস্তুতি’ হিসেবে মডেল টেস্ট প্রোগ্রামে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করছে সেন্টারগুলো। একইসঙ্গে এসব টেস্ট প্রোগ্রাম থেকে ভর্তি পরীক্ষায় ‘কমন’ আসবে, এমন প্রলোভনও দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের।
রাজধানীর মনিপুরী পাড়ার বাসিন্দা এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নূরে আলম এলাকার এক ছোট ভাইকে ভর্তি করাতে যান ফার্মগেটের একটি কোচিং সেন্টারে। নিজ অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ফেসবুকে ইউসিসির বিজ্ঞাপন দেখে ফার্মগেটে তাদের শাখায় গিয়েছিলাম।
মডেল টেস্টের মান কেমন জানতে চাইলে সেখানকার এক কর্মকর্তা জানান, এসব প্রশ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মিলে করেন। তাই কমন আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আরও কয়েকটি কোচিংয়ে কথা বলেছি। সবাই নিজেদের মডেল টেস্টের প্রশ্নগুলো থেকে সর্বাধিক কমন আসবে বলে দাবি করে।
জানা যায়, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার বেশ আগে থেকেই শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু করে থাকে কোচিং সেন্টারগুলো। আর প্রতিবছরেই ভর্তি ফি আগের বছরগুলোর থেকে বেড়ে যায়। ইউসিসির ক, খ+ঘ ও গ ইউনিটের জন্য গত বছরও ভর্তি ফি ছিল যথাক্রমে ১৬, ১৫ ও ১৭ হাজার। এ বছর প্রতি ইউনিটে সেই ফি ৫৫০ টাকা করে বাড়ানো হয়।
এছাড়াও মডেল টেস্টে অংশগ্রহণের জন্য আগে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ২০০ থেকে ৪০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। আর যারা ইউসিসির শিক্ষার্থী নয়, তাদের কাছ থেকে রাখা হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকা। অংক একটু এদিক-সেদিক হলেও প্রায় একই অবস্থা আরেক কোচিং সেন্টার প্যারাগনের।
অভিযোগের বিষয়ে ইউসিসি কোচিং সেন্টারের পরিচালক কামাল পাটোয়ারি বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছর সবকিছুর মূল্য বাড়ে। এবার ঢাবিতে লিখিত পরীক্ষা হবে। যে কারণে আমাদের নোট-শিট প্রস্তুতিতে খরচ বেড়েছে। তাই আমাদের ফি বাড়িয়েছি। কামাল পাটোয়ারির দাবি- তার প্রতিষ্ঠান কোচিংয়ে ভর্তি হওয়া প্রতি শিক্ষার্থীর পেছনে দুই হাজার টাকা করে ভর্তুকি দিচ্ছে। যদিও এর কোনো বাস্তবতা নেই বলে মনে করেন কোচিং সংশ্লিষ্ট অনেকে।
কোচিং সেন্টারের পড়ানোর মান ও মডেল টেস্টের ধরন নিয়ে প্রশ্ন আছে খোদ শিক্ষার্থীদের মাঝে। তবুও প্রশ্ন কমন আসতে পারে শুধু এই আশায় কোচিংয়ে ভর্তি হচ্ছে অনেকেই। সবুজ আহমেদ নামে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থী বলেন, কোচিংয়ের একটা ক্লাসে অনেক শিক্ষার্থী। শুরুতে বলে প্রতি ব্যাচে অল্প শিক্ষার্থী থাকবে। তবে ক্লাস করতে এসে দেখি এক ক্লাসেই অনেকে। এতে পড়া বুঝতেও অনেক সমস্যা হয়।
কোচিং সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে আসা এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউসিসি কোচিং সেন্টারের পরিচালক কামাল পাটোয়ারি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ৩৪ বছর ধরে কোচিং পরিচালনা করছি। কোনো বিজ্ঞাপনের দরকার হয় না। মান ধরে রেখেছি। এ জন্য শিক্ষার্থীরা ভর্তি হচ্ছে। অন্য কোচিং সেন্টার এসব করে।
ব্যাচে অধিক শিক্ষার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের কোথাও লেখা নেই কতজনে আমরা ক্লাস নেবো। আমাদের একোমোডেশন অনুসারে ক্লাসের ব্যবস্থা করি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৯
এসএইচএস/এসকেবি/টিএ